সুকুমার সরকার, ঢাকা: বিলাসবহুল জীবনযাপনে কুকীর্তি ঢেকে ফেলার চেষ্টা করেও শেষরক্ষা হল না। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেন আওয়ামি লিগের শাখা সংগঠনের যুব মহিলা লিগ নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া। ঢাকার গুলশানের একটি পাঁচতারা হোটেলে অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কার্যক্রম চালানোর অভিযোগে পাপিয়া-সহ চার যুবতীকে গ্রেপ্তার করে ব়্যাব। পাপিয়ার অবৈধ কাজের সাথী স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরিও গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তইবা ও সাব্বির খন্দকার।
সূত্রের খবর, সাতজনকে ওই পাঁচতারা হোটেলের ঘরে আটকে রেখে মোটা অঙ্কের টাকায় তাদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন শামিমা নূর পাপিয়া। কোনও কাজ হাসিল করতে তিনি সুন্দরী তরুণীদের পাঠাতেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনোরঞ্জন করতে। গত তিন মাসে তিনি শুধু ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলেই বিল পরিশোধ করেছেন ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। ওই হোটেলের প্রেসিডেন্ট সুটটি সবসময় তাঁর নামেই বরাদ্দ থাকত। হোটেলটির বারে তিনি প্রতিদিন বিল মেটাতেন প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। অথচ বৈধভাবে পাপিয়ার বার্ষিক আয় মাত্র ১৯ লক্ষ টাকা।
[আরও পড়ুন: ‘বাবার খুনিরা মায়ের হাতের রান্নাও খেয়েছে’, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণায় আক্ষেপ হাসিনার]
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এনিয়ে অনুসন্ধান করেছিল ব়্যাবের একটি দল। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে শনিবার সকালে তড়িঘড়ি দেশত্যাগের চেষ্টা করেন নেত্রী পাপিয়া। তবে শেষরক্ষা হয়নি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩ সহযোগী-সহ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলন করে সবটা জানানো হয়। নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লিগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়ার প্রকাশ্য আয়ের উৎস মূলত গাড়ি বিক্রি ও সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা। তবে এর আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসা করতেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের কাছে পাওয়া গেছে সাতটি পাসপোর্ট, দু’লক্ষ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, প্রচুর জাল টাকা যার মধ্যে রয়েছে ভারত, শ্রীলংকা, মার্কিন ডলার ও সাতটি মোবাইল ফোন।
[আরও পড়ুন: বোন-বোনঝিকে সঙ্গে নিয়ে সেলফি, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হতেই ভাইরাল হাসিনার ছবি]
আরও জানা গিয়েছে, সমাজসেবার নামে পাপিয়া নরসিংদীর অনেক অসহায় নারীকে অনৈতিক কাজে লিপ্ত করে আসছিলেন। অধিকাংশ সময় তিনি নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে থাকতেন। সেখানে তাঁর ও তাঁর স্বামীর ব্যবসায়িক অংশীদারদের অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য নারী সরবরাহ করাই ছিল মূল কাজ। অবৈধ অস্ত্র-মাদক ব্যবসা ও তোলাবাজির মাধ্যমে তিনি অল্প সময়ে নরসিংদী ও ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের মালিক হয়েছেন। তিনি গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট নিজের নামে বুক করে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিলেন। সেখানে তার অধীনে থাকা সাত নারীর কথা জানতে পেরেছে র্যাব। তাদের তিনি প্রতি মাসে ৩০ হাজার করে টাকা দিতেন। দেশের পাশাপাশি থাইল্যান্ডে তার বারের ব্যবসা রয়েছে। বিপুল সম্পত্তির মালকিন আপাতত শ্রীঘরে।
The post ফি-দিন বারের বিল আড়াই লাখ টাকা! বিলাসী জীবনের আড়ালে অসামাজিক কাজে গ্রেপ্তার লিগ নেত্রী appeared first on Sangbad Pratidin.