shono
Advertisement

নিউ ইয়র্কে লাদেনের হামলা, তিন বছর আগেই জানিয়ে দিয়েছিল ‘সংবাদ প্রতিদিন’

আরেকবার মনে করার এবং মনে করানোর সময়।
Posted: 09:15 AM Sep 11, 2023Updated: 09:15 AM Sep 11, 2023

কুণাল ঘোষ: আরেকবার মনে করার এবং মনে করানোর সময়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। আন্তর্জাতিক জঙ্গি ওসামা বিন লাদেনের ‘আল কায়দা’র (Al Qaeda) বিমান হানায় মার্কিন মুলুকের নিউ ইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার (WTC) ধ্বংস। নিহত ২,৯৯৭, আহত ৬ হাজারের বেশি। ক্ষতি ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। সারা পৃথিবী অবাক হয়ে বলেছিল, খোদ আমেরিকার (USA) বুকে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হানা! ভাবাই যায় না।

Advertisement

কাট টু ২৩ অক্টোবর, ১৯৯৮। ‘সংবাদ প্রতিদিন’ প্রথম পাতা। খবরের শিরোনাম ‘লাদেনের জঙ্গি এজেন্টরা সদলে কলকাতায়’। ওই খবরের মধ্যেই লেখা ছিল লাদেনের টার্গেট নিউ ইয়র্কে (New York) ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বোমা মারা। ফলে, যাঁরা ২০০১ সালে বলেছিলেন ‘ভাবা যায় না’, তারা ভুল বলেছিলেন। এটি একটি আন্তর্জাতিক এক্সক্লুসিভ (Exclusive)। ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর মতো বাংলা কাগজে প্রকাশিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক দুনিয়া পাত্তা দেয়নি। বাস্তব হল, এর থেকে বড় এক্সক্লুসিভ আজ পর্যন্ত কোনও বাংলা কাগজে এমনকী, পৃথিবীর কোনও কাগজে প্রকাশিত হয়নি।

[আরও পড়ুন: INDIA’র প্রথম কো-অর্ডিনেশন বৈঠকের দিনই তলব! ইডি-র নোটিস অভিষেককে]

খবরটি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তরের একটি সূত্র। সেসময় তাঁদের কাছে খবর আসছিল কাশ্মীরে জঙ্গি জমায়েত চলছে। লাদেনের এজেন্টরাও যাতায়াত করছে। কাশ্মীর সীমান্তে প্রবল কড়াকড়ি থাকায় এই জঙ্গিরা পাকিস্তান (Pakistan) থেকে বাংলাদেশে আসছে। তারপর সীমান্ত পার হয়ে পশ্চিমবঙ্গে গা-ঢাকা দিয়ে থাকছে। এরপর মূলত জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস ধরে বা অন‌্য পথে কাশ্মীর যাচ্ছে। এরকম একটি দলকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ধরেও ফেলেন। কিন্তু, রাজ‌্য পুলিশকে জানালেও তখনকার পুলিশ কোনও ব‌্যবস্থা নেয়নি। এরকম একটি দলের কাছে আরবি ভাষায় লেখা কিছু নথিপত্র পাওয়া যায়। সেখান থেকেই জানা গিয়েছিল, লাদেনের পরবর্তী কিছু টার্গেট। যেমন ইয়েমেনে (Yemen) মার্কিন সেনার উপর আক্রমণ, সোমালিয়ায় মার্কিন সেনার উপর বড়সড় হানা, নিউ ইয়র্কে ওয়ার্ল্ড সেন্টারে বোমা, রিয়াধে বোমা, সৌদি আরবে বোমা, নাইরোবিতে মার্কিন দূতাবাসে বিস্ফোরণ।

এর মধ্যেই ছিল কাশ্মীরে সারা পৃথিবীর জঙ্গিদের জমায়েতের ডাক। মনে রাখুন, এরপরে কিন্তু কারগিল হয়েছিল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা খবর পান, কাশ্মীরে ঘাঁটি গাড়তে চারপাশ থেকে জঙ্গিরা জমায়েত শুরু করছে। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এরা কলকাতায় আসছে। যদিও কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গকে এরা শুধু ‘সেফ প‌্যাসেজ’ হিসাবে ব‌্যবহার করত, এখানে হামলার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। সেই কারণেই সম্ভবত এখানকার পুলিশ অকারণে তাদের ঘাঁটাঘাঁটি করতে যেত না। আজ বলতে বাধা নেই, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তরের সেই অফিসার রাজ‌্য সরকারকে বারবার সতর্কবার্তা দিয়ে শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে খবরের কাগজে প্রকাশের জন‌্য আমাদের হাতে এইসব নথি তুলে দিয়েছিলেন। আমি এবং তখনকার সহকর্মী সাক্ষর সেনগুপ্ত তাঁর বাড়িতে বসে সব সংগ্রহ করি।

[আরও পড়ুন: আগামী ১০ বছরে AI প্রযুক্তি চাকরি কাড়বে ৯০% কর্মীর! আশঙ্কা এই সংস্থার CEO’র]

এরপর এই সংবাদ প্রকাশিত হয়। তখন আমাদের সবাই ‘পাগল’ বলেছিল। কে লাদেন, সে নাকি আমেরিকা নিউ ইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বোমা মারবে? এটা কোনও কথা হল? ভাগ্যিস সোশ‌্যাল মিডিয়া ছিল না। তাহলে কত বিশেষজ্ঞ যে কতরকম বিশেষণে আমাদের ভরিয়ে দিতেন, ঈশ্বর জানেন। কিন্তু, ২০০১ সালে যখন লাদেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সত্যিই আঘাত করল, তখন বোঝা গেল সেই খবর এবং সবচেয়ে বড় কথা, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সেই তথ‌্য কতবড় সত্যি ছিল। বাংলা সাংবাদিকতায় এত বছর আছি, তার আগের গল্পকথাও শুনেছি। অনেক ভাল ভাল এক্সক্লুসিভ অনেক বড় সাংবাদিক করেছেন। কিন্তু, সকলকে সম্মান দিয়েও বলব, এর থেকে বড় এক্সক্লুসিভ বাংলা সাংবাদিকতায় কখনও হয়নি। যতদিন ১১ সেপ্টেম্বর তারিখটা আসবে, ততদিন মনে পড়বে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর সেই খবরটি-সহ প্রথম পাতার ডিসপ্লের কথা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement