সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভা ভোটপর্ব মিটতেই বুথফেরত সমীক্ষা নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে গিয়েছে দেশজুড়ে। যথারীতি চলছে রাজনৈতিক কাটাছেঁড়া। ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত সেই কাটাছেঁড়া চলবে। কিন্তু যে বুথফেরত সমীক্ষা বা এক্সিট পোলের উপর ভিত্তি করে এত বিশ্লেষণ, এত কাটাছেঁড়া, সেটার ভিত্তি কী? এর নেপথ্যে বিজ্ঞানই বা কী? এক্সিট পোল সঠিক হওয়ার সম্ভাবনাই বা কতটা? জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
কীভাবে করা হয় এক্সিট পোল?
বিভিন্ন কেন্দ্রে মানুষের ভোট দেওয়া হয়ে গেলে ভোটারদের মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়। সাধারণত বুথফেরত সমীক্ষার জন্য ভোটের দিন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ঘোরেন সমীক্ষকেরা। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের প্রশ্ন করে মনের ভাব বোঝার চেষ্টা করেন। এর পাশাপাশি এলাকায় এলাকায় ঘুরে বোঝার চেষ্টা করেন ভোটের হাওয়া। অনেক ক্ষেত্রে ভোট দিয়ে বেরোনোর পর ভোটারদের সামনে ধরা হয় নমুনা ইভিএম। সেখানে গোপনে তাঁরা আবার ভোট দেন। সেই ভোটের উপর ভর করেও সমীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
[আরও পড়ুন: বুথফেরত সমীক্ষায় অনেক এগিয়ে এনডিএ, ২০১৯-এর এক্সিট পোলকেও ছাপিয়ে গেল?]
'স্যাম্পল সংগ্রহ' এবং 'স্যাম্পল সাইজ'
এক্সিট পোলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল স্যাম্পল সাইজ এবং স্যাম্পল সংগ্রহ। যত বড়, যত বৈচিত্রপূর্ণ স্যাম্পল সাইজ নেওয়া সম্ভব, এক্সিট পোলের ফল তত নিখুঁত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই স্যাম্পল সাইজের মধ্যে আলাদা আলাদা বয়স, আলাদা আলাদা লিঙ্গ, আলাদা আলাদা বয়সসীমা, আলাদা আলাদা জাতি, ধর্মের ভোটার থাকা বাঞ্চনীয়। স্যাম্পল সাইজের শতকরা হারও ভোটারদের হারের মতোই হওয়া উচিত। এর বাইরে সার্বিকভাবে সব এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বোঝা দরকার সমীক্ষার ফলাফল ঘোষণার আগে।
এক্সিট পোল সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা কতটা?
বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় এক্সিট পোল হুবহু মিলে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ফলাফলের যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল তাঁর কাছাকাছি ফল এলেও আসন সংখ্যার হেরফের হচ্ছে। অনেক সময় এমনও দেখা গিয়েছে এক্সিট পোলের সম্পূর্ণ উলটো ফলাফল আসছে। তাই এই এক্সিট পোলকে ধ্রুব সত্য ধরে নেওয়ার যেমন কোনও কারণ নেই, তেমনি পুরোপুরি খারিজ করে দেওয়াও বোকামি।
[আরও পড়ুন: দক্ষিণে বিজেপির সূর্যোদয়, বুথ ফেরত সমীক্ষায় প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে কি?]
সাম্প্রতিক 'ভুল' সমীক্ষা
সাম্প্রতিক কালে একাধিক এক্সিট পোল সম্পূর্ণ ভুল হওয়ার নজির দেখা গিয়েছে। যার জলজ্যান্ত উদাহরণ বাংলা। এরাজ্যে একুশের বিধানসভায় প্রায় সব এক্সিট পোল তৃণমূল-বিজেপির সমানে সমানে টক্করের ইঙ্গিত দিয়েছিল। কোনও কোনও সংস্থা এগিয়ে রেখেছিল বিজেপিকে। কিন্তু ফলাফল সম্পূর্ণ উলটো হয়। এক্সিট পোল ভুল হওয়ার আরও উদাহরণ দেখা গিয়েছে সম্প্রতি হিমাচল প্রদেশ, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ এবং কর্নাটকের ভোটেও। আসলে ইদানিং বহু সংস্থাই প্রথাগত সমীক্ষা পদ্ধতি এড়িয়ে ফোনে বা ডিজিটাল মাধ্যমে সমীক্ষা চালাচ্ছে। আবার বহু সংস্থার স্যাম্পল সাইজ সংগ্রহের সময় বিজ্ঞান মানা হচ্ছে না বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা।