কৃষ্ণকুমার দাস: করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির জেরে আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরের বাসস্ট্যান্ডগুলি তিন মাসেও আদৌ সংস্কার করে উঠতে পারেনি কলকাতা পুরসভা। অধিকাংশ বাসস্ট্যান্ডে এখনও ভগ্নদশা এবং আলো না থাকায় সন্ধ্যা হলেই ঘন অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে। বেশ কিছু রাস্তায় এখনও আলো না জ্বলায় বাসস্ট্যান্ডগুলি ঘিরে পথচলতি যাত্রীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যদিও বাসস্ট্যান্ডগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা পুরসভার দুই বিভাগ, বিজ্ঞাপন ও ইঞ্জিনিয়ারিং মঙ্গলবার জানিয়েছে, বরোগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত স্ট্যান্ডের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কতদিনের মধ্যে মেরামত সম্পূর্ণ হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি আধিকারিক ও পুরকর্তারাও। তবে পুজোর আগে সমস্ত বাসস্ট্যান্ড মেরামত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রশাসক রতন দে।
বৃষ্টি পড়লে আগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা ছুটে গিয়ে স্ট্যান্ডের নিচে আশ্রয় নিতেন। প্রবল রোদে ও ভ্যাপসা গরমেও শহরের শীতাতপ বাসস্ট্যান্ডগুলি রাস্তায় বের হওয়া বাসিন্দাদের কাছে ছিল স্বস্তির ঠিকানা। অনেক যাত্রী ছিলেন যাঁরা এই সমস্ত স্ট্যান্ড থেকে অটো বা ট্যাক্সিও ধরতেন। শহরে পথচলতি মানুষের কাছে প্রতিটি বাসস্ট্যান্ড একটা অন্যতম আশ্রয়স্থল হিসাবে চিহ্নিত ছিল। বস্তুত এই কারণে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিধায়ক ও সাংসদরা তাঁদের উন্নয়ন তহবিল থেকে শহরের বাসস্ট্যান্ডগুলিকে সুদৃশ্যভাবে তৈরি করেছিলেন। বাংলার মনীষি থেকে শুরু করে ক্রীড়াক্ষেত্রের নানা ব্যক্ত্বিত্বও বাসস্ট্যান্ডে শোভা পাচ্ছিলেন। কলকাতা পুরসভাও রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে প্রায় ১৪০টি বাসস্ট্যান্ডকে বিজ্ঞাপনদাতাদের ভাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু আমফান ঘূর্ণিঝড়ে দাপটে অধিকাংশ স্ট্যান্ডের মাথার ছাউনি উড়ে গিয়েছে। ভেঙে গুড়িয়ে গিয়েছে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং ও আলো। বিভাগীয় দায়িত্বে থাকা প্রশাসক দেবাশিস কুমার জানান, “বিজ্ঞাপনদাতাদেরই বলা হয়েছে মেরামত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে। ইতিমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে।” তবে লকডাউনের ধাক্কায় আর্থিক কারণে বেশ কিছু বিজ্ঞাপনদাতা ফের ওই স্ট্যান্ডে বোর্ড বা আলো লাগাতে আগ্রহী নন বলে স্বীকার করেছেন দেবাশিস কুমার।
[আরও পড়ুন: করোনা আবহে ভোলবদল শিয়ালদহের, জেনে নিন শতাব্দী প্রাচীন স্টেশনের কী পরিবর্তন হল]
গত কয়েকদিন ধরে পুরোদমে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় স্ট্যান্ড ভাঙাচোরা ও মাথার উপরে ছাউনি না থাকায় বহু রাস্তায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। আবার সন্ধ্যার পর আলো ও ছাদহীন স্ট্যান্ডে অন্ধকারে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। আনলকের জেরে অফিস ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পুরোদমে চালু হওয়ায় রাস্তায় অটো ও বাসযাত্রীর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় পথচলতি যাত্রীরা অবশ্য অধিকাংশ স্ট্যান্ডে গিয়ে বর্ষা থেকে বাঁচতে পারেননি। বিজ্ঞাপন দেওয়া ১৪০টি ছাড়া শহরের অন্য সমস্ত বাসস্ট্যান্ড রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের। বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় পুরপ্রশাসক রতন দে জানান,“ শহরের সমস্ত বরোকেই ক্ষতিগ্রস্ত স্ট্যান্ডের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। করোনা যুদ্ধ সামলে এখন রক্ষনাবেক্ষনের অর্থ পাওয়া কঠিন। ক্ষতির তালিকা সম্পূর্ণ হলে মুখ্যপ্রশাসক মারফত রাজ্য সরকারের কাছে অর্থের জন্য পাঠানো হবে।”
The post আমফানের তিন মাস পরেও মেরামত হয়নি শহরের বাসস্ট্যান্ড, আলোহীন পথে দুর্ভোগে যাত্রীরা appeared first on Sangbad Pratidin.