অর্ণব আইচ: বড্ড জ্বালাচ্ছে জালিয়াত ‘নাতি নাতনিরা’। তাই ‘দাদু দিদাদের’ পাঠ দিল লালবাজার। শহরের প্রবীণদের নিয়ে এসে রীতিমতো ‘ক্লাস’ নিয়ে লালবাজারের আধিকারিকরা তাঁদের জানালেন, এটিএম জালিয়াত বা ব্যাংক জালিয়াতদের হাত থেকে বাঁচতে তাঁদের কী করতে হবে।
কিছুদিন আগেই ফোনটি এসেছিল শহরের এক প্রবীণের কাছে। নিজেকে একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রী বলে পরিচয় দেয় এক তরুণী। বলে, তাদের সিলেবাসের অঙ্গ হিসাবেই ফোনে প্রবীণদের ইন্টারভিউ নিচ্ছে। প্রথমে শুরু করে, ওই প্রবীণ ব্যক্তি কী কাজ করতেন, অবসর গ্রহণের পর কীভাবে দিন কাটান, এই প্রশ্ন দিয়ে। সঙ্গে বাড়িতে কে বা কারা আছেন, প্রবীণদের নিরাপত্তা নিয়ে। তার পরই প্রশ্ন ঘুরে যায় এটিএমের দিকে। তিনি কীভাবে ব্যাংক লেনদেন করেন, এটিএম কার্ড ব্যবহার করেন কি না, তা জানার চেষ্টা করে ওই ‘ছাত্রী’। এর পরই তাঁর এটিএম কার্ডের নম্বর ও কার্ড সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করতে থাকে সে।
[ আরও পড়ুন: শিলিগুড়িতে রেলিং টপকে খাদে গাড়ি, ঘটনাস্থলে মৃত ২ পর্যটক ]
এক পুলিশ আধিকারিক জানান, ‘মোডাস অপারেন্ডি’ পালটাচ্ছে জামতাড়া, ধানবাদের জালিয়াতরা। তারা জালিয়াতি শুরু করেছিল নিজেদের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ম্যানেজার বা আধিকারিক পরিচয় দিয়ে। তাদের ফাঁদে পা দিয়েছিল অনেকেই। শেষ পর্যন্ত তা এসে দাঁড়িয়েছে সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র বা ছাত্রীতে। যদিও তাদের সেই মূল লক্ষ্য এটিএম কার্ডের নম্বর ও অন্যান্য তথ্য জানা। এখনও তাদের ‘টার্গেট’ শহরের বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা। পুলিশের কর্তাদের মতে, দেখা গিয়েছে, এই ধরনের ব্যাংক জালিয়াতির ক্ষেত্রে জালিয়াতদের ফাঁদে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাই বেশি পড়েন। তাঁরা সহজে বিশ্বাস করে নেন ওই জালিয়াতদের কথা। তাই জালিয়াত ‘নাতি নাতনি’দের ফাঁদে যাতে শহরের ‘দাদু দিদা’রা না পড়েন, তার জন্যই উদ্যোগ নেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা। পুলিশ নিশ্চিত, যারা তাঁদের ফোন করে জালিয়াতির ফাঁদে ফেলে, তারা প্রায় প্রত্যেকেই তরুণ-তরুণী। জামতাড়ার ওই তরুণদের মধ্যে অনেকে আগে গ্রেপ্তারও হয়েছে। তাই এবার জালিয়াতদের হাত থেকে বাঁচাতে ‘প্রণাম’ প্রকল্পের আওতায় থাকা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বসিয়ে পাঠ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন লালবাজারের আধিকারিকরা।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, বহু প্রবীণই এটিএম কার্ড ব্যবহার করেন। কিন্তু অনেক বিষয়েই তাঁরা অবহিত নন। অনেক প্রবীণই আবার অনলাইনে ব্যাংকের লেনদেন করতে গিয়ে বিপদে পড়েন। তাঁদের পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়, যদি সমস্যা বা অসুবিধায় পড়েন, তাঁরা যেন এটিএমের বদলে চেক ব্যবহার করেই টাকা তোলেন। তাই এদিনও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বলা হয়, তাঁদের যদি কেউ ফোন করে এটিএম কার্ডের নম্বর চায়, তাঁরা যেন কখনওই না দেন। এ ছাড়াও কেউ যদি দিয়েও ফেলেন, তবে যেন ওটিপি না দেন। সিভিভি নম্বরও যেন তাঁরা কাউকে না দেন। অনলাইন বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রেও তাঁদের সচেতন হতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীবিহীন এটিএম কাউন্টারে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাঁদের। ব্যক্তিগত ঋণ বা পার্সোনাল লোনের নাম করে প্রতারণা ও জালিয়াতির সম্পর্কে তাঁদের সচেতনও করা হয়। এটিএমে টাকা তুলতে গেলে প্রবীণদের কী করণীয়, তা-ও তাঁদের বোঝানো হয়। এই সম্পর্কে কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[ আরও পড়ুন: ২১৫ বছরের রীতি মেনে দোলেই দু্র্গা আরাধনা হয় এই শহরে ]
The post ব্যাংক জালিয়াতির ফাঁদে ‘দাদু-দিদা’রা, প্রবীণদের বাঁচতে বিশেষ পাঠ লালবাজারের appeared first on Sangbad Pratidin.