রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: মুরলীধর সেন লেনের পুরনো পার্টি অফিস বদলানোর পর থেকেই নির্বাচনে দলের বিপর্যয় হচ্ছে। তা হলে কি ‘পয়া’ ছিল পুরনো রাজ্য দপ্তর? সেই ‘পয়া’ ঘর বদলানোর জন্যই কি বার বার বিপর্যয়? এমন প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই। আর তাই পুরনো রাজ্য দপ্তরে ফের একাধিক কাজকর্ম নতুন করে শুরু হচ্ছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদাররাও মাঝেমধ্যে সল্টলেকের নতুন পার্টি অফিসের বদলে পুরনো মুরলীধর সেন লেনের কার্যালয়ে প্রেস মিটও করছেন।
বঙ্গ বিজেপির তৎকালীন রাজ্য দপ্তর ৬, মুরলীধর সেন লেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অথবা পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক হিসেবে এই পার্টি অফিসেই সময় কাটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। থেকেছেন রাজনাথ সিংয়ের মতো বিজেপির অনেক সর্বভারতীয় শীর্ষ নেতৃত্ব। এই ঘর থেকেই গেরুয়া সংগঠন চালিয়েছেন বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রী, তপন শিকদার, তথাগত রায়, রাহুল সিনহা বঙ্গ বিজেপির সংগঠন পরিচালনা করেছেন মুরলীধর সেন লেনের ৬ নম্বর বাড়ি থেকেই। দিলীপ ঘোষ রাজ্য সভাপতি থাকাকালীনও ওই বাড়িই ছিল রাজ্য বিজেপির মূল ঘাঁটি।
ওই বাড়িকে ভরকেন্দ্র করে উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বঙ্গ বিজেপি নজরকাড়া ফলাফল করেছিল। বাংলায় ১৮টি আসন পেয়েছিল তারা। তার পরেই একুশের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে লড়াই শুরু করে বিজেপি। কাজের পরিসর বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে তারা হেস্টিংসের আগরওয়াল হাউজে একাধিক তলা ভাড়া নেয়। সেই বাড়িই পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠে তাদের ওয়ার রুম। শীর্ষনেতারা ওই বাড়িতেই বসতে শুরু করেন। কিন্তু দেখা যায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়ে। তার পরে হেস্টিংসের ওই বাড়ি ছেড়ে দেয় বঙ্গ বিজেপি।
এর পর সংস্কারের কারণ দেখিয়ে রাজ্য দপ্তর মুরলীধর সেন লেন ছেড়ে বিজেপি ফের চলে যায় সল্টলেক সেক্টর ফাইভে। সেখানে নতুন করে সাংগঠনিক কাজকর্ম শুরু করে বঙ্গ বিজেপি। কার্যত সেই বাড়ি হয়ে ওঠে বিজেপির নয়া কার্যালয়। সেই পার্টি অফিসে একেবারে কর্পোরেট ছোঁয়া। সল্টলেকের পার্টি অফিস থেকেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করে বাংলায় ফের ব্যাপকভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে। উনিশের প্রাপ্ত আসন ১৮ থেকে নেমে ১১-তে চলে আসে। নির্বাচনে ভাল বা খারাপ ফল হয়ে থাকে। কিন্তু তার বাইরেও কিছু সংস্কার বঙ্গ বিজেপির বড় অংশের মনে ঘোরাফেরা করছে। পুরনো বাড়ি ছাড়ার জন্যই কি ভোটে সাফল্য আসছে না? বিষয়টি কাকতালীয় হলেও এই প্রশ্নটাই এখন ঘোরাফেরা করছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। আগামিদিনে বঙ্গ বিজেপি কি ফিরে যাবে তাদের পুরনো রাজ্য দপ্তর ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনে? আর সেটা কি ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগেই? সময়ই সবটা বলবে।