ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এবার শহরে গড়ে উঠছে স্নায়ু চিকিৎসার অত্যাধুনিক হাসপাতাল। খাস কলকাতার পূর্বপ্রান্তে কনভেন্ট রোডে ওই হাসপাতাল তৈরি করতে রাজ্য সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা খরচ হবে। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তার কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক নিউরো মেডিসিন ও সার্জারির হাসপাতাল হয়েছে। কিন্তু এমন কোনও সম্পূর্ণ স্নায়ু হাসপাতাল কার্যত নেই, যেখানে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক উদ্যোগে সেই কাজ শুরু হতে চলেছে। ফলে রাজ্যবাসীকে আর মোটা টাকা খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটতে হবে না।’’
নবান্ন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই অর্থদপ্তর এই হাসপাতাল ও গবেষণাকেন্দ্রের জন্য ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। প্রস্তাবিত হাসপাতালের প্রাথমিক নকশা তৈরি করেছে পূর্ত দপ্তর। আপাতত সাততলা হাসপাতাল হবে। হাসপাতালে ২৪x৭ স্নায়ুর সূক্ষ্ম অস্ত্রোপোচার হবে। নিউরোসার্জারি ও নিউরো মেডিসিনের পোস্ট ডক্টরাল কোর্স করানো হবে। নিরবচ্ছিন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য দু’টি সাব স্টেশন থাকবে প্রস্তাবিত হাসপাতালে। ওই আধিকারিক আরও জানান, ‘‘কাজ দ্রুত গতিতে শুরু চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল রাজ্যবাসীকে উপহার দেবে রাজ্য সরকার।'' ইতিমধ্যেই কলকাতা ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে চিঠি লেখা হয়েছে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য। ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বের এই জমিটি হাসপাতালের জন্য অধিগৃহীত। প্রস্তাবিত হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি গবেষণার কাজও হবে।
স্বাস্থ্য ও অর্থদপ্তর সূত্রে খবর, এই কাজের জন্য তিন দফায় অর্থ বরাদ্দ করা হবে। ইতিমধ্যে প্রথম দফায় ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, বিভিন্ন ধরণের জটিল স্নায়ুর রোগের চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার তো বটেই, সেইসঙ্গে সেরিব্রাল স্ট্রোকের চিকিৎসার পর ফলো আপের জন্য এই হাসপাতালে পৃথক বিভাগ রাখা হবে। এসএসকেএমের অ্যানেক্স বাঙুর ইনস্টিউট অফ নিউরোলজিতে স্নায়ুর জটিল অস্ত্রোপচারও চিকিৎসা হয়। কিন্তু গোটা রাজ্যের রোগীর চাপে দমবন্ধকর পরিস্থিতি বিআইএন-এর। এমন অবস্থায় অসংখ্য রোগীর চাপ কমাতে পৃথক একটি স্নায়ুর হাসপাতালের প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্যই নতুন নিউরো সার্জারি ও মেডিসিনের হাসপাতাল ও গবেষণাকেন্দ্র জরুরি। ২০২৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে পুরোদমে কাজ শুরু হবে।’’
তবে প্রস্তাবিত হাসপাতালে কত শয্যা থাকবে তা এখনও ঠিক হয়নি। গোটা প্রকল্প নির্ভর করছে পূর্ত দপ্তরের কাজের উপর। বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে ২৫০ শয্যা রয়েছে। কিন্তু বেড পেতে কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হয়। এমনকি ইসিজি, সিটি স্ক্যান, এমআরআই করতেও কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। নতুন হাসপাতাল-গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হয়ে গেলে সেই সমস্যা মিটবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তারা।