নন্দন দত্ত, সিউড়ি: করোনার কোপে গত দু’বছর তারাপীঠে (Tarapith) বন্ধ ছিল কৌশিকী অমাবস্যার উৎসব। বন্ধ ছিল মন্দিরের দরজা। স্বাভাবিকভাবেই এবার কৌশিকী অমাবস্যায় বিপুল ভিড় হতে চলেছে সেখানে। লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর ভিড় হতে চলেছে তারাপীঠে। আর এই উৎসবের আগেই আকাশ ছুঁয়েছে তারাপীঠের হোটেল ভাড়া। একদিনের জন্য মিলছে না হোটেলের ঘর। অন্তত তিনদিনের জন্য বুক করতে হচ্ছে হোটেল। আর সেই বুকিংয়ের জন্য খসাতে হচ্ছে মোটা টাকা।
তারাপীঠে প্রায় ৪০০ হোটেল রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, কোথাও নন এসি রুমের তিনদিনের ভাড়া ৭ হাজার তো কোথাও আবার এসি রুমের ভাড়া পড়ছে ২০ হাজার টাকা। খাতায় কলমে এই ভাড়ার কথা বলা হলেও সময় এবং হোটেল ভেদে নন এসি রুমের ভাড়া পড়ছে প্রায় দ্বিগুণ। এসি রুমের ভাড়া দাঁড়াচ্ছে অন্তত ২৫ হাজার। যা দেখে মাথায় হাত পড়েছে পুণ্যার্থীদের। যদিও এই অতিরিক্ত ভাড়ার কথা অস্বীকার করেছে তারাপীঠের প্রশাসন এবং হোটেল অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ।
[আরও পড়ুন: মাথায় গেঁথে ছিল ৮ ইঞ্চির লোহার রড, বারাসত হাসপাতালে জটিল অস্ত্রোপচারে প্রাণ বাঁচল প্রৌঢ়ার]
এবার শুক্রবার পড়েছে কৌশিকী অমাবস্যার উৎসব। স্বাভাবিকভাবেই সপ্তাহন্তের ছুটিকে অর্থাৎ শনি এবং রবিবারকে কাজে লাগিয়ে তারাপীঠে জমায়েত করছেন ভক্তরা। গত দু’বছরের খরা কাটিয়ে বিপুল ভিড়ের প্রত্যাশায় হোটেল ব্যবসায়ীরা। প্রায় ৫ লক্ষ ভক্তের জমায়েত হতে পারে বলে মনে করছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। সেই প্রেক্ষিতে তারাপীঠ রামপুরহাট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, জেলা প্রশাসন এবং হোটেল কর্তৃপক্ষ একটি যৌথ বৈঠক করে। সেই বৈঠকে এই উৎসব উপলক্ষে হোটেল ভাড়া কিছুটা বেশি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি ঠিক করা হয়, পর্যটকদের ন্যূনতম তিনদিনের জন্য হোটেল ভাড়া নিতে হবে। যেহেতু ২৬ এবং ২৭ আগস্ট কৌশিকী অমাবস্যা পড়েছে। তাই পর্যটকরা ২৪, ২৫, ২৬ আগস্ট অথবা ২৫-২৬-২৭ তারিখের জন্য হোটেল ভাড়া করতে হবে।
উৎসবের আবহে তারাপীঠের হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া প্রসঙ্গে সেখানকার হোটেল মালিক তথা সেবায়েত পুলক চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যার যেমন হোটেলের ঘর পছন্দ। পর্যটকরা সেই অনুযায়ী ভাড়া দেবেন। তবে কাদের কত রেট হবে তা পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত করা হবে। ন্যূনতম ৭ হাজার টাকা ভাড়া দিতেই হবে। হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা হোটেল মালিক সুনীল গিরি বলেন, তিনদিনের জন্য ঘর ভেদে ভাড়া ন্যূনতম ১১ হাজার, ১৫ হাজার এবং ২০ হাজার টাকা। তবে পর্যটকদের অভিযোগ, ঘর পাওয়া না গেলে চাহিদা অনুযায়ী ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। যদিও সুনীল গিরির দাবি, এরকম অভিযোগ তাঁরা পাননি। এদিকে রামপুরহাটের মহকুমা শাসক সাদ্দাম নাভাস জানান, বৈঠকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয় সিদ্ধান্ত হলেও কোনও নির্দিষ্ট ভাড়া বেঁধে দেওয়া হয়নি।
[আরও পড়ুন: কেন বারবার দুর্ঘটনার কবলে শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়? গুঞ্জনের মাঝেই সরানো হল মারিশদা থানার ওসিকে]
উল্লেখ্য, ২৫ তারিখ রাত পর্যন্ত তারাপীঠে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারবেন পর্যটকরা। ২৬ তারিখ ভোর থেকেই আর পর্যটকদের গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হবে না। তারাপীঠ মন্দির চত্বর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাকি পথ হেঁটেই যেতে হবে। কোনও পর্যটক যদি হোটেলেও থাকেন, তার জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য। বুধবার সকালে মহকুমা শাসক, এসডিপিও ধীমান মিত্র মূল রাস্তা থেকে মন্দির পর্যন্ত রাস্তার দখলদারি খতিয়ে দেখেন। এ প্রসঙ্গে সাদ্দাম নাভাস জানান, তারাপীঠের রাস্তায় বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে দমকল রাস্তায় ঢুকতে পারে, তাই সব ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সবমিলিয়ে দু’বছর পর কৌশিকী অমাবস্যার উৎসব ঘিরে তারাপীঠে সাজো সাজো রব। কিন্তু হোটেলের ভাড়া দেখে মাথায় হাত পর্যটকদের।