স্টাফ রিপোর্টার: হিন্দুত্ব বা ‘হিন্দিত্ব’কে আপাতত পিছনে সারিতে পাঠিয়ে বাংলার ‘স্বাভিমান’কে জাগিয়ে তোলাকে পাখির চোখ করে আগামী বিধানসভা ভোটের আগের বছর জোরকদমে নামছে আরএসএস। সদ্য ১০ দিনের দীর্ঘ বঙ্গ সফর সেরে গিয়েছেন সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত। নজিরবিহীন সেই সফরে বিভিন্ন বৈঠক ও স্বয়ংসেবকদের সঙ্গে আলোচনার আসরে পঞ্চযোজনা বা পাঁচটি বিষয়ে জোর দেওয়ার কথা বলে গিয়েছেন তিনি। এগুলি হল,‘স্ব’, ‘সামাজিক সমরসতা’, ‘কুটুম্ব প্রবোধন’, ‘পর্যাবরণ’ বা পরিবেশ সচেতনতা এবং নাগরিক কর্তব্য। সংঘের ভাষায়, এর মধ্যে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ‘স্ব’ নাগরিক কর্তব্য এবং ‘সামাজিক সমরসতা’-র উপর। ‘এই পাঁচ বিষয় নিয়েই তাঁরা ঘরে ঘরে প্রচার চালাবেন ও বাংলার সব হিন্দুর কাছে যাবেন এবং এটাই তাঁদের শতবর্ষের যোজনা বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের পূর্ব ক্ষেত্রীয় সহ প্রচার প্রমুখ ড. জিষ্ণু বসু।

কেশব ভবন সূত্রে খবর, ‘স্ব’ অর্থাৎ স্ব-আধার বা স্বতন্ত্রতা-র প্রশ্নে স্বাধীনতা আন্দোলনের ‘স্বদেশি ভাবনা’-কেই আঁকড়ে ধরা হয়েছে। এখানে ‘স্ব’ অর্থে আত্মনির্ভর ভারত গড়ার জন্য স্বদেশ, স্বভাষা, স্ব-ভূষা এবং স্বনির্ভর বিষয়গুলির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচিতে একদিকে যেমন নিজের ভাষা, নিজের বেশভূষা ও সাংস্কৃতিক পরম্পরার প্রসারে ঘর ঘরে প্রচার চলবে, তেমনই চলবে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির জোগান দিয়ে গ্রামে গ্রামে মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রি গড়ে কর্মসংস্থানের প্রসার ঘটানো। এজন্য দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা হচ্ছে। একইভাবে সামাজিক সমরসতা কর্মসূচিতে জাতপাতহীন সমাজ গড়ার প্রচার চলবে। কেশব ভবন সূত্রে খবর, মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত রাঢ়বঙ্গে এই কর্মসূচিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ সচেতনতা ও ‘কুটুম্ব প্রবোধন’ বা আত্মীয়তা কর্মসূচিতে গুরুত্ব গোটা গ্রাম বাংলারই।
তবে ধন্দ বেঁধেছে ‘নাগরিক কর্তব্য’ কর্মসূচি নিয়ে। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এই কর্মসূচির আসল উদ্দেশ্য বাংলায় হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভোটদানের হার বাড়ানো, যা কার্যক্ষেত্রে বিজেপির ভোটবাক্সে জমা পড়বে। এই মহলের ব্যাখ্যা, গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ও সহযোগীরা পেয়েছিল ৪৮.৪৬ শতাংশ ভোট। সেখানে গেরুয়া শিবিরের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৭.৯৮ শতাংশ। তিন বছর পর লোকসভা ভোটে বিজেপির আসনসংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমলেও প্রাপ্ত ভোটে্র হার ০.৭৫ শতাংশ বেড়ে হয় ৩৮.৭৩ শতাংশে। দু'পক্ষের ভোটের ব্যবধানও ৫৮.৫২৫ লক্ষ থেকে কমে হয় ৪২.৩৭ লক্ষে।
২৬-এর বিধানসভা ভোটে হিন্দুদের ১০০ শতাংশ ভোটদান নিশ্চিত করা গেলে অসম বা ওড়িশার মতো বাংলাতেও গেরুয়াকরণ সম্পন্ন করা সম্ভব। যদিও সরকারি ভাবে এই নাগরিক কর্তব্য কর্মসূচির সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক উড়িয়ে দিয়েছেন জিষ্ণুবাবু। তিনি বলেন, ‘‘নাগরিক কর্তব্য পালনের কথা বলতে গেলে দিল্লির এইমস হাসপাতাল ও কলকাতার পিজি হাসপাতালের তুলনা টানতে হয়। দিল্লি এইমসে সারা ভারতের একটা বড় অংশ থেকে গরিব মানুষ যায়। কিন্তু সেখানে কাউকে কোথাও থুতু ফেলতে দেখবেন না। কিন্তু কলকাতার এসএসকেএম বা মেডিক্যাল কলেজের অবস্থা দেখুন! এটাই নাগরিক কর্তব্য শেখানোর জায়গা।’’