নব্যেন্দু হাজরা: ভেবেছিলেন নতুন জামাই বাবাজীবনের জন্য বাজার থেকে ইলিশ (hilsa fish) নিয়ে আসবেন। কিন্তু সে ভাবনা মনেই থেকে গেল জীবন বাঁড়ুজ্যের! মঙ্গলবার জামাইষষ্ঠীর (Jamai Shashthi) আগের সকাল থেকেই আকাশছোঁয়া দামের ছেঁকায় ইলিশে হাত ঠেকায় কার সাধ্যি? বাজারে মাছওয়ালার ঝুড়িতে উঁকি মারা ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে দেড় হাজার থেকে আঠারোশো টাকা প্রতি কেজি। তাও টাটকা নয়। কোল্ড স্টোরেজের বাসি মায়ানমারের ইলিশ। এসব দেখে গড়িয়াহাট বাজার থেকে ইলিশ ছেড়ে পমফ্রেট কিনেই বাড়ি ফিরলেন বাঁড়ুজ্যেবাবু।
শুধু গরচা রোডের জীবনবাবুই নন, আরও অনেক শ্বশুরেরই একই অবস্থা। ইলিশের আশা ছেড়ে কেউ কিনেছেন পমফ্রেট, কেউ ভেটকি বা চিংড়ি। শহরের মাছবিক্রেতারা জানাচ্ছেন, জামাইষষ্ঠীর আগে এই সময় বাজার ছেয়ে যায় ইলিশ মাছে। কিন্তু এ বছর যেন দেখাই নেই রুপোলি শস্যের। কারণ প্রথমে যশ বা ইয়াস (Yaas Cyclone) এবং তারপর নিম্নচাপের কারণে সমুদ্রের মাছ ধরতে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা। তাতেই ছেদ টাটকা ইলিশে। সেই সঙ্গে ১৪ জুন পর্যন্ত ইলিশ না ধরার বিধিনিষেধের গেরো তো রয়েছেই। জামাইষষ্ঠীর বাজারে অগত্যা হিমঘরই ভরসা। তাও অত্যধিক দামের কারণে অনেকেই ইলিশ কিনছেন না। সোমবার থেকে অবশ্য সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া শুরু হয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যেই তা বাজারে চলে আসবে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
[আরও পড়ুন: সংবিধান বিরোধী কাজের অভিযোগ, এবার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত বামেদের]
শুধু কি ইলিশ? পমফ্রেট ৭০০-৮০০, ভেটকি ৬০০-৭০০, কাতলা ৪০০, পাবদা ৫৫০-৬০০ দামে বিক্রি হচ্ছে। একেবারে আগুন বাজার। তাও জামাই বাবাজির পাত ভরাতে শ্বশুরমশাইরা পকেটের আঘাত সামলেও বাজার সেরেছেন এদিন। বিক্রেতাদের বক্তব্য, যেভাবে পেট্রোল ডিজেলের দাম বেড়েছে তাতে মাল আনার খরচ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। ফল বাজারেরও একই অবস্থা। যে হিমসাগর দু’দিন আগেও ৪০-৫০ টাকা কেজি প্রতি ছিল তাই বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। গাছপাকা ৮০ টাকা। লিচু ২৫০-৩০০ টাকা, কাঁঠাল ১০০ টাকা, ভাল আপেল ২৫০ টাকা। সব মিলিয়ে মধ্যবিত্ত শ্বশুরমশাইদের মাথায় হাত!
দাম চড়েছে সবজিরও। কেজি প্রতি গড়ে ১০ থেকে ২০ টাকা। বাজার ভেদে কোথাও কোথাও তা আরও বেশি। ফলে পকেট ভরে টাকা নিয়ে বাজার গেলেও ব্যাগ ভরছে না অনেকেরই। এরই মাঝে লকডাউনে বিপাকে পড়া একাকী বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িদের কথা ভেবে জামাই ভোজনে স্পেশ্যাল থালি বিক্রি করছে রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তর। সেলফ হেল্প গোষ্ঠীর সাহায্য নিয়ে তৈরি সে থালিতে ভাত-ডাল-শুক্তো-পটল-চিংড়ি, ইলিশ মাছ, খাসির মাংস, দই, মিষ্টির জমজমাট সমাহার। দাম থালিপিছু ৫০০ টাকা। সকালে ফোনে অর্ডার করলে রাতে ডিনার টেবিলে পৌঁছবে খানা। এই থালি মিলবে সপ্তাহভর।
বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজার এবার বেশ খারাপ। কারণ ট্রেন বাস বন্ধ থাকায় অনেক বাড়িতেই জামাইয়ের আগমনের সুযোগ এবার নেই। তাই বেচাকেনাও তেমন নেই। সবমিলিয়ে এবারের ষষ্ঠী গতবারের মতোই ফোনে সারতে হবে বেশিরভাগ জামাইকেই। কপাল খুলেছে একমাত্র কাছাকাছি শ্বশুরবাড়ি যাঁদের, সেই জামাই বাবাজিদেরই! জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে একাধিক মিষ্টির উপকরণ বানিয়েছে শহর শহরতলির নামকরা মিষ্টির দোকানগুলোও। কোনও সন্দেশে ডিজাইন করা হয়েছে জামাইকে বরণ করছেন শাশুড়ি। আবার কোনও সন্দেশে শুধুই লেখা জামাইষষ্ঠী। তবে চন্দননগরের সূর্য মোদক আবার বউমা ষষ্ঠী সন্দেশ বানিয়েছে এবার। জামাইষষ্ঠীর দিন বউমাকেও সম্মান জানাতেই এই পরিকল্পনা বলে জানিয়েছেন ওই দোকানের বিক্রেতারা।