নন্দন দত্ত, সিউড়ি: লালন শেখ নেই। কিন্তু তার নিয়ে আসা প্রিয় কুকুরটিকে এবার ঘরে ফিরে পেতে চাইছে তার মেয়ে, তার স্ত্রী। এদিকে সরকারি বিধি মেনে সিউড়ির ভট্টাচার্য পাড়ায় সযত্নে লালিত হচ্ছে কুকুরটি। রেশমা বিবি জানালেন, “লালন শেখ ক্রশবিড কুকুরটিকে দু’বছর আগেই বাড়িতে এনেছিল। নাম রেখেছিল টপি। সে ছিল আমাদের নয়নের মণি। বাড়িতে সারাদিন ছাড়া থাকত। কুকুরটিকে ঘটনাচক্রে ছেড়ে দিয়ে ঘর বন্ধ করে আমাদের পালাতে হয়েছিল। তারপর আর কি হয়েছে জানিনা। আমরা রামপুরহাট থানার মাধ্যমে আমাদের প্রিয় টপিকে ফিরে পেতে চাই।” বর্তমানে সিউড়িতে অলোক ভট্টাচার্যের বাড়িতে গত ন’মাস ধরে পালিত হচ্ছে টপি। তিনি জানান, আইনের দাবিতে কুকুরটিকে ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু আমাদের সেই জিমি, আদরের গুলুকে ছেড়ে থাকা বেশ কষ্টের হবে।
লালনের টপি এখন সিউড়িতে জিমি হিসাবে বড় হচ্ছে। টপি অবশ্য তার পালক পিতা অলোক ভট্টাচার্যের কাছে এসেছিল আচমকা। গত ২১ মার্চ ভাদু শেখ খুন হয়। তার ডান হাত লালন শেখ। বগটুই গ্রামে লালনের বাড়ির ঠিক উলটোদিকে বানিরুল শেখের বাড়ি। সেই বাড়িতে ভাদু খুনের বদলা হিসাবে অগ্নিদগ্ধ করে ৯ জনকে গণহত্যা করা হয়। সেই আতঙ্কে কোনও রকমে বাড়িতে তালা মেরে বেপাত্তা হয়ে যায় লালন ও তার পরিবার। বাড়ির ভিতর আটকে থেকে যায় তাদের প্রিয় টপি। এদিকে কাউকে দেখতে না পেয়ে, খেতে না পেয়ে কাহিল অবস্থা হয় লালনের কুকুরটির।
[আরও পড়ুন: ‘নিয়ম মেনে রাজনীতি করুন’, কোন্দল রুখতে বঙ্গ বিজেপি নেতাদের ধমক শাহের]
প্রতিবেশীরা জানান, কুকুরটি শুধু কেঁদে বেড়ায়। মালিকের খোঁজ করে। খেতে পায় না। ন’দিন পরে সিবিআই লালনের বাড়িতে হার্ড ডিক্সের খোঁজে এসে বন্ধ দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। তখন একদম নেতিয়ে পড়া টপি তাদের পায়ের কাছে এসে লুটিয়ে পরে। সিবিআই আপাতত তাকে উদ্ধার করে তাদের প্রতিবেশী বাবর আলির হেফাজতে রেখে দেয়। কুকুরের এই পরিস্থিতি দেখে সিউড়ি থেকে কুকুরপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বগটুই গ্রামে গিয়ে হাজির হয়। নির্বাকন্নের কর্নধার রাজর্ষি ঘোষ জানান, “আমরা গিয়ে দেখি আতঙ্কে, না খেতে পেয়ে শরীরের জল কমে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পশু চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে আমরা টপিকে স্যালাইন দিই। সুস্থ করে তুলি।”
এদিকে, বাবর আলি জানান সেই পরিস্থিতিতে ওই কুকুর রাখার মতো অবস্থা আমার ছিল না। তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তারাপীঠের প্রতিনিধি পাপড়ি মুখোপাধ্যায়কে ফোন করেন। সেই সূত্রে রামপুরহাট থানায় লিখিত আবেদন জানিয়ে টপিকে সিউড়ি এনে হাজির করা হয়। সিউড়ির ভট্টাচার্য পাড়ার বাসিন্দা অলোক ভট্টচার্য বলেন, “লালনের টপি আমার বাড়িতে জিমি নামে পরিচিতি পায়। সে আমার কাছেই থাকে শীতের রাতে আমার খাটেই ঘুমায়। আমি তাকে গুলু বলে ডাকি। যেখানে যায় গুলু আমার সঙ্গে যায়।” রাজর্ষিবাবু জানান, কুকুরটির নিয়মিত ভ্যাকসিন হয়। স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়। এদিকে লালনের মেয়ে রুকসারা খাতুন জানায়, “আমরা সবে মাত্র চারদিন নিজেদের বাড়িতে ফিরেছি। ঘরে এসে বাবা নেই। টপি নেই। কিছু ভাল লাগছে না।” লালনের স্ত্রী রেশমা বিবি জানান, “আমরা টপিকে পুলিশের মাধ্যমে ফেরত চাইব।”