shono
Advertisement

Breaking News

ভবানীপুরের ৬ ওয়ার্ডে বিজেপি-তৃণমূলের কড়া টক্কর, কিস্তিমাত করতে ঘুঁটি সাজাচ্ছে ঘাসফুল শিবির

অঙ্ক বদলে দিতে পারেন হিন্দিভাষী ভোটররা!
Posted: 02:07 PM Mar 27, 2021Updated: 03:31 PM Mar 27, 2021

কৃষ্ণকুমার দাস: গত লোকসভা ভোটে ভবানীপুরে আটটি ওয়ার্ডের মধ্যে ছ’টিতেই পিছিয়ে ছিল তৃণমূল (TMC)। সবেধন নীলমণি মেয়রের ৮২ ও পাশের ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে জিতে কোনওক্রমে মুখ রক্ষা করেছিল ভবানীপুরের তৃণমূল। স্বভাবতই এবার ওই ছয় ওয়ার্ডের ভোট নিজের দিকে টানতে গেমপ্ল্যান সাজাচ্ছে ঘাসফুল শিবির। গোটা দেশের নজর এখন নন্দীগ্রামে থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেড়ে যাওয়া ভবানীপুরে ভোটগ্রহণ ২৬ এপ্রিল। এবার লড়াই পোড় খাওয়া রাজনীতিক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের তারকা প্রার্থী অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের।

Advertisement

লোকসভার ফলের পর আশায় বুক বাঁধা গেরুয়া শিবিরের কাছে এ বছর চিন্তার মূল কারণ, হেভিওয়েট প্রার্থী শোভনদেবের পাশাপাশি মমতার ‘দুয়ারে সরকার’ ও আমফান-করোনায় পরিষেবা। কারণ, টানা চারমাস ধরে মাসে দু’বার ‘৩০ কেজির রেশন’ বসতির ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন কাউন্সিলররা। প্রচারে নেমে স্বভাবতই গেরুয়া শিবিরকে শুনতে হচ্ছে, আমফানের পর কোথায় ছিলেন? কিন্তু ভিন রাজ্যের ভোটাররা যদি নির্বাচনের দিন বহুতল থেকে নেমে বুথে গিয়ে নিজের মেজাজে ভোট দেন তবে অনেক অঙ্কই বদলে যেতে পারে। বহু নির্বাচনী যুদ্ধের সেনাপতি শোভনদেবের প্রবল আত্মবিশ্বাস, “নিশ্চিত থাকতে পারেন, অনেক বেশি ভোটে জিতবে মমতার ভবানীপুর।”

[আরও পড়ুন : প্রথম দফা ভোটের দিনই নিয়মে বডসড় বদলের দাবিতে কমিশনের দ্বারস্থ তৃণমূল]

লোকসভা ভোটে জেতা ছয় ওয়ার্ডের মধ্যে অবাঙালি প্রধান ৬৩, ৭০ এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে দু’বছর আগের ভোটে নিজেদের লিড ধরে রেখে গেরুয়া প্রভাব বাড়াতে ৭১, ৭২ ও ৭৩ নম্বরকে টার্গেট করেছে বিজেপি। চেষ্টা করছে বহুতলের ভোটাররা সবাই যে সংসদীয় ভোটের মতো নিচে নেমে এসে দলে দলে ভোট দেন। উলটোদিকে তৃণমূলের ভোট সেনাপতিরা বাঙালি ভোটের ১০০ শতাংশকে বুথে নিয়ে যেতে চাইছেন। একই সঙ্গে এবার ভোটে বিহার, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান ও ঝাড়খণ্ড থেকে কলকাতায় এসে ডেরা বাঁধা বাসিন্দাদের মোদি-বিরোধী ক্ষোভকে ইভিএমে পৌঁছে দিতে তৎপর টিম-মমতা। বস্তুত এই কারণে লোকসভায় হারা বুথে ভোটার লিস্ট নিয়ে বাঙালি, পাঞ্জাবি, ঝাড়খণ্ডীদের পৃথক তালিকা তৈরি করে বাড়ি-বাড়ি যেতে শুরু করেছে তৃণমূল।

পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ভবানীপুরের শীর্ষনেতাদের নিয়ে গোপন বৈঠকে গেরুয়া প্রভাবিত বুথগুলিকে দখলে আনার গোপন ছক সাজিয়ে দিয়েছেন। মোট ২৬৯ বুথের মধ্যে ৫০—৫০ ফলাফল হয়েছিল এমন বুথকে ‘কমলা’ রং দিয়ে মার্কিং করে দিয়েছেন তিনি। ওই বুথকে দ্রুত ‘সবুজ’ গড় তৈরির টার্গেট দিয়ে বাড়ি-বাড়ি বিশেষ প্রশিক্ষিত তরুণ কর্মীদের পাঠাচ্ছে তৃণমূল। যেমন বিহার প্রবাসীদের বাড়িতে বিহারী—তৃণমূলকর্মী, শিখ বা পাঞ্জাবীদের ফ্ল্যাটে যাচ্ছে তৃণমূল। অবশ্য ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে যে সাড়ে সাত হাজার গুজরাতি ভোটার আছেন তাঁরা এই ভোটেও মোদির কথায় রায় দেবে বলে বিশ্বাস রুদ্রনীলের। তৃণমূল পালটা দাবি করছে, প্রবাসী বিহারিরা জোড়াফুলকে সমর্থন করবেন। কিন্তু পদ্মশিবির নিশ্চিত নীতীশকুমারের ফের ক্ষমতায় ফেরার কারিগর মোদি-শাহকেই ভোট দেবেন বাংলার বিহারি ভোটাররাও। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যে ওয়ার্ডের বাসিন্দা সেই ৭৩ থেকে শুরু দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি যেখান বসবাস করেন সেই ৭২ ওয়ার্ডেও পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়।

[আরও পড়ুন : মানবদরদী চিকিৎসক আলেকজান্ডার গ্রে’র সমাধির হদিশ কলকাতায়, খুশি স্কটিশরা]

কিন্তু এবার ৭১ ও ৭৩ নম্বর, দুই ওয়ার্ডেই স্থানীয় বাসিন্দা, ছেলেবেলা থেকে মানুষের পাশে থাকা শোভনদেবের ব্যক্তি পরিচিতি দলের ভোট বাড়িয়ে দেবে বলে দাবি তৃণমূলের। শুধু তাই নয়, পুরসভার কর্মীদের যে আবাসনগুলি রয়েছে সেখানেও পুর-ইউনিয়নের নেতা হিসাবে তিনি বহু বছর ধরে প্রভাব জারি রেখেছেন। তবে বিদ্যুৎমন্ত্রীর কাছে রীতিমতো ‘ইলেকট্রিক শক’ দিতে পারে ৬৩ ও ৭০ ওয়ার্ডের ভিনরাজ্যের অন্তত ৩০ হাজার ভোটার। অবশ্য তৃণমূলের দাবি, এরা মার্জিন কম-বেশি করতে পারে, কিন্তু ভোটে জিতবেন মমতাই। আসলে ভবানীপুরে এবার লড়াই হচ্ছে তারুণ্যের সঙ্গে অভিজ্ঞতার। অসুস্থ হয়েও যে ভাবে শোভনদেব নিজের নেটওয়ার্ক সাজাচ্ছেন তাতে বসে যাওয়া কর্মীদের অনেক ক্ষোভ, অভিমান ধুলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement