কখন ফোঁটা ফোঁটা, আবার কখন ঘনঘন। আবার কেউ মুশকিলে পড়ে চাপতে না পারায় হয়ে
যায়। পঞ্চাশ পেরোলে ইউরিনের এই বেগতিক সমস্যার কারণ কী, প্রস্টেট? এসএসকেএম হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবাংশু সরকার তাই সাবধান করছেন। জিনিয়া সরকার।
বয়স বেড়েছে, শত সমস্যার মধ্যে প্রস্রাবের গতিতেও নানা রকম পরিবর্তন চোখে পড়ে। কারও বারবার যেতে হয় বাথরুমে, কেউ এক মুহূর্তের জন্যও প্রস্রাব চাপতে পারেন না, কারও আবার অজান্তেই লিক হতে থাকে। একটা বয়সের পর এমন সমস্যা কম-বেশি পুরুষ মানুষের থাকে। কিন্তু কেন এমন হয়? শুধু কি বয়সজনিত কারণ? ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত মানসিক চাপ কিংবা নিউরোলজিক্যাল কারণেও এমন হতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভোগেন প্রস্টেট (Prostate) গ্ল্যান্ড বড় হওয়ার কারণে। তবে বেশিরভাগ মানুষই সমস্যাগুলো প্রাথমিক অবস্থায় অবহেলা করেন। তাই লক্ষণ থাকলে প্রথমেই সতর্ক হোন, প্রস্টেটের সমস্যা নয় তো!
প্রস্টেটের সমস্যা মানেই অপারেশন?
অনেকেরই ধারণা প্রস্টেটের সমস্যা বা গ্ল্যান্ড বেড়ে যাওয়া মানে অপারেশনই একমাত্র সমাধান। প্রথম অবস্থাতে কোনও রোগী এলে তাকে প্রথমে ওষুধই দেওয়া হয়। তার আগে কিছু টেস্ট করে দেখা হয়। আল্ট্রাসাউন্ড, ইউরিন কালচার, পিএসএ টেস্ট ও ক্লিনিক্যাল কিছু টেস্ট করে দেখি প্রস্টেটের সাইজ কী। তার ভিত্তিতেই ওষুধ দেওয়া হয়।
৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হয় না, ওষুধেই কাজ হয়ে যায়। ওষুধ চালু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ বাদে আবার রোগীকে আসতে বলা হয়। যদি দেখা যায় ওষুধে একেবারেই কাজ হচ্ছে না তখন অপারেশন করে প্রস্টেটের বেড়ে যাওয়া অংশ বাদ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। প্রস্টেটে অপারেশনের পর প্রস্রাব ধরে রাখতে বা আনুষঙ্গিক কোনও সমস্যা হতে পারে বলে অনেকেরই ধারণা। তা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়।
অবহেলা ও অবজ্ঞা রোগকে জটিল করে
আসলে প্রস্টেট বড় হওয়ার কারণে মূত্রথলিতে চাপ সৃষ্টি করে। তখনই মূত্রত্যাগের ক্ষেত্রে নানা প্রকার অসুবিধা প্রকাশ পায়। কখন অবহেলা করা যাবে না?
সর্বপ্রথম প্রস্রাব করতে সমস্যা হবে। অনেকের আবার মূত্র ধরে রাখতে সমস্যা হয়। লিক করতে থাকে। কিংবা বেগ পেলে এক মুহূর্ত অপেক্ষা করার ক্ষমতা থাকে না। কারও কারও আবার মূত্রের বেগ পেলেও শুরুতেই মূত্র ঠিকমতো বেরোতে পারে না। ফ্লো ভাল থাকে না। থেমে থেমে মূত্র হয় ফলে অনেকক্ষণ সময় লাগে। তাই বারবার মূত্রের বেগ আসতে থাকে।
কাউকে আবার রাতে ঘুম থেকে উঠতে হয়, বারবার প্রস্রাব পেতে থাকে বলে। এই সমস্যার পোশাকি নাম ‘নকচ্যুরিয়া’। উল্লেখিত সমস্যাগুলি প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যার জন্যই হয়। এই ধরনের লক্ষণ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি না করে।
একেবারে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত এলে, বারবার প্রস্রাব লিক হতে থাকলে, কিডনি ফুলে থাকলে তখন চিকিৎসকের কাছে আসা মানে অনেকটাই দেরি হয়ে যাওয়া।
আসলে এই সমস্যার আড়ালে দায়ী অবহেলা। লজ্জায় অনেকেই লুকিয়ে যান। দেরি করলে ইউরিন মূত্রথলিতে জমে কিডনি ফুলে যেতে পারে ও তা থেকে রেনাল ফেলিওর হতে পারে।
বয়সের সতর্কতা
আজকের দিনে আধুনিক লাইফস্টাইল অনেকটা দায়ী এই প্রস্টেটের সমস্যার জন্য। তার সঙ্গে বংশগত হিস্ট্রি থাকলে প্রবণতা আরও বেশি থাকে।হেলদি লাইফস্টাইলের সাথে অসুবিধার উপসর্গের দিকে সজাগ থেকে সময়ে সময়ে চেক আপ করে যেতে হবে। গড়িমসি করলে রোগ গোপনে বাড়তে থাকবে। আর ওজন, প্রস্টেটের সমস্যার জন্য দায়ী। তাই শরীরে মেদ জমতে দেওয়া চলবে না। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে সাবধান হতে হবে। ফিট থাকতে নিয়মিত এক্সারসাইজ ও হাঁটাহঁাটি দরকার।
প্রস্টেটের সমস্যা মানেই কি ক্যানসারের সম্ভাবনা?
প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বেড়ে যাওয়া মানেই যে তা ক্যানসারের (Prostate Cancer) পূর্বাভাস তা একেবারেই নয় । স্বাভাবিক প্রস্টেটেও ক্যানসার হতে পারে। প্রস্টেট ক্যানসারের সম্ভাবনা সাধারণত ৫০ বছর বয়েস পর থেকেই বাড়ে।
আর যাদের পারিবারিক হিস্ট্রি রয়েছে প্রস্টেট ক্যানসারের তাদের এই ধরনের লক্ষণ থাকলে বেশি সতর্ক
হতে হবে। আর তাদের ৪০ বছর বয়সের পর স্ক্রিনিং জরুরি।
ইউরিনের সমস্যা আর যে কারণে হয়
প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বেড়ে গেলে বয়সকালে এই সমস্যা হয়। সাধারণত ৫০ ঊর্ধ্ব হলে তখন শুরু হয় কষ্ট। আর যাদের বংশে কারও যেমন বাবা, দাদু কিংবা ভাই-দাদার প্রস্টেটজনিত সমস্যা থাকে তাদেরও এই কারণে ইউরিনজনিত সমস্যা হতে পারে। আর যদি অল্প বয়সে অর্থাৎ ৩০-৪০ বছর বয়সিরা কেউ এই লক্ষণ নিয়ে আসেন তখন দেখা হয় কিডনিতে স্টোন, ইউরেথাল স্ট্রিকচার বা মূত্রনালি কঠোরতা ইত্যাদি রোগ রয়েছে কি না। বয়স যা-ই হোক মূত্রত্যাগের ক্ষেত্রে কোনও রকম অস্বাভাবিকতা চোখে পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।