ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: বেলেঘাটা আইডির পোস্ট কোভিড সমীক্ষার তথ্য বলছে, করোনামুক্তির পরে যত রোগী হাসপাতালের ক্লিনিকে এসেছেন, অর্ধেকের বেশি হৃদরোগ বা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় জেরবার। সদ্যপ্রয়াত গায়ক কে কে (Singer KK) কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না, স্পষ্ট নয়। কিন্তু শো করতে করতে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়া এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু– এই দু’য়ের একটা যোগসূত্র পাচ্ছেন রাজ্যের চিকিৎসকরা। গত দেড় বছর ফি সপ্তাহে একদিন করে পোস্ট কোভিড ক্লিনিকে প্রায় বারোশো রোগী ওখানে চিকিৎসা করিয়েছেন। তাঁদের অন্তত ২৫%-৩৫% হয় শ্বাসকষ্ট নয় হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছেন। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কার্ডিওথোরাসিক অ্যাডভাইসার ডাঃ প্লাবন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “করোনার পর মায়োকার্ডাইটিস হয়। হার্টের মাসলে ইনফ্লামেশন হয়। তাই বুকের বাঁদিকে সামান্য চিনচনে ব্যথা বা শ্বাস নিতে কয়েক মিনিটের অসুবিধা হলেই সময় নষ্ট না করে ইকো করে দেখা উচিত। কেননা আর্টারিতে রক্ত জমতে থাকার লক্ষণ আস্তে আস্তে প্রকট হয়।”
কে কে-কে প্রায় দু’ঘণ্টা বাদে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। একটু আগে নিয়ে গেলে চুয়ান্ন বছরের কি তরতাজা শিল্পীকে বাঁচানো যেত? চিকিৎসকদের বড় অংশ তেমনই মনে করছেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, স্টেজ শো থেকে হোটেল, আবার হোটেল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে পেরিয়ে গিয়েছে ‘গোল্ডেন আওয়ার’। সেটাই কাল হয়েছে। এসএসকেএমের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সরোজ মণ্ডলের কথায়, “লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে, হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। গোল্ডেন আাওয়ারের মধ্যে হাসপাতালে গেলে হয়তো বাঁচানো যেত। হৃদযন্ত্রের পেশিগুলো এক থেকে তিন ঘণ্টা সচল থাকে।”
[আরও পড়ুন:কাজের প্রতি অতিরিক্ত নিষ্ঠাই কি প্রাণ কাড়ল কেকে’র? কী বলছেন বিশেষজ্ঞ]
শো চলাকালীন শিল্পী ঘামে ভিজে গিয়েছিলেন। দীর্ঘক্ষণ স্টেজ শো করায় শরীরে পটাশিয়াম-সোডিয়াম ভারসাম্য টলে গিয়েছিল? ডাঃ সরোজ মণ্ডলের বিশ্লেষণ, “এমনটা না-ও হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক তীব্র হলে রোগী দরদর করে ঘামতে থাকে, গোটা শরীর ভিজে যায়। অসুস্থ বোধ করে, শীত করে।”
কী এই গোল্ডেন আওয়ার ?
হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার এক থেকে তিন ঘণ্টা।
কেন গোল্ডেন আওয়ার?
বিশেষত অ্যাটাকের প্রথম একঘণ্টা অত্যন্ত জরুরি। এই সময়ে হৃদযন্ত্রের পেশিগুলো সচল থাকে।
কী করণীয়?
এই সময়ের মধ্য়ে ইকো কার্ডিওগ্রাফি, ইসিজি করে দেখতে হবে, হার্টের ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধেছে কি না। বাঁধলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বা থ্রম্বোলাইসিস করে রক্ত বের করতে হবে।