পারমিতা পাল: মাত্র এক সপ্তাহ আগে চাকরির দাবিতে নবান্ন অভিযানে এসে প্রাণ হারিয়েছিলেন বাঁকুড়ার যুবক মইদুল ইসলাম মিদ্দা। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। তাঁকে হারিয়ে বেজায় বিপাকে গোটা পরিবার। কীভাবে চলবে সংসার? কে প্রতিপালন করবে দুই সন্তানকে? এই চিন্তায় আকুল গোটা পরিবার। ঠিক সেই সময় সাহিত্যকে হাতিয়ার করেই মিদ্দার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভীক দত্ত।
মৃত বাম নেতা মিদ্দার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে রাতারাতি আস্ত একটা গল্প লিখে ফেললেন তিনি। সেই গল্পের পিডিএফ বিক্রি করে যে টাকা উঠেছে তা পৌঁছে দিচ্ছেন মইদুলের পরিবারকে। তাঁর বিভিন্ন লেখার পিডিএফ বিক্রি করে এক রাতে ৭৪ হাজার টাকা তুললেন। সেই টাকা ডিওয়াইএফআই-এর তহবিলে তুলে দিয়েছেন। যা মিদ্দার দুই সন্তানের পড়াশোনার জন্য খরচ করা হবে। প্রসঙ্গত, নবান্ন অভিযানে মৃত মইদুল ইসলাম মিদ্দার সন্তানদের পড়াশোনার ভার নিয়েছে DYFI।
কারও অভিযোগ, দলে থেকে কাজ করা যাচ্ছে না। আবার কেউ বলছেন, মানুষের পাশে থাকতে রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছি। এর মাঝেই অন্য এক লড়াই অভীকের। নিঃশব্দে হাজার-হাজার মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। আর সেই লড়াইয়ের তাঁর হাতিয়ার কলম, সাহিত্য।
[আরও পড়ুন : দাবি আদায়ে ফের ধর্মঘটে ট্যাক্সি সংগঠন, আগামী সপ্তাহে প্রতিবাদে শামিল অ্যাপ ক্যাবও]
তবে এই প্রথমবার নয়, এর আগে কোভিড পরিস্থিতি, আমফান পরবর্তী সময়েও সর্বহারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভীক। নিজের বিভিন্ন লেখার পিডিএফ বিক্রি করে ১৬ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন তিনি। এবার এক রাতে ৭৪ হাজার টাকা তুলে তাক লাগিয়ে দিলেন অভীক। জানালেন, “বেশ কিছু দিন ধরে লেখালিখি করতে পারছিলাম না। মিদ্দার ঘটনা দেখার পর মা বলল, ওঁর পরিবারের জন্য কিছু একটা করা দরকার। রাতারাতি লিখে ফেললাম ‘মইদুলের জন্য’। পিডিএফের দাম রেখেছিলাম ন্যূনতম ১০ টাকা। এর চেয়ে বেশি দামেও পিডিএফ কিনেছেন অনেকে। অন্যান্য পিডিএফও বিক্রি হয়েছে।”
মানুষের পাশে দাঁড়ালেও বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ে না। অনেকেই বলেন, রাজনীতির আঙিনায় পা রাখতে চান অভীক। তাই এ সব নিছকই প্রচারের কৌশল। সেই অভিযোগ উড়িয়ে অভীক জানালেন, “আমি রাজনীতিতে আসছি না। এভাবেই লেখার মাধ্যমে মানুষের পাশে থাকতে চাই।” তাঁর কথায়, মানুষ এখনও বাংলা সাহিত্য পড়তে চায়। শুধু পড়ার মাধ্যমটা বদলে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করা যায়। ঠিক যেমন ভাবে আরও এক কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন অভীক। অনাথ শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, কলেজ পড়ুয়াদের পাশে থাকার সংকল্প করেছেন তিনি। সেই চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হলেই ‘অর্জুনে’র লক্ষ্যভেদ হবে বলে মনে করছেন অভীক।