shono
Advertisement
RG Kar Doctor Death Case

খুনের দায় চাপাতেই কি ডাকা হয় সঞ্জয়কে? তদন্তে নয়া মোড়

হাসপাতালের কয়েকজন কর্মীকে জেরা করছে সিবিআই।
Published By: Sayani SenPosted: 09:06 AM Sep 21, 2024Updated: 02:38 PM Sep 21, 2024

অর্ণব আইচ: আর জি কর হাসপাতালের ওই তরুণী চিকিৎসককে খুন করাই ছিল মূল লক্ষ‌্য। পরে সেই খুনের দায় চাপাতেই ঘটনাস্থলে টেনে আনা হয় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে এবং নজর ঘোরাতেই জুড়ে দেওয়া হয় ধর্ষণের সাব প্লট। তদন্তের পরতে পরতে পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন তথ‌্যপ্রমাণ ও সংশ্লিষ্টদের বয়ান যাচাই করে এমনই চাঞ্চল‌্যকর তথ‌্য পেয়েছেন সিবিআই আধিকারিকরা। তার ভিত্তিতেই আপাতত এগোচ্ছে তদন্তের পরবর্তী ধাপ। কিন্তু ওই তরুণী চিকিৎসককে খুনের ছক কষেছিল কারা? কেন? সেই রাতে খুনে সরাসরি জড়িতই বা কারা? সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা আপাতত এইসব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন।

Advertisement

তদন্ত নেমে সিবিআই আধিকারিকদের ধারণা, জখম ও অচেতন অবস্থায় ওই তরুণী চিকিৎসককে সেমিনার হলে রেখে আসার পর খবর দেওয়া হয় মদ‌্যপ সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে। চিকিৎসকের উপর যৌন নির্যাতন চালানোর জন‌্য তাকে রীতিমতো টোপ দেওয়া হয়। সেই টোপ বেমালুম গিলে এবং প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে কারও নির্দেশেই নির্যাতিতাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে সঞ্জয়। আপাতভাবে নিখুঁত এই চিত্রনাট‌্য অনুযায়ীই ঘটনা ঘটেছিল কি না তা যাচাই করতে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মীকে জেরা করছে সিবিআই। এদিকে শুক্রবার ধৃত সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে ফোর আদালতে তোলা হয়। সন্দীপের নারকো অ‌্যানালিসিস টেস্ট ও অভিজিতের পলিগ্রাফ টেস্ট করানোর অনুমতি চেয়ে এদিন বিচারকের কাছে আবেদন করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। এদিন ওই বিষয়ে আদালতে কোনও নির্দেশ না দিলেও ওই দুজনের খুন ও ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার নিয়ে সিবিআইয়ের আইনজীবী বিচারকের প্রশ্নের মুখে পড়েন।

সিবিআইয়ের দাবি, হাসপাতালের দুই কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু তথ‌্য হাতে এসেছে সিবিআইয়ের। সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ওই দুই হাসপাতাল কর্মী সিবিআইকে জানান যে, ঘটনার রাতে তাঁদের নাইট ডিউটি ছিল। সেই সুবাদেই তাঁদের চোখে পড়েছিল সন্দেহজনক কিছু দৃশ‌্য। তাঁরা এক তরুণীকে উপরের তলা থেকে চারতলায় নামিয়ে আনতে দেখেছিলেন। তখন তাঁরা মনে করেছিলেন যে, হয়তো কোনও মহিলা চিকিৎসক অসুস্থ হয়ে পড়ায় চিকিৎসার জন‌্য তাঁকে নিয়ে আসা হয় চারতলায়। নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকই সেই মহিলা ছিলেন কি না, সেই সম্পর্কে ওই দুই কর্মী অবশ‌্য স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি। তবু সিবিআইয়ের মতে, ওই মহিলাই নির্যাতিতা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে এই তথ‌্য এখনও যাচাই করছে সিবিআই।

একই সঙ্গে নির্যাতিতার সঙ্গে গত কয়েক মাসের মধ্যে  কাদের গোলমাল হয়, সেই তথ‌্যও সিবিআই আধিকারিকরাা জানার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে খুনের মোটিভ সম্পর্কওে নিশ্চিত হতে চায় সিবিআই। নির্যাতিতা হাসপাতালের কোনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ও সেই কারণেই তিনি দুর্নীতি চক্রের সঙ্গে যুক্ত ব‌্যক্তিদের টার্গেট হন কি না, সেই তথ‌্য জানতে আর জি কর হাসপাতালে গিয়েও নানাভাবে ছানবিন চালাচ্ছে সিবিআই। সেই সূত্র ধরেই হাসপাতালের ৬ তলার একটি ঘর ও চারতলায় সেমিনার হল লাগোয়া একটি লিফট সিবিআই আধিকারিকদের নজরে। ওই লিফট সন্ধ‌্যার পর সাধারণভাবে বন্ধ হয়ে গেলেও গত ৮ আগস্ট রাতে খোলা ছিল বলে হাসপাতালের কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মীর কাছ থেকে জানতে পেরেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। তার ভিত্তিতে চলছে তদন্ত।

এদিকে, দু’দফায় মোট ৬ দিনের সিবিআই হেফাজতের পর শুক্রবার ধর্ষণ ও খুনের তথ‌্য লোপাট, সরকারি কর্তব্যে গাফিলতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযুক্ত আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ‌্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে শিয়ালদহের এসিজেএম আদালতে তোলা হয়। এদিন সন্দীপ ঘোষের নারকো অ‌্যানালিসিস পরীক্ষার আবেদন জানায় সিবিআই। একইসঙ্গে শুক্রবার সিবিআইয়ের পক্ষে শিয়ালদহ আদালতে অভিজিৎ মণ্ডলেরও পলিগ্রাফ পরীক্ষার আবেদন জানানো হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর তাঁদের মত নেওয়ার জন‌্য আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

যদিও সূত্রের খবর, দুজনই ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন যে, তাঁরা এই পরীক্ষায় রাজি নন। এদিন আদালতে আবেদন জানিয়ে সিবিআই জানায়, টালা থানা ও আর জি কর হাসপাতালের ভিডিও ফুটেজ থেকে বেশ কিছু তথ‌্য সামনে এসেছে। আর জি করের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে বেশ কয়েকজন সন্দেহজনক ব‌্যক্তির চলাফেরা সিবিআইয়ের নজরে এসেছে। সন্দীপ ও অভিজিতের মধ্যে মোবাইলের যোগাযোগের তথ‌্য সিবিআইয়ের হাতে এসেছে। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। দু’পক্ষের বক্তব‌্য শুনে বিচারক মন্তব‌্য করেন যে, এই আদালতের পক্ষে এই মামলায় জামিন দেওয়া সম্ভব নয়। অভিযুক্তরা দায়রা আদালতে জামিনের আবেদন জানাতে পারেন। সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

এদিন খুন ও ধর্ষণের মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রাইকেও এদিন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালতে তোলা হয়। তার জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী। কিন্তু তাকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। এদিন বিচারক সিবিআইকে প্রশ্ন করেন, সন্দীপ ও অভিজিৎ কি ধর্ষণ ও খুন, নাকি তথ‌্য ও প্রমাণ লোপাট ষড়যন্ত্রকারী? এই ব‌্যাপারে সিবিআই কী তথ‌্য হাতে পেয়েছে? সিবিআই কি এমন কোনও তথ‌্য পেয়েছে যে, সন্দীপ ও অভিজিৎ আগে জানতেন যে, আগে থেকেই ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা হতে চলেছে? সিবিআইয়ের জবাব, এখনও তাঁদের কাছে সেরকম কোনও তথ‌্য নেই। বিচারক তখন বলেন, ওসি কর্তব‌্য পালনে ব‌্যর্থ বলেই তাঁকে ষড়যন্ত্রকারী বলে মনে করা সিবিআইয়ের ব‌্যাখ‌্যা যুক্তিগ্রাহ‌্য নয়। ধর্ষণ-খুন ও প্রমাণ লোপাট বা ষড়যন্ত্র আলাদা বিষয়। সিবিআইয়ের দাবি, দুই অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়ে জেরার প্রয়োজন। বিচারক মন্তব‌্য করেন, জেল মানুষের কাছে আসে না। মানুষকে জেলে যেতে হয়। কেউ একদিন জেলে থাকলেও সারাজীবন তার আতঙ্ক থেকে যায় বলে মন্তব‌্য করেন বিচারক।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • আর জি কর কাণ্ডে গ্রেপ্তার সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়।
  • খুনের দায় চাপাতেই কি ডাকা হয় সঞ্জয়কে? তদন্তে নয়া মোড়।
  • হাসপাতালের কয়েকজন কর্মীকে জেরা করছে সিবিআই।
Advertisement