অভিরূপ দাস: শেষ হয়েও হচ্ছে না শেষ। বিজয়া দশমী কেটে গিয়েছে চব্বিশ ঘণ্টা পার। খুলে গিয়েছে অফিস কাছারি। দুর্গা ফিরে গিয়েছেন কৈলাসে। মূর্তিটা তো আছে। শেষবারের মতো, শিল্পীর হাতের কাজ, সূক্ষ্ম নৈপুণ্য দেখতে টগবগ করে ফুটছে আমজনতা।
শনিবার কলকাতার রেড রোডে দুর্গাপুজো কার্নিভ্যাল। যেখানে অংশ নিচ্ছে কলকাতার একশো ছুঁই ছুঁই পুজো। চার ঘণ্টায় একশো পুজো দেখার সুযোগ ছাড়তে নারাজ কেউই। আইটি কর্মী থেকে মুদির দোকানের মালিক, পাড়ার জল ব্যবসায়ী পর্যন্ত প্রবেশ কার্ডের জন্য বায়না ধরেছেন পুজো কমিটির কর্তার কাছে। ফোন করলেই এক ঘ্যানঘ্যান, ‘‘দাদা একটা কার্ড দিন।’’
[আরও পড়ুন: হড়পা বিপর্যয়: ‘কৃত্রিম বাঁধ নয়, মাল নদীতে করা হয়েছিল চ্যানেল’, দাবি জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের]
কাতর অনুনয়ে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় পুজো কর্তাদের। ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু কলকাতার এক নামজাদা পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে। শুক্রবার বিকেলে ক্লাব প্রাঙ্গণে বসে ছিলেন। এক কাপ চা শান্তিতে খেতে পারছেন না। তাঁর কথায়, চুমুক দিতে যাচ্ছি, একজন করে এসে কার্ড চাইছেন। প্রত্যেককে বলছি, দাদা আর কার্ড নেই। আর ও জিনিস আমরা ছাপাই না।
প্রতিটা পুজো পিছু গড়ে একশো লোক যাবে রেড রোডের কার্নিভ্যালে। ঠাকুরের সঙ্গে যাঁরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন তাঁদের কার্ড লাগে না। ‘পার্টিসিপেন্ট’ ব্যাজ পরে থাকলেই হল। কিন্তু দর্শকাসনে বসে কার্নিভাল দেখতে কার্ড বাধ্যতামূলক। ক্লাব পিছু একশো কার্ড দিয়েছে তথ্য সংস্কৃতি বিভাগ। তা মূলত বিলি করা হয়েছে পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে। কিন্তু তাতেও কুলোচ্ছে না। সূত্রের খবর, ২০ হাজার পাস ছাপিয়েছিল তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর। হট কেকের মতো শেষ হয়ে গিয়েছে তা। শেষ বেলায় তাই আরও পাস ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কেন এত চাহিদা? পুজোকর্তারা মনে করছেন, টানা দু’বছর কার্নিভাল বন্ধ থাকায় আমজনতার মধ্যে এবার উৎসাহ দ্বিগুণ।
রেড রোডে এই কার্নিভ্যালে থাকবে চারটি মঞ্চ। একটি মঞ্চে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাজ্যের মন্ত্রিসভার সদস্যরা। রাজ্যপাল থাকবেন একটি মঞ্চে। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জন্য আলাদা মঞ্চ। অন্য একটি মঞ্চ রয়েছে বিদেশ থেকে আগত অতিথিদের জন্য। সাধারণ দর্শকদের বসার জায়গা আলাদা। শুধু সেরার সেরা পুজো নয়, তার সঙ্গে বাড়তি পাওনা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শেষ মুহূর্তে কয়েকটি পুজো অংশ নিতে পারছে না প্রতিমার উচ্চতার জন্য। টালা বারোয়ারি ক্লাবের এক কর্তা জানিয়েছেন, আমাদের প্রতিমার যা উচ্চতা ট্রলারে তুললে ব্রিজে মাথা আটকে যাবে। রেড রোড পর্যন্ত পৌঁছতে পারব না। আফসোস এবার যাওয়া হল না।