অর্ণব আইচ: কলকাতায় বসে সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতের টিকিট কাটত বাংলাদেশের আল কায়দার জঙ্গিরা। মূলত মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকার একটি দোকান থেকে কাটা হয় একাধিক ট্রেনের টিকিট। এমনকী, নিউ মার্কেট এলাকা থেকে কলকাতার সিমকার্ডও সংগ্রহ করে জঙ্গিরা। পূর্ব কলকাতার বেনিয়াপুকুর এলাকায় তল্লাশি চালানোর পর এই চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে এনআইএ-র হাতে। এবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র নজরে কলকাতারই এক অ্যাপ বাইক চালক। ওই চালককে তলব করেছেন এনআইএ আধিকারিকরা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের মে মাসে গুজরাট পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখার হাতে গ্রেপ্তার হয় চার বাংলাদেশি। মহম্মদ সজীব মিয়া, মুন্না খালিদ আনসারি ওরফে মুন্না খান, আজহারুল ইসলাম ওরফে খালিফুদ্দিন আনসারি ওরফে আকাশ খান ও আব্দুল লতিফ ওরফে মোমিনুন আনসারি নামে এই চার বাংলাদেশি ভারতীয় আল কায়দা তথা আকিসের সদস্য বলে গুজরাট পুলিশ অভিযোগ তোলে। এই চারজনকে ক্রমে নিজেদের হেফাজতে নেয় এনআইএ। গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, এই চার আল কায়দা জঙ্গি কয়েক বছর আগে চোরাপথে উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত পার হয়ে কলকাতায় আসে। এখানে একটি ডেরায় থাকে তারা।
যদিও গোয়েন্দাদের দাবি, ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়ে তারা কলকাতার হোটেলে ওঠে। তাদের উপর ভার পড়েছিল দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে আল কায়দার উপর যারা সহানুভূতিশীল, তাদের সঙ্গে কথা বলে তহবিল সংগ্রহ করতে শুরু করে তারা। একই সঙ্গে চলে সোশাল মিডিয়ায় যোগাযোগ করার পর যুবকদের সঙ্গে দেখা করার পালা। তাদের সঙ্গে কথা বলে মগজধোলাই করতে থাকে জঙ্গি সদস্যরা। এই কাজের জন্য দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ভ্রমণ করতে থাকে এই চার জঙ্গি।
ওই চারজনের মোবাইল পরীক্ষা করে এনআইএ আধিকারিকরা কয়েকটি মোবাইল নম্বর পান। এর মধ্যে একটি মোবাইল নম্বরে বেশ কয়েকবার কথা বলা হয় বলে গোয়েন্দারা জানতে পারেন। ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরেই সোমবার এনআইএ বেনিয়াপুকুর থানা এলাকার ক্যান্টোফার লেনের একটি চারতলা বাড়ির দোতলায় হানা দেয়। ওই বাড়ির দোতালার একটি ফ্ল্যাটে চলে তল্লাশি। যদিও ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এনআইএ আধিকারিকদের জানান, যে যুবকের মোবাইল নম্বর, তিনি ওই ব্যক্তির আত্মীয় মাত্র। ওই আত্মীয়টি আগে তাঁদের সঙ্গে থাকতেন বলেই তাঁর আধার কার্ড বেনিয়াপুকুরের ঠিকানায়। ওই আধার কার্ডেই যুবক সিমকার্ড নেন। এখন যুবক পরিবার নিয়ে পিকনিক গার্ডেন এলাকায় থাকেন। নিউ মার্কেট এলাকায় ওই যুবকের একটি দোকান ছিল। ওই দোকানের আশপাশের হোটেলে থাকেন বাংলাদেশিরা। তাঁরা এসে ওই ট্রাভেল এজেন্টের দোকান থেকে ট্রেন ও বিমানের টিকিট কাটতেন।
যদিও লক ডাউনের পর তাঁদের ব্যবসা খারাপ হতে থাকে। তাঁরা দোকানটি বন্ধ করে দেন। ওই যুবক এখন অ্যাপ বাইক চালান। এনআইএ-র গোয়েন্দাদের কাছে খবর, কলকাতা থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়ার জন্য এই যুবকের কাছ থেকেই ট্রেনের টিকিট কাটত আল কায়দার ওই জঙ্গিরা। এ ছাড়াও ওই যুবকের পরামর্শে তারা সিমকার্ড সংগ্রহ করে। এনআইএ-র প্রশ্ন, সেই ক্ষেত্রে আল কায়েদার জঙ্গিদের কি জেনেশুনে সাহায্য করেছিলেন ওই যুবক? এই ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য পেতে তাঁকে জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।