অসিত রজক, বিষ্ণুপুর: অগ্নিমূল্যের বাজারে হাত ছোঁয়ানো বেশ মুশকিল। মাথা পিছু যা বরাদ্দ রয়েছে তাতে ইচ্ছা থাকলেও বিভিন্ন সবজি রান্না করার উপায় নেই। তা বলে কি শীতের মরশুমে পড়ুয়াদের পাতে সবজি পড়বে না? সেই ভাবনা আসতেই বিষ্ণুপুর ব্লকের মড়ার পঞ্চায়েতের মড়ার সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যালয়ে তৈরি করা হয়েছে সবজির বাগান। কি নেই সেই বাগানে? রয়েছে পেঁপে, মুলো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, কাঁচালঙ্কা থেকে নানা মরশুমে শাক, বেগুন, সীম,বরবটি, ক্যাপসিকাম। পড়ুয়াদের হাতের ছোঁয়ায় গড়ে উঠেছে বাগান। পরিচর্যায় বাগানের গাছে ধরছে বিভিন্ন সবজি।
তবে এই বছরই প্রথম না। বিগত প্রায় ১০বছর ধরে সবজির বাগান রয়েছে এই বিদ্যালয়ে। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের যৌথ পরিচর্যায় এই সবজি বাগানটি ক্রমশই শস্য-শ্যামলা হয়ে উঠছে। বাগানে মুলো তুলতে তুলতে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মন্দিরা সরেন জানায়, "স্কুলের বাগান থেকে সবজি তুলে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। ফলে মিড ডে মিলের খাবারে অনেক রকমের সবজি আমরা পাই। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও আমরা ছাত্রছাত্রীরা মিলে এই বাগান তৈরি করেছি।"
বাগান পরিচর্যার জন্য প্রতিদিন ৩-৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ১৫-১৬ জন পড়ুয়াদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক দিন পালা করে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা বাগান পরিচর্যা করে। সঙ্গে থাকেন শিক্ষকরাও। ফুলকপি গাছের গোড়ায় মাটি দেওয়ার সময় দশম শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ আরিফুল বায়েন জানাচ্ছেন, "বাজারে এখন যে সমস্ত সবজি পাওয়া যায় সবই ক্ষতিকারক কীটনাশক দেওয়া। সেই কারণেই আমরা স্কুলে থাকা এই বাগান তৈরি করেছি। স্কুল শুরুর আগে, টিফিনে ও ছুটির পরে এই বাগান পরিচর্যা করা হয়।"
স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, "অর্থের অভাবে সব সময় দামি সবজি কেনা সম্ভব হয় না। তাছাড়া বাজারি সবজিতে নানা রকম ক্ষতিকারক কীটনাশক থাকে, যা শিশুদের ক্ষেত্রে খুবই বিপজ্জনক। তাই স্কুলের ভেতরে উৎপন্ন এই সবজি মিড-ডে মিল রান্নায় ব্যবহার করা হয়।" তিনি আরও বলেন, "আমাদের স্কুলে প্রতিদিন প্রায় ৬৫০ ছাত্র ছাত্রীরা মিড ডে মিল খায়। বাজারে এমনিতেই সবজির দাম অনেক। তাই এত ছাত্র-ছাত্রীদের সুষ্ঠুভাবে খাওয়াতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের। এই সবজির বাগান সে অভাব মিটিয়েছে। সপ্তাহে ছদিনই আলাদা তরকারি পায় পড়ুয়ারা।"