শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: অশান্ত ওপার বাংলায় প্রায় বন্ধ দেবী দুর্গার ষষ্ঠ রূপ কাত্যায়নী দেবীর আরাধনা। তবে সেই ঐতিহ্য মাথায় রেখে দেবীর আরাধনায় সামিল হয়েছেন রায়গঞ্জবাসী। মায়ের কাছে তাঁদের একটাই প্রার্থনা দ্রুত স্বাভাবিক হোক ওপার বাংলার পরিস্থিতি।
ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার আগে থেকে পদ্মপারের মানিকগঞ্জের টেপুগ্রাম, চাপাই গ্রাম-সহ আশেপাশের এলাকায় দেবী কাত্যায়নীর আগমন ঘিরে নতুনরূপে জেগে উঠতেন হিন্দুরা। পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশেও শরতের দুর্গাপুজোর বদলে হেমন্তকালের কাত্যায়নী দেবী আরাধনাই বেশি দেখা গিয়েছে। এতকাল আগে আচার উপাচার পালনে সাধারণের উৎসাহে একচুলও ভাটা পড়েনি। কিন্তু গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে পরিস্থিতির বদল ঘটেছে। অশান্ত হয়ে রয়েছে কাঁটাতারের ওপার বাংলাদেশে। বেছে বেছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠছে। সেই আবহে প্রাণে বেঁচে থাকাই অনিশ্চিত সেখানে দেবীর পুজোর আয়োজন প্রায় অসম্ভব বলেই মনে ওপার বাংলার হিন্দুরা। একাধিক সূত্রে এমনটাই খবর।
তবে শতাব্দী প্রাচীন রীতি আচার মেনে কাত্যায়নী দেবীর পুজোয় মেতেছে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ। রবিবার সপ্তমীর সাতসকালে রূপাহারের বাড়ির উঠোনের সামনে ঠাকুর দালানে অধিষ্ঠিত দেবী কাত্যায়নীর মৃন্ময় মূর্তির সামনে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বিরানব্বই বছরের বরদাকান্ত চক্রবর্তী বলেন, "আমাদের পরিবারে প্রথম কাত্যায়নী পুজো হয়েছিল বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের টেপুগ্রামে। তখন আমার বয়স মাত্র দশ বছর। তার পর থেকে প্রতিবছরই পুজো হয়। কিন্তু অত্যাচারে দেশ ছাড়তে বাধ্য হই। কিন্তু ওপার বাংলায় শরিকরা পুজো করতেন। কিন্তু এবার বাংলাদেশে কোনও আত্মীয় পুজো করতে পারেনি।"
অন্যদিকে, পুজো উপলক্ষে শ্বশুরবাড়ি থেকে রায়গঞ্জের বাবার বাড়িতে এসে বুদ্ধদেব রায়ের মেয়ে লক্ষ্মী তরফদার বলেন, "আমার বেশ মনে আছে, বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের কাত্যায়নী পুজো। কিন্তু জানতে পেরেছি এবার পুজো ওপারে বন্ধ।" পরিবারের জামাই জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, "পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য মেনেই পুজো হচ্ছে। আমাদের বাড়িতে কাত্যায়নী দেবীর হাতে শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি রয়েছে।" যুক্তি হিসাবে রায়গঞ্জ হাইরোড এলাকার বাড়িতে কাত্যায়নী পুজোর আয়োজক মঞ্জু সাহা বলেন, "আসলে দেবীদুর্গা হেমন্তকালে দেবী কাত্যায়নী রুপে ফিরে আসেন। এখানে বৃন্দাবনের সখীরা শ্রীকৃষ্ণকে পাওয়ার জন্য কাত্যায়নীর আরাধনা করতেন। সেই থেকে কাত্যায়নীর হাতে শ্রীকৃষ্ণ মূর্তি।"
শনিবার ষষ্ঠীতে বোধন হয়ে আজ রবিবার সপ্তমী ও অষ্টমী পুজো সম্পন্ন হয়েছে। এই পুজোকে ঘিরে সেজে উঠেছে গোটা রায়গঞ্জ। একাধিক জায়গায় ভোগ আয়োজন করা হয়েছে।