পলাশ পাত্র, তেহট্ট: ডিজিটাল যুগে বেশীরভাগ মানুষই এখন ব্যস্ত স্মার্টফোনে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রমশই কমছে বই পড়ার অভ্যাস। লাইব্রেরিতে জড়ো হয়ে বই পড়ার অভ্যাসও প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতি গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের জনক এস আর রঙ্গনাথনের নামে রাজ্যে প্রথম সংগ্রহশালা খুলল। ১৬৪ বছরের পুরনো কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীতে এই সংগ্রহশালা তৈরি হল।
প্রায় পনেরোশো দুষ্প্রাপ্য বই রয়েছে এই সংগ্রহশালায়। আছে টেরাকোটার একাধিক সংগ্রহ। যা গবেষণার ক্ষেত্রে অমূল্য সম্পদ হিসেবে কাজে লাগবে। মহারাজা শ্রীশচন্দ্রের দান করা জমিতে ১৮৫৬ সালে গড়ে ওঠা এই গ্রন্থাগারে উনত্রিশ হাজারের বেশি বই রয়েছে। যার মধ্যে পঁচিশ হাজার কম্পিউটারাইজড। কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরীর ছত্রে ছত্রে রয়েছে ইতিহাস। একসময় পাবলিক লাইব্রেরীকে কেন্দ্র করেই বাঘাযতীন, শিবরাম গুপ্ত, শহিদ অনন্তহরি মিত্র, বসন্ত বিশ্বাস, হেমন্ত সরকারের মতো স্বদেশীদের আন্দোলনের বীজ বোনা শুরু হয়েছিল এখান থেকেই। পাবলিক লাইব্রেরী ও তার মাঠে একসময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বিপিনচন্দ্র পাল, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, রাজেন্দ্র প্রসাদ, মদনমোহন মালব্য, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্গীতজ্ঞ দিলীপ রায়, বিধানচন্দ্র রায় সকলের স্মৃতিধন্য এই প্রাচীন গ্রন্থাগার। প্রায় তেত্রিশশো সদস্য রয়েছে।
[আরও পড়ুন: যাদবপুর কাণ্ড নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট, সমালোচিত মীর]
এই লাইব্রেরীর দ্বিতলে ড: এস আর রঙ্গনাথনের নামাঙ্কিত সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেন জেলা গ্রন্থাগারিক মনঞ্জয় রায়। এখানে একশো থেকে আড়াইশো বছরে মধ্যে প্রাচীন দুষ্প্রাপ্য বই, পুস্তিকা, পঞ্জিকা, মানচিত্র, পুঁথি রয়েছে। তার মধ্যে ১৮৯৪ সালে প্রমথ চৌধুরীর লেখা ‘এ হিস্টিরি অফ হিন্দু সিভিলাইজেশান’, ১৮৯৮ সালে লেখা এম এল ভট্টাচার্যের ‘এ লেকচার অফ বেদান্ত ফিলোজাফি’, ১৮৩০ সালে জেমস ম্যাকিন্স তোসের লেখা ‘এ শর্ট হিস্টিরি অফ ইংল্যান্ড’র মতো ৭৫১ টি ইংরেজি বই এখানে রয়েছে। বাংলার ১৩১০ সালে নবদ্বীপ চন্দ্র গোস্বামীর লেখা বৈষব ব্রত দিন নির্ণয়, ১৩১৭ সালে বিনোদ বিহারীর লেখা ‘বিষ্ণু মূর্তি পরিচয়’ বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘চরিত্র পূজা’ কিংবা ১৩০১ সালে ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘আচার প্রবন্ধ’র মতো ৫২১টি বাংলা বইও আছে। সংস্কৃত, বাংলায় তালপাতা ও তুলোটে লেখা পুঁথির মধ্যে কৃষ্ণদাস কবিরাজ, বাণেশ্বর জয়দেব, কৃষ্ণানন্দ আগমবাগিশ, ভানুচন্দ্রর মতো বিখ্যাতদের পুঁথিও রয়েছে।
পাবলিক লাইব্রেরীর পরিচালন সমিতির সভাপতি সুবীরেন্দ্র সিংহ রায় বলেন, “গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের প্রাণপুরুষ এস আর রঙ্গনাথনকে এই সংগ্রহশালা উৎসর্গ করা হয়েছে। রাজ্যে প্রথম তাঁর নামে এই সংগ্রহশালা হল।”
The post ডিজিটাল যুগে গ্রন্থাগার সংস্কারে নজর, সেজে উঠছে কৃষ্ণনগর লাইব্রেরি appeared first on Sangbad Pratidin.