অভিষেক চৌধুরী, কালনা: কচুরিপানায় (Water hyacinth) ভরা জলাশয় কে না পরিষ্কার করতে চায়। তাই টাকা খরচ করে কচুরিপানা তুলেও ফেলতে দেখা যায়। কিন্তু জানেন কি সেই অপ্রয়োজনীয় কচুরিপানায় তৈরি জিনিসেই সেজে উঠতে পারে আপনার বাড়ি? পূর্বস্থলী ১ ব্লকের ত্রিশ বছর বয়সি রাজু বাগ ইতিমধ্যেই কচুরিপানা দিয়ে তৈরি করছেন ঘর সাজানোর জিনিস। যা নজর কাড়ছে সকলের।
পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বড়কোবলা মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাজু বাগ। খুব ছোট বয়সেই বাবাকে হারান তিনি। তারপর থেকে মায়ের কাছেই বেড়ে ওঠা। ফলে আর্থিক অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। তা সত্ত্বেও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। ২০১৪ সালে বিশ্বভারতী থেকে ক্র্যাফট ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করেন রাজু। তারপরই দু’বছর কাজ করেন ভিনরাজ্যে। ফিরে এসে এলাকার মানুষজনকে নিয়ে কাজ করার কথা ভাবেন তিনি। তখনই তাঁর নজরে পড়ে যে, বাড়ির পাশে থাকা বাঁশদহ বিল ও বিভিন্ন জলাশয় পরিষ্কারের সময় কচুরিপানাগুলিকে তুলে ফেলে দেওয়া হয়। তখনই তিনি চিন্তাভাবনা শুরু করেন যে কীভাবে সেগুলিকে কাজে লাগানো যায়। এরপরই সিদ্ধান্ত নেন ঘর সাজানোর জিনিস তৈরির। যেমন ভাবনা তেমন কাজ।
[আরও পড়ুন: ২৩ লক্ষ টাকা দিয়েও মেলেনি টিকিট! আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি বিজেপি নেতারর্]
কচুরিপানা সংগ্রহ করে সেগুলিকে ভাল করে শুকিয়ে রিংয়ের মধ্যে ফেলে ঝুড়ি বোনার মতো করে বিভিন্ন ডিজাইনের ঝুড়ি, ম্যাট, ব্যাগ-সহ ঘর সাজানোর জিনিস তৈরি করেন রাজু। শুধু তাই নয়, তালপাতার ডাঁটে থাকা ফাইবারকে বুনে ফুল তোলার সাজিও তৈরি করেন তিনি। পাশাপাশি বিলের জলে ভেসে বেড়ানো ভেঙে যাওয়া ডোঙা নৌকোর কাঠ দিয়ে তৈরি করেন আকর্ষণীয় ট্রে, চামচ, হাতা-সহ ঘর সাজানোর অন্যান্য জিনিস। ওয়েস্ট পেপারকে ফেলে না দিয়ে, তা দিয়েও নানা সামগ্রী তৈরি করেন রাজু। যেমন ফেলে দেওয়া খবরের কাগজকে পচানোর পর সেটিকে আঠা দিয়ে জলাশয়ে থাকা শালুক ফুলের পাতার ধাঁচে তৈরি করেন।
শুধু শখেই নয়, এগুলি তৈরি করে দেশে বিদেশে বিক্রিও করছেন রাজু। এ বিষয়ে রাজু জানান, “শান্তিনিকেতন, হায়দরাবাদ, ঝাড়খন্ড, বিহার, বিশাখাপত্তনম-সহ আমেরিকার মতো দেশেও হস্তশিল্পের এই জিনিসগুলি বিক্রি করে লাভবানও হয়েছি। বেশ দামও মিলেছে।” যদিও এইসব সামগ্রী তৈরিতে কাঁচামাল সেইভাবে কিনতে হয় না বলেও জানান তিনি। শুধু পরিশ্রমটুকুই যা করতে হয়। রাজু বাগের কথায়, “করোনা আবহে বসে না থেকে এই ধরনের কুটির শিল্পের কাজ করতে থাকি। এলাকার যুবক-যুবতী থেকে মহিলারাও এই ধরনের কাজ করে লাভের মুখ দেখতে পারেন।” তাহলে আর অপেক্ষা কেন? আপনিও ঘর সাজাতে ব্যবহার করুন কচুরিপানার তৈরি সামগ্রী।