নব্যেন্দু হাজরা: ট্র্যাডিশনাল সন্দেশ, জলভরা, লবঙ্গলতিকা, নাকি থিমের স্বর্ণলেখা, কুমকুম, অমৃতকুম্ভ, ক্রাঞ্চি অরিও বাইট! মিষ্টির দোকানের শোকেসে মঙ্গলবার সকাল থেকেই জায়গা পেয়েছে হরেক ফ্লেভারের চোখ জুড়ানো মিষ্টি। চকোলেট থেকে ম্যাঙ্গো, স্ট্রবেরি, লিচু, কোন স্বাদ নেই সেই তালিকায়! শহর থেকে জেলা- দোকানে দোকানে ভিড় উপচে পড়া। দেদার বিকোচ্ছে রংবেরঙের ভাইফোঁটার বিশেষ গজা, খাজা। তা হলে থিমের মিষ্টির ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে ট্র্যাডিশনাল সন্দেশ, রসগোল্লা! ভাইয়ের আতিথেয়তায় কি দিদিরা আধুনিক মিষ্টিকেই বেছে নিচ্ছেন?
মিষ্টি বিক্রেতারা কিন্তু বলছেন না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিত্যনতুন মিষ্টি তাঁরা ফোঁটার সময় নিয়ে এলেও ট্র্যাডিশনাল মিষ্টির বিক্রিই বেশি। অন্য সব মিষ্টির পাশাপাশি এইদিন ভাইয়ের পাত সাজাতে ভাইফোঁটা সন্দেশ, শুভদীপ (ভাইয়ের কপালে বোনের আঙুল) সন্দেশের সবথেকে বেশি বিক্রি। সেই সঙ্গে আছে ফোঁটা স্পেশ্যাল বিভিন্ন ধরনের গজা। রংবেরঙের রসের মিষ্টি। যা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। তাই ছোট, বড়, মাঝারি— সব দোকাদারদের মুখে একটাই কথা, “যতোই নতুন থাক, ভাইফোঁটার দিনে এখনও চিরাচরিত মিষ্টির চাহিদা বেশি।”
[আরও পড়ুন: ভাইয়ের ব্লাডসুগার? চিন্তা নেই, সুগার ফ্রি মিষ্টিতেই জমে যাক ভাইফোঁটা, রইল সহজ রেসিপি]
পঞ্জিকা অনুযায়ী ২৬ অক্টোবর দুপুর ২.৪২ মিনিট থেকে দ্বিতীয়া তিথি শুরু হচ্ছে। যা ২৭ অক্টোবর ১২.৪৫ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। অর্থাৎ বুধ এবং বৃহস্পতিবার এই দুই দিনই দ্বিতীয়া তিথি থাকবে। মিষ্টির দোকানও সেজেছে নানা ফ্লেভারের মিষ্টিতে। ‘‘আসলে প্রত্যেকে দিদিই তো চান সেরা মিষ্টিটা তাঁর ভাইয়ের পাতে তুলে দিতে’’–মঙ্গলবার জানান কে সি দাসের কর্ণধার ধীমানচন্দ্র দাস। বলেন, ‘‘ভাইফোঁটা উপলক্ষে আমের অমৃতকুম্ভ, মহারাজভোগ, লবঙ্গলতিকা, রসমালঞ্চ, ভাইফোঁটা সন্দেশ, শুভদীপ সন্দেশের মতো নানা মিষ্টি তৈরি হয়েছে। আধুনিক মিষ্টির বিক্রি যেমন হচ্ছে, তেমনই ফোঁটার দিন সবথেকে বেশি বিকোয় ট্র্যাডিশনাল ভাইফোঁটা সন্দেশের।’’
হাওড়ার ব্যাতাই মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে এবার ১১ রকম নতুন মিষ্টি তৈরি হয়েছে ফোঁটা উপলক্ষে। দোকানের মালিক সৈকত পাল জানান, প্রতিবারই আমরা এই দিনে নতুন ফিউশান মিষ্টি নিয়ে আসি। সারা বছর সেটা বিকোয়। তার মধ্যে এবার স্ট্রবেরি ডিলাইট চমচম যেমন আছে তেমনই আছে বেকড চকোলাভা সন্দেশ। তবে এসবের বিক্রির পাশাপাশি ভালই বিক্রি চিরাচরিত মিষ্টির।
এদিন সন্ধের পর থেকেই মিষ্টির দোকানগুলোয় ছিল উপচে পড়া ভিড়। মুহূর্তে হয়ে গিয়েছে শোকেস ফাঁকা। বলরাম মল্লিক-রাধারমণ মল্লিকেও চিরাচরিত এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় নানা নতুন ধরনের আইটেম আনা হয়েছে এবার। তবে সেখানেও ভাইফোঁটা সন্দেশের বিক্রি বেশ ভাল। হিন্দুস্তান সুইটসের কর্ণধার রবীন্দ্রকুমার পাল বলেন, ‘‘পুজোয় যেমন মানুষ নতুন জামা কেনে। তেমনই ফোঁটায় দিদিরা নতুন ধরনের মিষ্টি খোঁজেন। এবার আমরা যেমন বেকারি কিশমিশ, স্বর্ণলেখা, কুমকুম মিষ্টি এনেছি। তবে এসবের পাশাপাশি সবথেকে বেশি ওই ভাইফোঁটা সন্দেশ বিক্রি হয় এইদিনে।’’