অর্ণব আইচ: ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগেও সাসপেন্ড হয়েছিলেন সম্প্রতি কলকাতা ডাকাতিতে ধৃত পুলিশকর্মী। এমনকী মধ্য কলকাতার তালতলায় পুলিশ সেজে ডাকাতির ঘটনায় উঠে এসেছিল কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের কনস্টেবল দেবব্রত কর্মকারের নাম। বহুবার সতর্ক করা সত্ত্বেও কাজ হয়নি। তাই দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে ব্যবসায়ীর বাড়িতে সিবিআই (CBI) সেজে ডাকাতির ঘটনায় ফের সরাসরি যুক্ত হয়ে যান ওই পুলিশকর্মী। ধৃত কনস্টেবলকে জেরা করে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গত ডিসেম্বরে ভবানীপুরের রূপচাঁদ মুখার্জি লেনের একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে সিবিআই সেজে হানা দেয় ডাকাতরা। ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে ৩০ লক্ষ টাকা নগদ ও প্রচুর গয়না লুটপাট করে পালায় তারা। পরে জানা যায়, ৫০ লক্ষ টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার তদন্তে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃত রাকেশ মণ্ডল ও অন্যদের জেরা করে লালবাজারের (Lalbazar) গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, এই ডাকাতির মাস্টারমাইন্ড পুলিশকর্মী দেবব্রত কর্মকারই। ডাকাতদলের সদস্যদের কাছে ‘দেবুদা’ নামে পরিচিত ওই ব্যক্তিই মূল অভিযুক্ত রাকেশকে দিয়ে দল তৈরি করায়।
[আরও পডুন: ভরল না মাঠ, নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পূর্বস্থলীতে দেখা নেই নাড্ডার]
গ্রেপ্তারির পর দেবব্রতকে জেরা করে লালবাজারের গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, গত ২০১৬ সালেও দেবব্রত একইভাবে একটি ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত হন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা না হলেও সাসপেন্ড করে কলকাতা পুলিশ। এর প্রক্রিয়া শেষে তিনি ফের কাজে যোগ দেন। কিন্তু গত বছর জুন মাসে তালতলায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ডাকাতির ক্ষেত্রেও উঠে আসে ওই পুলিশকর্মীর নাম। গত জুনে তালতলায় এক ব্যবসায়ী ওই টাকা ভরতি ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন ডাকাতরা তাঁকে জোর করে একটি গাড়িতে তোলে। গাড়ি করে তাঁকে সল্টলেকে (Salt Lake) নিয়ে যাওয়া হয়। মারধর করে তাঁর কাছ থেকে টাকাভরতি ব্যাগটি লুঠ করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। ওই ডাকাতদের জেরা করে গোয়েন্দা পুলিশ তিনজন পুলিশকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। দেবাশিস দাস, রণবীর সিং-সহ তিনজনই ওই ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ। তখনই পুলিশের তদন্তে উঠে আসে দেবব্রত কর্মকারের নাম। যদিও সরাসরি প্রমাণ না পাওয়ার কারণে তাঁকে তখন গ্রেপ্তার করা হয়নি। যদিও পরে গ্রেপ্তারির পর দেবব্রত স্বীকার করেন যে, তালতলার ডাকাতির সময় তিনি ঘটনাস্থলের কাছেই একটি দোকানে বসে ছিলেন। তাঁর সামনেই ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে। তাঁরও ওই ডাকাতিতে যে মদত ছিল, তা স্বীকার করেছেন দেবব্রত। ওই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে আইন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন পুলিশকর্তারা।
[আরও পডুন: গ্রুপ ডি-তে বাতিলদের জায়গায় ওয়েটিং লিস্ট থেকে নিয়োগ, সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ SSC’র]
পুলিশের ধারণা, একাধিকবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়েও গ্রেপ্তার না হওয়ার কারণে সাহস বেড়ে যায় দেবব্রতর। তাই তিনিই ভবানীপুরের ডাকাতির ছক কষেন। ধর্মতলার একটি পানশালা, পরমা আইল্যান্ড-সহ একাধিক জায়গায় রাকেশদের সিবিআই সাজার প্রশিক্ষণ দেন। ধৃতদের কাছ থেকে দেবব্রতর নাম উঠে আসার পর তাঁর ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে গোয়েন্দারা লর্ড সিনহা রোডে স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের দপ্তরে যান। সেই খবর পেয়ে কলকাতা থেকে উধাও হয়ে যান দেবব্রত। পালিয়ে যান কাশ্মীরে। সম্প্রতি ফিরে আসার পর গ্রেপ্তার হন। দেবব্রতর দাবি, কমিশনের ভিত্তিতে ডাকাতদের তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওই কনস্টেবল ডাকাতদের কাছ থেকে কত টাকা কমিশন পেয়েছিলেন, সেই তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।