সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এবার আরজি কর প্রতিবাদে সংগীতশিল্পী কুমার শানুও। অনুষ্ঠানের কারণে গায়ক এই মুহূর্তে আমেরিকায়। তাই সরাসরি কথা বলতে পারেননি তিনি। তাঁর হয়ে প্রতিবাদের কথা জানিয়েছেন শিল্পীর আপ্তসহায়ক দিলীপ দে। দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে গায়কের ছায়াসঙ্গী তিনি। বলেছেন, “বাংলার এই আন্দোলন শানুদাকে ছুঁয়ে গিয়েছে। তিনি নিজে নানা কারণে পথে নামতে পারছেন না। কিন্তু বাংলার বাকি শিল্পী-অভিনেতাদের প্রতিবাদী রূপ দেখে তিনি গর্বিত।” দিলীপ দে আরও জানিয়েছেন, মার্কিন মুলুকের অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে রোজই বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতেন শিল্পী।
সেই জায়গা থেকে শিল্পীসত্তার পাশাপাশি বাবা হিসাবেও তাঁর বক্তব্য ছিল, “আমিও দুই মেয়ের বাবা। শুধুই কলকাতার আর জি কর হাসপাতাল নয়, সারা দেশে এই মুহূর্তে মেয়েরা যে ভাবে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন তা দেখে ভয় করছে।” গায়কের মতে, এই প্রতিবাদের খুবই প্রয়োজন। কারণ, এটাই উপযুক্ত সময়। এখনই ন্যায় ছিনিয়ে আনতে হবে। না হলে ফের অন্য কারও মেয়ে একই ভাবে নিগৃহীত হবেন। একই সঙ্গে, তাঁর আপ্তসহায়কের কাছে গায়কের আফসোস, নানা অনুষ্ঠানের কারণে বেশির ভাগ সময় তাঁকে দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে। ফলে, চাইলেও তিনি নিজের শহর কলকাতায় পৌঁছতে পারছেন না। সেখানে বাকি খ্যাতনামাদের সঙ্গে প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলাতে পারছেন না। কিন্তু মন থেকে তিনি প্রত্যেকের পাশে।
[আরও পড়ুন: ‘বহুরূপী’ শিবপ্রসাদকে ধরতে মরিয়া ‘সুপারকপ’ আবির, টানটান টিজারে বাজিমাত ]
এক লহমায় সব কিছু ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। একমাত্র সন্তানকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে নৃশংসভাবে। নিজের মেয়ের এমন পরিণতি কতখানি ভয়াবহ তা বর্ণনার ভাষা বোধহয় অভিধানে নেই। শেল বেধা বুকে শিক্ষক দিবসে এবার খোলা চিঠি লিখছিলেন তিলোত্তমার মা। যে চিঠির পরতে পরতে ধরা পড়ল সন্তানহারা মায়ের তীব্র যন্ত্রণা। সকলের কাছে মেয়ের মৃত্যুর বিচার।
এদিন খোলা চিঠিতে তিলোত্তমার মা লিখেছেন, ‘আজ শিক্ষক দিবসে আমি আমার মেয়ের হয়ে ওর সকল শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রণাম জানাই। ওর ছোটবেলা থেকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নছিল। আপনারা ছিলেন সেই স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কান্ডারী। আমরা তার অভিভাবক হিসাবে পাশে থেকেছি, নিজেও অনেক কষ্ট করেছিল। কিন্তু আমি মনে করি, আপনাদের মত ভালো ভালো শিক্ষকদেরকে সে পাশে পেয়েছিল বলেই, মেয়ে তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন সফল করতে পেরেছিল।’
একইসঙ্গে মেয়ের কথা তুলে ধরে তিনি লেখেন, “আমার মেয়ে বলত, মা আমার টাকা, পয়সা চাই না, শুধু চাই নামের পাশে অনেকগুলো ডিগ্রি, আর আমি যেন অনেক অনেক রোগীকে ভাল পারি। সেদিন বৃহস্পতিবার ও ঘর থেকে বেরিয়ে হসপিটালে অনেক রোগীকে পরিষেবা দেয় এবং অন ডিউটি অবস্থায় কিছু দুর্বৃত্তদের হাতে বলি হয়। চরম নিষ্ঠুরতাবে তার স্বপ্নগুলোকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। অধরা থাকে সেই রাতে লেখা তার এমডিতে গোল্ড মডেল পাওয়ার স্বপ্ন। তাই নারকীয় কাণ্ড ঘটানোর পরও সব তথ্য প্রমাণ লোপাট করার সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়। হসপিটাল কর্তৃপক্ষ অবং প্রসাশনিক তৎপরতায়।”
সব শেষে তিনি লেখেন, “একমাত্র কন্যার মায়ের আকুল আর্তি, সকল মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যভবনের কর্তৃপক্ষ, নার্সিংস্টাফ সবার কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনাদের কাছে যদি কোন তথ্য প্রমাণ থাকে তবে সেগুলো সামনে আনুন। কারণ ভাল মানুষের নীরবতা অপরাধীদের সাহস যোগায় বলেই আমি মনে করি। চিকিৎসক সমাজ, এবং সাধারণ মানুষ যে আন্দোলন করছে তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে এবং শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষকদের প্রণাম জানিয়ে মেয়ের সুবিচারের আশায়, তিলোত্তমার মা।”