রমেন দাস: ভোটের আগেই নির্বাণপ্রাপ্ত হলেন অনির্বাণ? এই প্রশ্নেই সরগরম যাদবপুরের রাজনীতি। নির্বাচন ঘোষণার বহু আগেই প্রার্থী হিসেবে বিজেপির অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা হলেও প্রায় নিষ্ক্রিয় তিনি! বিজেপি বিরোধীরা বলছেন, দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে প্রচার কোথাওই দেখা নেই অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Anirban Ganguly)। এখানেই উঠেছে প্রশ্ন। প্রতিপক্ষ সৃজন ভট্টাচার্য, সায়নী ঘোষদের সামনে খানিকটা আত্মসমর্পণ করেছেন তিনি?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিজেপি (BJP) প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল। তিনি জানান, "এইরকম কোনও বিষয় নেই। আসলে সিপিএম, তৃণমূল নিজেরাই মিলেমিশে ঠিক করে নিয়েছে, কোন দেওয়ালে কার নাম থাকবে। খানিকটা মিলিজুলি বিষয় আসলে।" অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, "বিরোধীরা দাবি করবেন। ভাঙড়েও তো অন্য দলের দেওয়াল লিখন মুছে দেওয়া হয়েছে। আমার ক্ষেত্রেও সেটা হচ্ছে। প্রচারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সিপিএম, তৃণমূল একে অন্যের পরিপূরক হয়ে কাজ করছে।" সংবাদমাধ্যমের তাঁকে নিয়ে খবর করার ক্ষেত্রেও সরব হন বিজেপি প্রার্থী। তাঁর দাবি, "সংবাদমাধ্যমের নানা গণ্ডি থাকে, সেগুলো অতিক্রম করে সব খবর হয় না। আমি সর্বত্র প্রচার করছি।''
[আরও পড়ুন: BJP সভাপতি হয়েও ছেলেকে টিকিট দিইনি, পরিবারবাদ নিয়ে বিরোধী সপাটে জবাব রাজনাথের]
তৃণমূলের বিরুদ্ধে, সিপিএম পেরিয়ে জিতবেন অনির্বাণ? প্রার্থীর দাবি, লড়াই কঠিন নয়। জিততেই ময়দানে নেমেছেন। দুর্নীতি, সন্ত্রাস রুখতে মানুষের মনে থাকবেন তিনিই। নির্বাচনে জিততে কোনও বিশেষ কৌশল অবলম্বন করছেন তিনি? প্রার্থীর দাবি, কৌশল থাকে সর্বত্র। সবকিছু বলা ঠিক নয়। তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীর দাবি, যাদবপুরে (Jadavpur Lok Sabha constituency) এবার (Lok Sabha Election 2024) ফুটবে পদ্মই।
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বরাবরই হাই প্রোফাইল কেন্দ্র। এখান থেকেই ১৯৮৪-র লোকসভা ভোটে সিপিএমের দুঁদে আইনজীবী প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ভোট রাজনীতিতে নামার সূচনা। তবে তার আগে ওই কেন্দ্রেই জিতেছিলেন সোমনাথবাবু। আসলে বিধানসভা থেকে শুরু করে পুরসভা, তৃণমূল স্তরে গ্রাম প্রশাসন অর্থাত পঞ্চায়েত, পাড়া, স্কুল, কলেজ পরিচালন সমিতি, সর্বত্র ছিল সিপিএমের দাপট। তাছাড়া তখনও রাইটার্সে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে বাম সংগঠন ভাঙেনি। তাই পরের লোকসভা ভোটগুলিতে বামেরা হারানো কেন্দ্রটি পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছিল শক্তিশালী সংগঠন, ভোট মেশিনারি থাকায়। ১৯৮৯, ১৯৯১ এর লোকসভা ভোটে জয়ী হন সিপিএমের মালিনী ভট্টাচার্য। ২০০৪-এ জেতেন সুজন চক্রবর্তী। এমনকী ১৯৬৭ থেকে শুরু করে ২০১১-য় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পরাজয়ের আগে পর্যন্ত যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রটি কোনওবার হাতছাড়া হয়নি সিপিএমের। তবে এর পর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। যাদবপুরের বাম দুর্গ পরিচয় ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে বহুদিন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এই আসনেই জেতেন মিমি চক্রবর্তী। এই ছবিতে সেই অর্থে কোথাওই যেন নেই বিজেপি। সেই অবস্থায় অনির্বাণের দাবির আদৌ কোনও সারবত্তা আছে কিনা, সেপ্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। শেষপর্যন্ত কী হয় সেদিকেই তাকিয়ে তারা।
[আরও পড়ুন: বন্ধু কেন উত্তর দেখায়নি, পরীক্ষার হল থেকে বেরতেই কোপাল সহপাঠীরা!]