সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: ফের ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা (DSP)। রাতের কাজ চলাকালীন চলন্ত কনভেয়ার বেল্টে পড়ে দেহ টুকরো টুকরো হয়ে গেল কারখানার এক স্থায়ী শ্রমিকের দেহ। প্রায় দু’ঘন্টার চেষ্টায় শরীরের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। মর্মান্তিক দুর্ঘটনার নেপথ্যে কারখানার সেফটি বিভাগের গাফিলতিকে দায়ী করছেন অন্যান্য শ্রমিকরা। কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে মৃত্যুর বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশের দাবি বাম শ্রমিক সংগঠন সিটুর (CITU)।
দুর্গাপুর (Durgapur) ইস্পাত নগরীর বি-জোনের বঙ্কিমচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা আশুতোষ ঘোষাল। ৫৫ বছরের আশুতোষবাবু দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ‘র মেটেরিয়াল হ্যান্ডলিং প্ল্যান্ট’-এর ওল্ড সাইডে অপারেশন বিভাগের স্থায়ী কর্মী। পরিবারে স্ত্রী ও এক ছেলে রয়েছে। মৃত আশুতোষবাবুর ছেলের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আর কয়েকদিন পরেই। কিন্তু তারই মধ্যে এই মর্মান্তিক ঘটনার ঘটে গেল। কারখানা সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার নাইট শিফটে ডিউটি করার সময় হঠাৎই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি চলন্ত কনভেয়ার বেল্টের (Conveyer Belt) উপর পড়ে যান। মুহূর্তের মধ্যে দেহ চার টুকরো হয়ে যায়।
[আরও পড়ুন: ‘সাতদিনেই মনে হচ্ছে মরে যাব’, ভারত জোড়ো যাত্রায় অংশ নিয়ে বিস্ফোরক কমল নাথ]
এদিকে, এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ফলে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক মহল। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক সংগঠনের একাধিক নেতা-কর্মী ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলাতির জন্য এই মৃত্যু বলে অভিযোগ করেছেন। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ঠিকা শ্রমিক ইলেকট্রিক্যাল শর্ট সার্কিটের ফলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ২০ নভেম্বর ডিএসপির ব্লাস্ট ফার্নেস লেডেল থেকে গলিত লোহা ছিটকে মৃত্যু হয় তিন ঠিকা শ্রমিকের। তারপর রাতে আবার কনভেয়ার বেল্টে পড়ে এই দুর্ঘটনা।
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক সংগঠনের একাধিক নেতা-কর্মীরা অভিযোগ তুলে বলছেন, “কারখানার সেফটি বিভাগের অপদার্থতার ফলে কারখানায় প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে আর সংস্থার আধিকারিকরা সান্তনা দিচ্ছেন এই বলে যে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন শ্রমিকরা। অবিলম্বে কারখানা কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি না দেন তাহলে আগামী দিনে আরও অনেকের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায়।”
[আরও পড়ুন: কম দামে তেল চাই, পাকিস্তানের আরজি কানেই তুলল না রাশিয়া]
বৃহস্পতিবার রাতে ঠিক কী কারণে স্থায়ী কর্মী আশুতোষ ঘোষালের মৃত্যু হল, তার বিস্তারিত রিপোর্ট কারখানার সিটু নেতৃত্বের কাছে চেয়েছেন সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তপন সেন। তাঁর কথায়, “খুবই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক ঘটনা। আমি শোকাহত। মৃত শ্রমিককে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।”