নিজস্ব সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: শুরু শীতের মরসুম। ভ্রমণ প্রিয় বাঙালি ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনাও শুরু করেছে। যাঁরা শহরের কোলাহল, যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পেতে প্রকৃতির কোলে গাছপালার মাঝে সময় কাটাতে চান, তাঁদের জন্য সুখবর! সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে লালগড় প্রকৃতি উদ্যান।
মাস তিনেক আগে অসামাজিক কাজের অভিযোগে বিষ্ণুপুরের লালগড় প্রকৃতি উদ্যানের গেটে তালা পড়েছিল। সেই কারণেই এবার সিসি ক্যামেরা ও তারের বেড়া লাগানো হয়েছে। সাধারণের নিরপত্তা জোরদার করার পর কিছুদিনের মধ্যেই পর্যটন মরশুমে পর্যটন ও সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে রয়েছে এই লালগড় প্রকৃতি উদ্যান। এখানে প্রবেশমূল্য ১০ টাকা। এই উদ্যানে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, রকমারি ফুলের বাগান, পরিখা, কৃত্রিম ভাবে তৈরি একটি গুহা, হরেক প্রজাতির আমের বন-সহ শিশুদের খেলার জায়গা। সারাবছরই ওই উদ্যানে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। এখানে কলেজ পড়ুয়া যুবক, যুবতীরাও প্রচুর সংখ্যায় আসেন।
কিন্তু মাস তিন আগে এই উদ্যানে কিছু যুবক, যুবতী অশ্লীল আচরণ করায় পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছিল। উদ্যানের পিছনের দিকে একাংশ জায়গায় কোনও বেড়া নেই। অভিযোগ, কিছু অসাধু লোক আপত্তিকর কিছু দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করে উদ্যানে আসা যুবক, যুবতীদের তা দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করছিল। এমনকী, সরকারি এই উদ্যানে প্রবেশমূল্য দিয়ে ঢোকা যুবক-যুবতীরা উদ্যান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে তাঁদের থেকে টাকা দাবি করছিলেন কয়েকজন। এছাড়াও কিছু তরুণ, তরুণীর নামে উদ্যানে ঢুকে অশ্লীল আচরণের অভিযোগ উঠেছিল। এসবের জেরেই সাময়িকভাবে লালগড় উদ্যান সবার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কিন্তু মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরে সারা বছর পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। ডিসেম্বর আসতেই বিষ্ণুপুরের রাসমন্দির, জোড়মন্দিরগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ভিনরাজ্য থেকে আসা পর্যটকরা। কাজেই পর্যটকদের জন্যই শীতের মরশুমে বিষ্ণুপুরের লালগড় উদ্যান ফের খুলে দিতে চাইছে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি। বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রেখা বাউরি বলেন, "পঞ্চায়েত সমিতির লালগড় প্রকৃতি উদ্যানে আড়াই মাস আগে এখানে কিছু সমস্যা তৈরি হয়। উদ্যানের পিছনে তারের যে বেড়া ছিল বেশ কয়েকজন অসৎ ব্যক্তি তা নষ্ট করে ভিতরে ঢুকে পড়ে। এছাড়াও উদ্যানে ঘুরতে আসা যুবক-যুবতীদের মোবাইলে ভিডিও করে তাঁদের ব্ল্যাকমেল করা হয়েছে বলে কিছু খবর আমরা পেয়েছিলাম। এসব কারণেই আমরা পঞ্চায়েত সমিতির থেকে উদ্যান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু পর্যটনের মরশুমে নিরাপত্তার কারণ উদ্যানে চার থেকে পাঁচটি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। উদ্যানের নষ্ট বেড়ার সংস্কার হচ্ছে। এর পরই উদ্যানের দরজা সাধারণের জন্য ফের খুলে দেওয়া হবে।"
পর্যটকদের একাংশ থেকে শুরু করে স্থানীয়রাও প্রশ্ন তুলছিলেন, কিছু অসাধু মানুষের কুকীর্তির জন্য কেন লালগড় প্রকৃতি উদ্যানের দরজা বন্ধ থাকবে? সেই দাবিকে মান্যতা দিয়ে সম্প্রতি বিষ্ণুপুরের বিডিও-র উপস্থিতিতে লালগড় প্রকৃতি উদ্যানকে নিরাপত্তার খাতিরে সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা ও উদ্যানের পিছনের খোলা দিকে বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষ্ণুপুরের বিডিও সোমশংকর মণ্ডল বললেন, "লালগড় প্রকৃতি উদ্যানে সাফাই কাজ হচ্ছে। ঢেলে সাজানো হচ্ছে উদ্যান। বিভিন্ন দিকে ৪-৫টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পিছন দিকে নষ্ট হয়ে যাওয়া তারের বেড়াও ফের লাগানো হবে। সব কাজ প্রায় শেষের দিকে। এর পরই উদ্যানটি ফের সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।"