সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নামেই যুদ্ধবিরতি! মনে করা হয়েছিল এবার হয়তো যুদ্ধের কালো মেঘ সরবে লেবাননের আকাশ থেকে। থামবে মৃত্যুমিছিল। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হচ্ছে না। দুপক্ষের মধ্যেই জারি রয়েছে সংঘর্ষ। গির্জায় লুকিয়ে ইজরায়েলি সেনাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে ইরানের মদতপুষ্ট হেজবোল্লা। তেল আভিভের পালটা মারে নিকেশ হয় সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় হেজবোল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল যুদ্ধবিরতি। বারুদে স্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা মধ্যপ্রাচে এই পদক্ষেপকেই আশার আলো হিসাবে দেখেছিল আন্তর্জাতিক মহল। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পেরতে না পেরতেই লেবাননে আছড়ে পড়ে ইজরায়েলের রকেট। সেই হামলা নিয়ে ইজরায়েলি সেনার দাবি ছিল, বাননই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে মাঝারি পাল্লার রকেট মজুত করছিল দক্ষিণ লেবাননে। তাই ‘বিপদে’র মোকাবিলা করতেই তেল আভিভ জবাব দিয়েছে। এএনআই সূত্রে খবর, গতকাল সোমবার ইজরায়েলের সেনাঘাঁটিতে হামলা চালায় হেজবোল্লা।
পালটা দিয়ে দক্ষিণ লেবাননের একটি চার্চে অভিযান চালায় ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। জানা গিয়েছে, ওই ধর্মীয়স্থানে ঘাঁটি গেড়ে লুকিয়ে ছিল হেজবোল্লার জেহাদিরা। সক্রিয়ভাবে সেখান থেকেই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাত তারা। এই খবর পেয়েই আঘাত হানে আইডিএফ। তাদের নিশানা করে চার্চ থেকেই গুলি চালায় জঙ্গিরা। কিন্তু ইজরায়েলি জওয়ানদের গুলিতে নিকেশ হয় হেজবোল্লার সদস্যরা। এনিয়ে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, "হামলা চালিয়ে হেজবোল্লা খুব বড় ভুল করেছে। ওরা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। ইজরায়েল এর কড়া জবাব দিয়েছে। আমরা যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে চাই। কিন্তু হেজবোল্লা যদি বারবার এমন করে আমরা উত্তর দিতে পিছপা হব না।"
গত ২৬ নভেম্বর যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেয় ইজরায়েলের মন্ত্রিসভা। এর পর নীতিগত ভাবে এই চুক্তি অনুমোদন করেন নেতানিয়াহু। জানানো হয়, আপাতত ২ মাসের জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে কোনও হামলা চালাবে না দুপক্ষ। পরিস্থিতি অনুযায়ী বাড়ানো হবে চুক্তির মেয়াদ। যুদ্ধবিরতির শর্তে বলা হয়, হেজবোল্লা ও অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠন ইজরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি হয়ে উঠবে না। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে, লেবানন নিজেদের এলাকা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েন করতে পারবে। লেবাননে হেজবোল্লা তাদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন নতুন করে তৈরি বা বাড়াতে পারবে না। যদি হেজবোল্লা বা অন্য কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইজরায়েলের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে ওঠে সেক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার থাকবে তেল আভিভের। কিন্তু এই যুদ্ধবিরতি যে নামেই তা প্রমাণিত হচ্ছে দুপক্ষের এই হামলা পালটা হামলায়।
উল্লেখ্য, গাজা যুদ্ধের মাঝেই গত জুলাই মাস থেকে সংঘাত তীব্র হয় ইজরায়েল ও হেজবোল্লার মধ্যে। ইজরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমির এক ফুটবল স্টেডিয়ামে আছড়ে পড়েছিল শিয়া জঙ্গি সংগঠনটির রকেট। হামলায় মৃত্যু হয় ১২ জনের। এই ঘটনাতেই আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ে। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে লেবাননে আক্রমণের ধার বাড়ায় ইজরায়েল। ২৭ সেপ্টেম্বর ইজরায়েলি সেনার অভিযানে নিহত হন হেজবোল্লার প্রধান হাসান নাসরাল্লা। কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর উত্তরসূরি হাশেম সাফেদ্দিনকেও খতম করে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। তার পর বিবৃতি দিয়ে নতুন সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে ৭১ বছরের নাইম কাসেমকে নির্বাচিত করে হেজবোল্লা। এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ইরানও। ক্রমশ উত্তেজনা বাড়ছে তেহরান ও তেল আভিভের মধ্যে। এর মাঝে এই যুদ্ধবিরতিকে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যে আশার আলো হিসাবেই দেখছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ফের সংঘাত শুরু হয়েছে লেবাননে।