বিশাখা পাল: নন্দন চত্বরে ইদানিং ঘাঁটি গেড়েছেন ‘ভূতের রাজা’। আজকাল সেখানেই থাকছেন তিনি। সেই লম্বা লম্বা দাঁত, মাথায় টোপর আর মাথার পিছনে ষড়ভূজাকৃতির তারকাচিহ্ন। মানিকবাবুর ‘গুগাবাবা’ দেখে থাকলে এই দৃশ্য দেখে মনের মধ্যে ভেসে আসতেই পারে ‘ভূতের রাজা দিল বর’। আর যারা একেবারেই খুদে, তারা কিন্তু এই রাজাকে দেখলে ভয়ের থেকে মজাই পাবে বেশি। শুধু কী ‘ভূতের রাজা’ একা এসেছেন? প্রজাদেরও সঙ্গে করে নন্দনে হাওয়াবদল করতে নিয়ে এসেছেন তিনি। স্কন্ধকাটা, ভ্যাম্পায়ার ব্যাট-সহ ঠাকুরমার ঝুলির ভূতেদেরও বর্তমান আস্তানা নন্দন। ওখানে গেলেই আজকাল দেখা মিলছে তেনাদের।
ব্যাপারটা কী? ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছেন না তো? তাহলে খুলেই বলি। নন্দনে চলছে আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। আর সেই কারণেই ভূতের থিমে সেজেছে নন্দন চত্বর। অশরীরীকে সেলুলয়েডের বাইরে আনার পরিকল্পনা অবশ্য থার্ড লাইন ক্রিয়েশনের। এই সংস্থার আর্ট ডিরেক্টর পরিমল পালের মস্তিস্কপ্রসূত এই ‘ভূতের রাজা’। নন্দনে হাওয়া খেতে বেরনো ভূতেরাও তাঁরই সৃষ্টি। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে তিনি বলেছেন, শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র উৎসব। তাই তাদের কথা মাথায় রেখেই নন্দনকে সাজিয়ে তোলার চিন্তাভাবনা করেছিলেন তিনি। ছোটদের আনন্দ দিতেই এত কর্মকাণ্ড। গেট থেকে শুরু করে প্রেক্ষাগৃহ পর্যন্ত এমন সিকোয়েন্সে তেনাদের সাজিয়েছেন শিল্পী পরিমল পাল, যা দেখে বাচ্চারা আনন্দ পাবে, খুশী হবে।
[ আরও পড়ুন: অসুস্থ কবি শঙ্খ ঘোষ, শ্বাসনালীতে সংক্রমণ নিয়ে ভরতি হাসপাতালে ]
তবে শুধু দেশি ভূত বা ভূতের রাজাই যে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, তা কিন্তু নয়। দেশি ভূতের পাশাপাশি বিদেশি ভূতও এসেছে এই চলচ্চিত্র উৎসবে। কবরস্তানের রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা যাতে ছোটদের হয়, রয়েছে তার বন্দোবস্ত। নন্দনের মধ্যেই পরিমলবাবু একটি গোরস্থান বানিয়েছেন। সেখানে রয়েছে একাধিক কবর। কবরের উপরে মোমবাতিও জ্বলছে। কোনও কোনও কবর থেকে আবার উঁকি মারছে আবক্ষ কঙ্গালমূর্তি। পিছনে রয়েছে বাদুড়। অনায়াসে সেটিকে আপনি ভ্যাম্পায়ার ব্যাট বলে মনে করতে পারেন। ভূতের গায়ে যে অসুরিক শক্তি রয়েছে তাও দেখিয়েছেন শিল্পী পরিমল পাল। এক জায়গায় দেখানো হয়েছে, পাথর ভেঙে বেরিয়ে আসছে ভূত।
এ তো গেল দেখার কথা। এবার আপনার খুদেটি যদি ভৌতিক অভিজ্ঞতার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হতে চায়, তার বন্দোবস্তও রয়েছে নন্দনে। রয়েছে একটি ভৌতিক বাস। বাসটি দোতলা। বয়সের ভিত্তিতে মিলবে বাসে ওঠার ছাড়পত্র। ভৌতিক সেই বাসে চড়ে ঘোরা যাবে গোটা নন্দন চত্বর। এছাড়া রয়েছে একটি স্কেয়ারি হাউজ। সেখানে আবার রয়েছে ‘লাইভ ভূত’। ভাবছেন এ আবার কী! খুব সহজ। দীপাবলির রাতে অনেক মণ্ডপেই মানুষরা ভূত সেজে ঘোরাফেরা করে। ছোটদের সামনে পেলেই ‘হাঁউ মাঁউ খাঁউ’ করে তেড়ে যায়। এখানেও সেই ব্যাপার। মানুষরাই ভূত সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই ক্রেজি হাউজে। তবে ভূত দেখতে গিয়ে কিন্তু যেই পথ দিয়ে হাঁটছেন, সেদিকে তাকাতে ভুলবেন না। গোটা রাস্তায় রয়েছে পেইন্টিং।
সব মিলিয়ে এখন নন্দন কার্যত ভূতের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। আর সেখানে দিনরাত আড্ডা দিচ্ছে দেশ-বিদেশের ভূতেরা। তবে তেনারা এখানে মোটেই মানুষকে ভয় দেখাচ্ছেন না। এ বিষয়ে ভূতের রাজার কড়া আদেশ রয়েছে। উলটে বাচ্চাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে নন্দনের ভূতেরা। বলছে, “কাছে আয় কাছে আয় / তোরা বড় ভাল ছেলে কাছে আয় কাছে আয় কাছে আয়…।”
[ আরও পড়ুন: ‘মোদি নিজেই জানেন না CAA, NRC কী!’, উলটো সুর গায়ক অভিজিতের গলায় ]
The post ঘুরে বেড়াচ্ছে স্কন্ধকাটা, কবর থেকে উঠে বসছে কঙ্কাল, নন্দন যেন আস্ত এক ‘ভূতপুরী’ appeared first on Sangbad Pratidin.