স্টাফ রিপোর্টার: রাজ্য সরকারের নামে কুৎসা ও অপপ্রচারের আরও এক গভীর চক্রান্ত ফাঁস হল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে। যদিও হাসপাতালের শীর্ষ কর্তারা বিষয়টিকে চক্রান্ত না বলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের ‘অন্তর্ঘাত’ বলে মন্তব্য করেছেন। অভয়ার ঘটনার আবেগকে হাতিয়ার করে কর্মবিরতি চলার সময় সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে হেয় করতে যে ‘রক্তমাখা গ্লাভস’-এর ভয়ঙ্কর অভিযোগ খাড়া করা হয়েছিল, তা প্রাথমিক তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। হাসপাতালের নার্সরাই পরে জানিয়ে দেন, বাম সমর্থক কয়েকজন রেসিডেন্ট ডাক্তার ওই গ্লাভসে লাল তরল লাগিয়ে সরকারি স্টোররুমের কাগজের বাক্সে ঢুকিয়ে দেন। চেষ্টা হয়েছিল, রাজ্য সরকার ব্যবহার করা গ্লাভস হাসপাতালে পাঠাচ্ছে, রোগীরা সংক্রমণে মারা যেতে পারে। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
বুধবার প্রমাণ হয়ে গেল, যে গ্লাভস নিয়ে মারাত্মক অভিযোগ করেছিল আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের ফ্রন্ট, সেই গ্লাভসটাই আর জি কর হাসপাতাল অর্ডারই দেয়নি। হাসপাতালের সুপার সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, "আর জি কর থেকে অর্ডার দেওয়া গ্লাভসের ব্যাচ নম্বর ২৪০৭০০৭, কিন্তু যে ‘রক্তমাখা গ্লাভস’ হাজির করে মারাত্মক অভিযোগ করা হয়েছিল, সেটির ব্যাচ নম্বর ২৪০৬০০৬। তাৎপর্যপূর্ণ হল, শুধু অর্ডার দেওয়া নয়, ওই ব্যাচের কোনও গ্লাভস আর জি কর কর্তৃপক্ষ গ্রহণও করেনি।" প্রশ্ন উঠেছে, যদি হাসপাতাল অর্ডার না দেয়, অথবা গ্রহণ না করে, তা হলে কে বা কারা এই গ্লাভস হাজির করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনল? তবে কি জুনিয়র ডাক্তারদেরই কেউ বাইরে থেকে কিনে এনে লাল রঙের কোনও তরল অথবা রাসায়নিক মাখিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে হাজির করেছিল?
এমন ভয়ঙ্কর ‘অন্তর্ঘাত’ করার ক্ষেত্রে কে বা কারা সাহায্য করেছিল, এবং কোথা থেকে, কীভাবে গ্লাভস এসে হাজির হল, তা নিয়ে যে তদন্ত শুরু হয়েছে, বিষয়টি এদিন স্বীকার করেছেন হাসপাতাল সুপার ডা. চট্টোপাধ্যায়। জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন এদিন ফের অভিযোগ করেছে, বাম-অতিবাম সমর্থক জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের সদস্যদের টার্গেটই হল, যে কোনও মূল্যে রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর বদনাম করা। ওই গ্লাভস হাসপাতাল অর্ডার যে দেয়নি, তা যেমন প্রমাণিত, তেমনই স্পষ্ট, বাইরে থেকে এই বাম সমর্থক জুনির ডাক্তাররা কিনে এনে হাসপাতালের বাক্সে ঢুকিয়ে শুধু সরকারকে বদনাম করা নয়, রোগীরও ক্ষতি করতে চাইছে। কারণ, এই গ্লাভসটি নিশ্চিত জীবানুমুক্ত ছিল না।
প্রথমে অভয়ার ময়নাতদন্ত নিয়ে যারা মিথ্যা অভিযোগ করছিল, দেখা গেল, সেই জুনিয়র ডাক্তার রিয়া বেরা এবং অন্য দু’জন পোস্ট মর্টেমের সময়ে হাজির ছিলেন এবং সন্তুষ্ট বলে স্বাক্ষরও করেছেন। স্বভাবতই প্রথম অভিযোগ তুলে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের সদস্যরা নিজেরাই ফেঁসে গিয়েছেন। দ্বিতীয়, অভিযোগ ছিল, অভয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাস্থলের পাশের ঘরের দেওয়াল ভাঙা ঘিরে। পরে দেখা গেল, এই ফ্রন্টের জুনিয়র ডাক্তাররাই সম্মতি দিয়ে ওই দেওয়াল ভাঙতে বলেছেন। আর এবার ‘রক্তমাখা গ্লাভস’ নামের নাটকীয় অভিযোগ খাড়া করে প্রথম দফাতেই ধাক্কা খেয়েছে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট। কারণ, প্রাথমিক বায়োকেমিক্যাল তদন্তে আর জি কর জানিয়ে দিয়েছে, ওই গ্লাভসের লাল রঙের তরলটি রক্ত নয়।
এদিন এক প্রশ্নের উত্তরে হাসপাতালের সুপার ডা. সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘গ্লাভসের তরলটি আসলে কী, তা জানতে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে গ্লাভস কোথা থেকে, কীভাবে হাসপাতালে এল, তা বিস্তারিত অনুসন্ধান করে দেখছে বিশেষ তদন্ত কমিটি। আর এই কমিটি জানতে পেরেছে, গ্লাভসটি যে ব্যাচের, তা আর জি কর অর্ডার দেয়নি, বা বাইরে থেকে নেয়নি।’’ আর প্রশ্ন এখানেই, আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত-কিঞ্জলরা তা হলে এই ‘রক্তমাখা গ্লাভস’ পেলেন কোথা থেকে? তবে কি জুনিয়র ডাক্তারদেরই কেউ বাইরে থেকে কিনে এনে গ্লাভসে লাল রঙের তরল লাগিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে হাজির করে পরিকল্পনামাফিক রাজ্য সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছিল? জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, যে বা যারা বাইরে থেকে গ্লাভস কিনে এনে হাসপাতালে ঢুকে সরকারের বদনাম এবং রোগীর ক্ষতি করতে চেয়েছিল, তাদের চিহ্নিত করে কড়া শাস্তি দেওয়া হোক।