সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। প্রথমবার সরকার চালাতে ভরসা করতে হচ্ছে শরিকদের উপর। তাঁর নিজের স্ট্রাইক রেট কমেছে। নিজের চেনা মাঠ গোবলয়ে ধাক্কা খেয়েছে তাঁর বিকাশ এবং হিন্দুত্বের মডেল। শরীরী ভাষায় বোঝা যাচ্ছে, নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি (Narendra Modi) আগের মতো আত্মবিশ্বাসী নন। কিন্তু এত কিছুর পরও মোদি ম্যাজিক যে পুরোপুরি ফিকে হয়ে গিয়েছে, তা বলার সময় অবশ্য আসেনি। এখনও এমন বহু ফ্যাক্টর রয়েছে, যা বুঝিয়ে দেয় এ দেশের এক এবং অবিসংবাদী নেতা এখনও মোদি।
লোকসভার ফলাফলে 'ব্র্যান্ড মোদি' ধাক্কা খেয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে বিজেপির (BJP) আসন সংখ্যা এক ধাক্কায় এতটা কমে যাওয়া রাজনৈতিকভাবে মোদির পুঁজি কমিয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, 'মিলিজুলি' সরকার চালানো। যাতে অভ্যস্ত নন মোদি। সব শরিককে খুশি করতে গিয়ে হয়তো নমোকে নিজের পলিসি বদল করতে হবে। রিফর্ম, পারফর্ম, ট্রান্সফর্মের বুলিও কার্যক্ষেত্রে কতটা বাস্তবায়িত হবে সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বস্তুত আগামী পাঁচ বছর সরকার চালাতে বেশ নমণীয় হতে হবে মোদিকে।
[আরও পড়ুন: বন্ধ ৫টি প্ল্যাটফর্ম, বহু লোকাল বাতিলে শিয়ালদহে চরমে যাত্রী ভোগান্তি]
কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও এখনই তাঁকে 'অস্তমিত সূর্য' বলে দেওয়ার সময় আসেনি। কারণ?
এক, বিজেপি তথা এনডিএর প্রত্যেক সাংসদ দেশের সব প্রান্তেই ভোট চেয়েছেন শুধু মোদির নামে। তাঁদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদ জিতেও এসেছেন। কেউ কেউ হেরেছেন। এতে একটা জিনিস স্পষ্ট, এবারেও গোটা দেশে ভোট পড়েছে মোদির নামে। অন্তত ভারতে আর কোনও নেতা এই মুহূর্তে নেই, যাঁর নামে আসমুদ্রহিমাচল ভোট হয়।
দুই, ভুলে গেলে চলবে না প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর এবারের নির্বাচনে গিয়েছেন মোদি। যে কেউ ১০ বছর ক্ষমতায় থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা মাথাচাড়া দিতে বাধ্য। সেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ছাপিয়ে ১০ বছর পরও ২৪০ আসন পাওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। যে ফলাফলকে বিজেপির জন্য বিপর্যয় বলা হচ্ছে, অতীতে বহু তাবড় নেতা সেই সংখ্যক সাংসদ জেতাতে পারেননি। এবার বিজেপির একার সাংসদ সংখ্যা কংগ্রেসের প্রায় আড়াই গুণ। গোটা ইন্ডিয়া জোটের সমান।
তিন, চব্বিশের যে ফলাফলকে 'বিপর্যয়' বলা হচ্ছে, তাতেও বিজেপির ভোটভিত্তি বেড়েছে। এমন এমন রাজ্যে বিজেপির ভোট বেড়েছে, যেগুলিকে অতীতে গেরুয়া শিবিরের জন্য দুর্ভেদ্য বলে মনে করা হত। দক্ষিণে ছাপ ফেলেছেন মোদি। আর ওড়িশাতে রীতিমতো চমক দিয়ে ক্ষমতা দখলের পথে বিজেপি। বাজপেয়ীর আমলেও যে বিজেপিকে শুধু হিন্দি বলয়ের পার্টি বলে মনে করা হত, সেই দল এখন আসমুদ্রহিমাচল বিরাজমান। মোদির 'দুর্দশা'র দিনেও দক্ষিণ এবং পূর্ব ভারতে ক্ষমতা বাড়াচ্ছে গেরুয়া শিবির।
[আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর নামে ফ্রি রিচার্জের প্রলোভন! ফাঁদে পা দিলেই নিমেষে ফাঁকা অ্যাকাউন্ট]
ভুলে গেলে চলবে না, যে সময় 'মোদি ম্যাজিক' ফিকে হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে, ঠিক তখন দাঁড়িয়েও নতুন রেকর্ড গড়ার পথে প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচিত সরকারের প্রধান হিসাবে ইতিমধ্যেই নেহরু (Jawharlal Nehru), ইন্দিরাদের টপকেছেন তিনি। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী পদে তিনি থেকেছেন ৮ হাজার ২৭৭ দিন। সেখানে জওহরলাল নেহরু প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন ৬ হাজার ১৩০ দিন। আর ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচিত সরকারের প্রধান পদে ছিলেন ৫ হাজার ৮২৯ দিন। এবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেয়াদ শেষ করতে পারলে স্রেফ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইন্দিরাকে টপকে যাবেন নমো। প্রায় ছুঁয়ে ফেলবেন নেহরুকে। যাঁর নামের পাশে এত রেকর্ড, তাঁর ম্যাজিক কি এত দ্রুত শেষ হয়?