সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্বে দীর্ণ হয়েছে রাজ্যের শাসকদল। একটা বয়সের পর রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের কাজকর্ম শ্লথ হয়, তখন তাঁদের অবসর জীবনে চলে যাওয়াই ভালো। তাঁরা তখন পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করবেন। এমন মন্তব্য শোনা গিয়েছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের গলায়। সেসব দ্বন্দ্ব অবশ্য অতীত। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে নতুন-পুরনো হাতে হাত ধরে একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ার সুর বেঁধে দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর প্রচারের শেষ দিনেও দলীয় প্রার্থীদের হয়ে ভোট চাইতে রাজপথে ১২ কিলোমিটার পদযাত্রা করে বুঝিয়ে দিলেন, প্রবীণ বলে আসলে রাজনীতিতে কিছু হয় না। যা হয় এবং যা থাকবে তা হল ভরপুর উদ্যম, কাজ করার খিদে। আর ঘাসফুল শিবিরে এই তিনটি বিষয় ভরপুর সবচেয়ে নবীনের নামই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত দুমাসে ভোটের প্রচারে শতাধিক জনসভা ও রোড শো করা মহিলাকে কুর্নিশ করে অনেকেই বলছেন, 'এনার্জির নাম মমতা ব্যানার্জি।'
ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মেটিয়াব্রুজে সভা করেন মমতা এবং অভিষেক।
গত ১৬ মার্চ ঘোষণা হয়েছে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) নির্ঘণ্ট। তার পর প্রশাসনিক কাজকর্ম সেরে ফেলার জন্য হাতে সময় ছিল কয়েকদিন মাত্র। সেসব করে ৩১ মার্চ থেকে নির্বাচনী প্রচারে পথে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বিভিন্ন জনসভা থেকে সেকথা নিজেই জানিয়েছেন তিনি। সুদূর উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে শুরু করেছেন নির্বাচনী জনসভা। একেকজন প্রার্থীর হয়ে একাধিক সভা করেছেন। টানা প্রায় দেড় মাস বাড়ি থেকে ছিলেন দূরে। জেলা সফরের সময় অবশ্য কালীঘাটের বাড়িতে ফেরার তেমন সুযোগও ছিল না। তা অবশ্য নেত্রীকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না। সদাসর্বদা হাসিমুখে জনসংযোগ করেছেন, চড়াই-উতরাই পথেও প্রিয় 'দিদি'র পদযাত্রা চাক্ষুষ করতে পথের দুপাশে ভিড় করেছেন জনতা।
[আরও পড়ুন: পুঞ্চ হাইওয়ে থেকে খাদে পড়ল যাত্রীবাহী বাস, কাশ্মীরের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত কমপক্ষে ২১]
উত্তরবঙ্গের (North Bengal) ভোট শেষে দক্ষিণবঙ্গে পা রেখেও বাড়ি ফেরেননি অনেকদিন। এর মাঝে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অসুস্থতা ছিল। তাও অতিক্রম করে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, তিনি জননেত্রী। জনতা আর জনসমর্থনই তাঁর সমস্ত রোগের উপশম। 'প্রাণের আরাম, মনের শান্তি' বললেও হয়ত অত্যুক্তি হয় না। এই যে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রেমাল (Cyclone Remal) তছনছ করে দিল বাংলার উপকূলবর্তী অঞ্চলকে, ঝড়বৃষ্টির দাপট চলল কলকাতাতেও, তাকে থোড়াই কেয়ার! ঝড়ঝঞ্ঝা সামলে, নিখুঁত টাইম ম্যানেজমেন্ট পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জনসভা, রোড শো সবই করেছেন মমতা। যেখানে রেমাল-আশঙ্কায় নির্বাচনী প্রচার বাতিলই করে দিয়েছেন অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দ। ব্যতিক্রম কেবল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উদ্যম, উৎসাহ আর সূক্ষ্ম রাজনৈতিক হিসেব।
[আরও পড়ুন: সম্পর্কের টানাপোড়েনে ‘আত্মঘাতী’ স্ত্রী, ছবি বুকে জড়িয়ে চরম সিদ্ধান্ত স্বামীর!]
পরিসংখ্যান বলছে, দুমাসে মমতা মোট ১০৭ টি জনসভা ও রোড শো করেছেন। মাঝে বিশ্রামের জন্য সামান্য সময় নিয়েছেন। আর দিনভর কখনও ছোট ছোট বৈঠক, আলোচনা, কখনও আবার মানুষের মাঝে মিশে জনসংযোগ। হতেই পারে তা পূর্ব নির্ধারিত রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে। রাজ্যের যে যে প্রান্তে সংগঠন একটু দুর্বল, জোর দিয়েছেন সেসব জায়গায়। একাধিক সভা করে মানুষের কাছে পৌঁছনোর অকৃপণ চেষ্টা বাকিদের হতবাক করেছে। আসলে এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক কেরিয়ারের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত নানা উত্থানপতনের মাঝে যাঁর জীবনে ধ্রুবক একটাই - অফুরান প্রাণশক্তি। তাই তো পাওয়ার ওম্যান নন, তিনি 'সুপার ওম্যান'।