সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চার দফার ভোট শেষ। রাজ্যে বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতার সূত্র অনুযায়ী কংগ্রেসের যে আসনগুলিতে লড়ার কথা, তার অধিকাংশতেই ভোট সারা। রায়গঞ্জ, দুই মালদহ, মুর্শিদাবাদের দুই কেন্দ্র, বীরভূমে ভোট মিটে গিয়েছে। অথচ রাজ্যে এ পর্যন্ত কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা সেভাবে প্রচারেই এলেন না। প্রদেশ কংগ্রেস যে আসনগুলিকে সম্ভাবনাময় বলে মনে করছিল, সেই রায়গঞ্জ, মালদহ উত্তর, মালদহ দক্ষিণ, জঙ্গিপুর এবং বহরমপুরেও ভোট মিটে গেল, তবু দেখা মিলল না রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীদের।
বিজেপির তরফে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah), বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা, রাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন। বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে জনসভা করে যাচ্ছেন। তৃণমূলের তরফেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা রীতিমতো রাজ্যজুড়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তৃণমূলের অন্য নেতারাও বিভিন্ন প্রান্তে সভা করেছেন। সে তুলনায় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা রাজ্য নিয়ে কার্যত উদাসীন। মালদহ দক্ষিণে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের একটি সভা ছাড়া আর সেভাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের রাজ্যে দেখা মেলেনি।
[আরও পড়ুন: রেলের জমিতে বেআইনি বিলবোর্ড! মুম্বইয়ে হোর্ডিং ভেঙে মৃত বেড়ে ১৪]
রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীরা গোটা দেশে সভা করে বেড়িয়েছেন। রাহুল গান্ধী একটি মাত্র আসনের জন্য দাদরা নগর হাভেলিতেও সভা করেছেন, অথচ বাংলায় আসেননি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, দক্ষিণ মালদহের প্রার্থী ঈশা খান চৌধুরী নিজের কেন্দ্রে প্রচারের জন্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত ব্যস্ত সূচির অজুহাত দেখিয়ে তাঁকে পাঠানো হয়নি। তাঁর বদলে এসেছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। গান্ধী পরিবারের কেউ প্রচারে না আসায় প্রদেশ কংগ্রেসের কর্মীদের একাংশ ক্ষুব্ধ। প্রচারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পাশে না পেয়ে অসম লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছেন প্রার্থীরাও। রাজ্যে কংগ্রেস আর যে আসনগুলিতে লড়ছে, সেগুলির মধ্যে বিরাট সম্ভাবনাময় আসন নেই। ফলে রাহুলদের আসার সম্ভাবনা সেভাবে দেখছে না প্রদেশ কংগ্রেসও।
প্রশ্ন হল, কেন ভোটপ্রচারে রাজ্যকে ব্রাত্য রাখলেন রাহুল গান্ধীরা (Rahul Gandhi)? এর আগে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও বাংলায় দুটি সভা করেন রাহুল। এবার কেন একবারও এলেন না? রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে মতানৈক্যের জেরেই প্রচারে রাজ্যকে কার্যত বয়কট করেছে গান্ধী পরিবার। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব শুরু থেকেই বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোটের পক্ষে ছিল। অধীর চৌধুরীরাই সেই জোটের প্রবল বিরোধিতা করেন। মূলত অধীরের সিপিএম প্রীতিতেই বাংলায় ভেস্তে যায় ইন্ডিয়া জোট। অন্তত তৃণমূল তেমনটাই অভিযোগ করে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব প্রচারে এ রাজ্যেকে এড়িয়ে চলেছেন তৃণমূলকে সরাসরি আক্রমণ করতে চান না বলেই। তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা না হলেও সরাসরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেনি এআইসিসি (AICC)। উলটে সন্দেশখালির স্টিং ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর পবন খেরা, জয়রাম রমেশরা টুইট করে তৃণমূলের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেন। আবার মমতাও অধীর চৌধুরীদের মতো প্রদেশ নেতাদের আক্রমণ করে গেলেও, কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতৃত্বকে সেভাবে আক্রমণ করেননি। এতেই স্পষ্ট তৃণমূলের প্রতি এখনও নরম মনোভাব নিয়েই চলছে AICC।
[আরও পড়ুন: সন্দেশখালি মামলা: ‘নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত’ চাই, সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের মহিলাদের]
অধীরের তৃণমূলের প্রতি 'হার্ডলাইন' সম্ভবত না পসন্দ কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের। তাঁর সিপিএম প্রীতিতে ক্ষোভের একটা জায়গাও তৈরি হয়েছে এআইসিসির অন্দরে। নাহলে মালদহ বা রায়গঞ্জের মতো কেন্দ্রে যেখানে দলের জয়ের সম্ভাবনা ছিল সেখানে গান্ধী পরিবারের কেউ প্রচারে আসবেন না, এতটা বোকামো কংগ্রেস হাইকম্যান্ড করত না। যদিও অধীর চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) বহরমপুরের ভোটের দিন দাবি করেছেন, "তাঁর প্রচারে কাউকে প্রয়োজন হয় না। রাহুল গান্ধী প্রচারের শেষদিন আসতে চেয়েছিলেন। এত ব্যস্ততার মধ্যে আমিই বারণ করেছি।" কোথাও যেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কথাতেও অভিমান ঝরে পড়ছিল।