শেখর চন্দ, আসানসোল: বিপজ্জনক অবস্থায় বিসিসিএলের দামাগড়িয়া খোলামুখ খনি। বিসিসিএল আধিকারিক ও পুলিশের পরিদর্শনের সময়ই এবার নামল ধস। হুড়মুড়িয়ে পড়ল বড় বড় কয়লার চাঁই। বন্ধ হয়ে গেল খনির রাস্তার একাংশ। তবে বিসিসিএল ও পুলিশের দাবি, ধস নামলেও কেউ চাপা পড়েননি। হতাহতের কোনও খবর নেই।
রবিবার সকালে বিসিসিএল দামাগড়িয়া খোলামুখ খনির অবৈধ সুরঙ্গে ধস নামে। স্থানীয়দের দাবি, যে সময় ধস নামে তখন কয়লা চুরি চলছিল। তাই বেশ কয়েকজনের চাপা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। খবর পেয়েই সিআইএসএফ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় বিসিসিএল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা খতিয়ে দেখে স্বীকার করে নেন ধসের ঘটনা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান কুলটি থানার পুলিশ আধিকারিকরা ও ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) অভিষেক মোদিও। তিনি তদন্ত করে বলেন, ধস নেমেছে ঠিকই কিন্তু কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। আশেপাশে গ্রামগুলিতে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। সেখানে কেউ এমন অভিযোগ করেনি।
[আরও পড়ুন: অসুস্থতার নাটক করে হাসপাতালে! শৌচাগারের পাইপ বেয়ে ছ’তলা থেকে চম্পট বিচারাধীন বন্দির]
এদিন ধসের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় বিজেপি নেতা ও বিজেপি কাউন্সিলর লালন মেহরা। তিনি অভিযোগ করেন, অনেকেই সেখানে কয়লা কাটতে যায়। অবৈধ সুরঙ্গ থেকে কয়লা চুরি করে। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা পুলিশ প্রশাসন ও খনি কর্তৃপক্ষের একাংশের যোগসাজেশে এই কারবার চলছে বলে দাবিও করে। ঘটনাস্থলে যান আসানসোল পুরনিগমের মেয়র পরিষদ তথা তৃণমূল কাউন্সিলর ইন্দ্রানী মিশ্র। তিনি আবার অভিযোগ করেন, কুলটি (Kulti) বিধানসভা বিজেপির, এখানকার কাউন্সিলার বিজেপির, সিআইএসএফ বাহিনী কেন্দ্রের, বিসিসিএল কেন্দ্রের। তাই যদি ধস নামে বা কয়লা চুরি হয়, তার দায় নিতে হবে বিজেপি সরকারকে। বিসিসিএল দামাগড়িয়া খনির ম্যানেজার রজত কুমার নায়েক ধস কবলিত এলাকা পরিদর্শনের পর বলেন, এখানে তাদের কোন কয়লা উত্তোলন হয় না। খনিটি এই মুহূর্তে পরিত্যক্ত রয়েছে। তবে কয়লা চুরি করতে বহু মানুষ এখানে মাঝে মাঝে নেমে পড়ে। ধস নামে। ধসের পর খনি ভরাট করে দেওয়া হয়। পুরো খনি এলাকাটিকে তারা ফেনসিং এর ব্যবস্থা করবেন। যেন বাইরে লোক এখানে ঢুকে না পড়ে বা কোন বিপদ না ঘটে।
এদিনের ঘটনায় প্রশ্ন, কয়লা উত্তোলন হয় না তা সত্ত্বেও কেন খোলামুখ খনিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রেখেছে বিসিসিএল? খনিতে ধস ও কয়লা চুরির দায় বিজেপি ও কেন্দ্রের, এমন অভিযোগ করল তৃণমূল। পালটা বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, বিসিসিএলের আধিকারিকদের একাংশ, সিআইএসএফ ও পুলিশ প্রশাসনের যোগসাজেশে তৃণমূল নেতারা বেআইনি কয়লা খনন করিয়ে অবৈধ কারবার চালাচ্ছে। পালটা তৃণমূলের দাবি, ওই ওয়ার্ডটি বিজেপি কাউন্সিলরের, কুলটি বিধানসভা বিধায়ক বিজেপির আর বিসিসিএল কেন্দ্র সরকারের, সিআইএসএফ বাহিনীও কেন্দ্রের। কয়লা চুরির দায় বিজেপির। সবমিলিয়ে কয়লা কারবার নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠল কুলটির রাজনীতি।