রমেন দাস: প্যানক্রিয়াসের মাথায় পেল্লায় টিউমার! তারপর কেটে বাদ! ধারে-ভারে এদেশ তো বটেই পৃথিবীতেও এমন জিনিস দেখা গিয়েছে কিনা নিশ্চিত নন চিকিৎসকরাই! এমনই এক ভয়ংকর টিউমার বাদ দিয়ে নজির স্থাপন করলেন কলকাতার এসএসকেএম পিজি হাসপাতালের (SSKM Hospital) চিকিৎসকরা। ৩৭ বছরের মহিলাকে বাঁচিয়ে রেকর্ড গড়লেন সরকারি হাসপাতালের গ্যাসট্রোইন্টেস্টিনাল সার্জারি( Gastrointestinal GI Surgery) বিভাগের চিকিৎসকরা। কিন্তু একাধিক অস্ত্রোপচারের মধ্যে কেন কঠিন এই বিষয়টি? কেন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন চিকিৎসকরা?
হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই ধরনের টিউমার প্যানক্রিয়াসের (Pancreas) ‘মাথা’য় হয়, কিন্তু শরীরের ওই অংশের যেকোনও জায়গাতেই এই টিউমার দেখা যেতে পারে। প্যানক্রিয়াসের এই টিউমার প্যানক্রিয়াসের যেকোনও জায়গায় হতে পারে। কিন্তু প্যানক্রিয়াসের ‘মাথা’য় এই টিউমার হলে তার অস্ত্রোপচার খুবই জটিল বলে দাবি চিকিৎসকদের। যে অস্ত্রোপচারের নাম বলা হয় ‘হুইপল অপারেশন’। টিউমারের আয়তন বড় হলে জটিলতা আরও বাড়ে!
তবে এসএসকেএম হাসপাতালে এমন ধরনের টিউমারের অস্ত্রোপচার আগে হলেও এই টিউমারটির আয়তন এবং ওজন সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ড ! প্রায় ২ কেজির অনেক বেশি ওজন এবং ২০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, ১৬ সেন্টিমিটার প্রস্থের এই টিউমার বিশ্বে আর কতগুলো দেখা গিয়েছে, তা নিয়ে স্পষ্ট তথ্য জানাতে পারছেন না চিকিৎসকদেরই একটা বড় অংশ! সেই সূত্রেই এই রেকর্ডের কথা বলছেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার ওই বাসিন্দা বেশ কিছুদিন আগে পেটে ব্যথা নিয়ে পিজি হাসপাতালে আসেন। এর সঙ্গেই একাধিক উপসর্গ দেখা যায় তাঁর শরীরে। চিকিৎসকরা এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। দেখা যায়, ওই মহিলার পেটের প্যানক্রিয়াসের মাথায় ‘দানব’ এই টিউমার রয়েছে। ধারে-ভারে যা ভয়ংকর!
চিকিৎসা পরিভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয়, ‘সলিড সিউডোপ্যাপিলারি এপিথেলিয়াল নিওপ্ল্যাজম প্যানক্রিয়াস অথবা এসপিইএন’ (SPEN)। শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী এই ধরনের রোগে অত্যন্ত সংকটজনক হতে পারেন রোগী। সবদিক মাথায় রেখে এসএসকেএম হাসপাতালের গ্যাসট্রোইন্টেস্টিনাল সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তুহিনশুভ্র মণ্ডলের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার হয় গত ১২ সেপ্টেম্বর। প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে চলে দীর্ঘ ওই অস্ত্রোপচার। এই কাজে ছিল একাধিক সমস্যা! রোগী বাঁচানোর ওই দলে ডাঃ তুহিনশুভ্র মণ্ডলের সঙ্গে ছিলেন ওই হাসপাতালেরই গ্যাসট্রোইন্টেস্টিনাল বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ সুমন দাস, ডাঃ হেমাভ সাহা, ডাঃ স্বপ্নিল সেন। ছিলেন সার্জন স্বর্ণালী দত্ত। অন্যদিকে অ্যানাস্থেসিয়ার ডাঃ (অধ্যাপক) তাপস ঘোষ, ডাঃ সৈকত ভট্টাচার্য, ডাঃ দিব্যেন্দু গড়াইদের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয় এই অস্ত্রোপচার। চিকিৎসকরা বলছেন, আপাতত স্থিতিশীল রয়েছেন ওই রোগিনী।
এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক তুহিনশুভ্র মণ্ডল বলছেন, ‘বাংলা তো বটেই, দেশেও এমন ঘটনা ঘটেনি হয়ত। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বলতে পারেন! আমরা জানতাম এমন অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি রয়েছে। মারাত্মক বিপদ হতে পারে রোগিণীর। কিন্তু এসএসকেএম হাসপাতালের এই বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে আমি গর্বিত, এমন কাজ সফলভাবে আমরা সকলে মিলে সম্পন্ন করতে পেরেছি বলে।’
