রমেন দাস: দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশের গোপালনগর, বেড়াবেড়ি, বাজেমেলিয়া, খাসেরভেড়ির একরের পর একর পড়ে থাকা জমির মধ্যেই আজও নির্বাচন-প্রশ্নের হাওয়া ওঠে নিরন্তর! ভোট আবহে বারবার উঠে আসে শিল্পায়নের কথাও। আর সেই শিল্পের সম্ভাবনাকে হাতিয়ার করেই ফের মাঠে নেমেছে বিজেপি। হুগলির বিজেপি (BJP) প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের (Locket Chatterjee) ভোটপ্রচারে উঠে আসছে, আগে না হলেও এবার! তিনি বলছেন, ''শিল্পায়ন করতেই হবে, রাজ্যের যুবকদের কাজ দিতে প্রয়োজন শিল্পায়ন।'' গত ৫ বছরে রাজ্য সরকারের 'অসহযোগিতা'র অভিযোগে ভর করে, অভিনেত্রী-সাংসদের দাবি, ''দেখবেন এই সিঙ্গুরেই (Singur) শিল্প হবে। পড়ে থাকা জমিতে আলোচনার মাধ্যমে ফের শিল্পায়ন দেখবেন সাধারণ মানুষ।'' শুধু তাই-ই নয়, প্রচার-পথে লকেট বলছেন, ''সিঙ্গুরে শিল্প আনবেন নরেন্দ্র মোদিজি। রাজ্যে বিজেপি ৩০ লোকসভা আসন জিতবে, ২০২৬ পর্যন্ত মমতার সরকার থাকবে না হয়তো, তখন সেই টাটাকেই সিঙ্গুরে ফেরাবেন প্রধানমন্ত্রী।''
যদিও লকট-উবাচে প্রশ্নও উঠেছে একাধিক। বিজেপির মূল প্রতিপক্ষ তৃণমূল বলছে, এতদিন কী করেছেন লকেট, কোথায় ছিলেন তিনি? কেন কেন্দ্রে বিজেপি সরকার থাকলেও লকেট চেষ্টাই করেননি! পালটা বিজেপি সাংসদের সময়ে 'অনুন্নয়ন' খোঁচাও দিয়েছেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় (Rachna Banerjee) ।
যদিও লকেটের আশ্বাসে-বিশ্বাসে চিঁড়ে ভিজবে কি ভিজবে না, এই প্রশ্নের মধ্যেই সিঙ্গুরের জনতা বলছেন, শিল্প হলে এই অঞ্চলের ভোল বদল হতো, বহু কিছু পরিবর্তন হত। ঘাসজমিতে ধ্বংসাবশেষ দেখতে হত না, কিন্তু জমি অধিগ্রহণেও যে বহু মানুষের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল, একথাও মানছেন অনেকেই।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১৮ মে সিঙ্গুরে ছোট গাড়ি তৈরির প্রকল্প ঘোষণা করেন রতন টাটা। ২৫ মে থেকে ৯৯৭ একর কৃষিজমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। তার নেতৃত্বে ছিল বিরোধী তৃণমূল। সিঙ্গুরের 'অনিচ্ছুক' কৃষকদের জমি ফেরানোর দাবিতে ২৬ দিন ধর্মতলায় অনশন-অবস্থান করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) । ফের ২৪ আগস্ট থেকে টানা ১৫ দিন দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে অবস্থান করেন মমতা। ৩ সেপ্টেম্বর সিঙ্গুরে কারখানা নির্মাণের কাজ স্থগিত করে 'টাটা মোটরস' (Tata Motors) । ৩ অক্টোবর সিঙ্গুর থেকে প্রকল্প সরানোর কথা ঘোষণা করেন টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার। ৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়, ন্যানো (Tata NANO) কারখানার পরবর্তী গন্তব্য নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাতের সানন্দে।