অর্ণব আইচ: কসবার তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে খুনের ষড়যন্ত্রের নেপথ্যেও নারী-যোগ? ধৃতদের মোবাইল ফোন ঘেঁটে একাধিক মহিলার ফোন নম্বর এবং তাঁদের সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়টি জানতে পারেন তদন্তকারীরা। এই মহিলা কারা? কোথায় বসবাস? কী তাদের কাজ? এই ঘটনায় তারা কীভাবে জড়িত? এমন একাধিক প্রশ্ন উঠে আসে। সেসব খতিয়ে দেখতে গিয়ে যে সত্যের মুখোমুখি হয়েছেন তদন্তকারীরা, তাও বেশ চমকপ্রদ। আর তাতেই আরও স্পষ্ট হয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত বিহারের পাপ্পু-গ্যাং কতটা কূট কৌশলে নিজেদের কাজ হাসিল করে।
সুশান্ত ঘোষকে হত্যার চেষ্টায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা সকলে বিহারের বাসিন্দা। এক্ষেত্রে বিহারের দুষ্কৃতীদের কে বা কারা কাজে লাগিয়েছে, তা জানতে তদন্তে নামে পুলিশ। এনিয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার চারজনকে জেরায় উঠে আসে বেশ কয়েকটি তথ্য। ধৃত গুলজার এবং যুবরাজের ফোনে বহু মহিলার নম্বর পাওয়া যায়। দেখা যায়, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার কথোপকথনও হয়েছিল। এই মহিলাদের খোঁজ করতে গিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, বিহারের পাপ্পু-গ্যাংয়ের সদস্য তারা এবং কেউ মহিলা নন! প্রথামিকভাবে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য না হলেও এটাই সত্যি।
তদন্ত সূত্রে খবর, কুখ্যাত গুন্ডাদের দল সহকর্মীদের নম্বর সেভ করত মহিলাদের নামে, যাতে কথাবার্তা বললে অথবা হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট করলে প্রাথমিকভাবে কোনও মহিলার সঙ্গে ব্যক্তিগত চ্যাট বলে মনে হয় এবং এর আড়ালে যে কোনও কুকর্ম চলছে, সেই সন্দেহ এড়ানো সম্ভব হয়। কিন্তু কসবায় গুলি করে কাউন্সিলরকে খুনের চেষ্টার পর পাপ্পু-গ্যাং সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জোগাড় করেছে পুলিশ। আর তাদের এই কৌশল দেখে বিস্মিত দুঁদে পুলিশকর্তারা। এভাবে 'শিখণ্ডী' খাঁড়া করে তারা বহুদিন ধরেই দুষ্কর্ম হাসিল করেছে। এই পাপ্পু-গ্যাং নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ''অন্য জেলাতেও এসব হচ্ছে। বাংলা শান্ত জায়গা। বিহার বা অনুপ্রবেশ রাজ্য সরকারের বিষয় নয়। কলকাতা পুলিশ বা রাজ্য পুলিশের বিষয় নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের তা রোখা দরকার। কলকাতা পুলিশ তো সীমান্ত আটকাবে না। ''
এদিকে, গত ১৫ তারিখ রাতে যে স্কুটার নিয়ে দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছিল সুশান্ত ঘোষের উপর, সেই স্কুটিটা পাওয়া যাচ্ছিল না। খোঁজখবর নিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছিলেন, অপারেশনের জন্য দুষ্কৃতীরা এখানে আসার পর সেকেন্ড হ্যান্ড স্কুটি কিনেছিল। মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর সেই স্কুটি ফেলে চম্পট দেয় তারা। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন নম্বর অনুযায়ী সে দুচাকার যানটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। গত কয়েকদিন ধরে পড়ে ছিল রাস্তার উপর। এলাকার বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। পুলিশের কাছে খবর দেওয়া হয়। এর পরেই পুলিশ সেকেন্ড হ্যান্ড স্কুটিটি নিয়ে যায়। এই স্কুটিতে চড়ে যুবরাজ সিং ভয় দেখাতে এসেছিল বলে অভিযোগ।