রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: কথায় বলে, হাতি কাদায় পড়লে ব্যাঙেও লাথি মারে! কিন্তু এক্ষেত্রে হাতি নয়, কাদায় পড়ে গিয়েছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের একটি গণ্ডার শাবক। আর ৭০০ কেজি ওজনের সেই গণ্ডার শাবককে কাদা থেকে উদ্ধার করে রীতিমতো নজির তৈরি করলেন জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বনকর্মীরা। যদিও উদ্ধার হওয়া শাবকের আঘাত বেশ ভালোই, এখনও সে উঠে দাঁড়াতে পারছে না। জখম সেই গণ্ডারের চিকিৎসা চলছে। তবে কাদা থেকে শাবককে উদ্ধারের কাহিনি আপাতত স্থানীয় মানুষদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে।
কাদায় পড়ে যাওয়া গণ্ডারকে উদ্ধার বনকর্মীদের। নিজস্ব ছবি।
জানা গিয়েছে, গত ১৪ আগস্ট জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের (Jaldapara National Forest) চিরা খাওয়া নদীর কাছে জলকাদার মধ্যে একটি গণ্ডার শাবককে আটকে থাকতে দেখেন বনকর্মীরা। পরের দিন গণ্ডারটিকে উদ্ধার করা হয়। কীভাবে হল উদ্ধারকাজ? বনদপ্তর সূত্রে খবর, ঘুমপাড়ানি গুলি করে প্রথমে কাদাতেই কাবু করা হয় গণ্ডার (Rhinoceros) শাবককে। তার পরে তাকে বড় শক্ত কাঠের মাচায় তুলে কাঁধে করে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ মিটার দূরে নিয়ে গিয়ে খাঁচায় পুরে দেওয়া হয় গণ্ডার শাবকটিকে। সেখান থেকে গাড়িতে করে খাঁচা ভর্তি গণ্ডারকে আনা হয় চিকিৎসালয়ে। সেখানে লোহার ফেন্সিং দেওয়া জায়গায় সেই গণ্ডার শাবকের চিকিৎসা (Treatment) চলছে।
[আরও পড়ুন: আর জি করের নিরাপত্তার দায়িত্বে কেন্দ্রীয় বাহিনী, ‘সুপ্রিম’ নির্দেশ পেয়ে পৌঁছল CISF]
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারী বন্যপ্রাণী সহায়ক নবজিৎ দে-র কথায়, “এছাড়া আমাদের কাছে আর অন্য কোনও উপায় ছিল না। তার কারণ, যে স্থানে গণ্ডার শাবকটি আটকে ছিল সেখানে কোনও গাড়ি পৌঁছাতে পারছিল না। সেখান থেকে কাঁধে বয়ে আনা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। ঘুম পাড়ানি গুলি করার কিছুক্ষণ পরেই বুনো জন্তুদের অ্যান্টিডট (Antidot) দেওয়া হয়। অ্যান্টিডট দেওয়ার পরে বুনোদের হুঁশ ফেরে। আর হুঁশ ফিরলেই সে ছটফট করতে থাকে। সেই কারণে লোহার খাঁচায় ভরে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার স্থানে আনা হয়েছে।“ কিন্তু গণ্ডারটি উঠে দাঁড়াতে পারছে না কেন? জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, গণ্ডার শাবকটি স্ত্রী লিঙ্গের। বয়স তিন থেকে চার বছর। এই সময়ে সাধারণত মা গণ্ডারের মিলনের সময় হয়ে ওঠে। আর সেই কারণে মা গণ্ডারের পিছনে একাধিক পুরুষরা ঘুর ঘুর করতে শুরু করে। কিন্তু শাবক এই সময় মাকে ছাড়তে চায় না। আর সেই কারণে মাঝে মধ্যেই পুরুষ গণ্ডাররা শাবককে আক্রমণ করে। সেভাবেই কোনও পুরুষ গণ্ডারের আক্রমণে শাবকটি জখম হয়েছে বলে ধারণা বন কর্তাদের। তবে গণ্ডার শাবকের শরীরের বাইরের অংশে কোনও জখমের (No injury) চিহ্ন নেই।
[আরও পড়ুন: অভিশপ্ত রাতে সঞ্জয়ের ‘ফোন সঙ্গী’, CBI স্ক্যানারে সেই পুলিশকর্মী, ক্যামেরা দেখেই দে দৌড়]
বনকর্তারা আরও জানাচ্ছেন, আঘাত পেলেই বুনোরা স্বস্তির জন্য জলে গিয়ে নামে। এভাবেই হয়তো গণ্ডার শাবকটি কাদায় গিয়ে বসেছিল। তার সেখানেই আটকা পড়ে যায়। তাহলে কী প্রাণে বেঁচে উঠতে পারবে এই গণ্ডার শাবক? বনকর্তারা জানাচ্ছেন সম্ভাবনা ৫০/৫০। যদিও এই গণ্ডার শাবক বেঁচে যায়, তাহলে তাদের বিচরণভূমিতে ইতিহাস হয়ে থাকবে। সেই ইতিহাসের অপেক্ষায় এখন প্রহর গুনছেন জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বনকর্মীরা। রাত জেগে তাঁরা পাহারাও দিচ্ছেন চিকিৎসারত গণ্ডার শাবককে।