রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: দু-তিনটি আসনে জট থাকলেও লোকসভা ভোটে (Lok Sabha 2024) বাম-কংগ্রেস জোট করেই আসন সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ জায়গাতেই সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে কোনও সমন্বয় বৈঠকই হয়নি। শুধু তাই নয়, বহু কেন্দ্রেই যেখানে বাম প্রার্থীরা রয়েছেন সেখানে কংগ্রেসের তরফে সেই প্রার্থীর সমর্থনে সেভাবে প্রচার বা দেওয়াল লিখন দেখা যাচ্ছে না। একাধিক কেন্দ্রে সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ভাবাচ্ছে শীর্ষ নেতাদের।
হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, দক্ষিণ কলকাতা থেকে শুরু করে বাম-কংগ্রেসের মধ্যে এই সমন্বয়ের অভাবের ছবি ধরা পড়েছে একাধিক জেলায়। হাওড়ার কথাই ধরা যাক। হাওড়া সদর কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী তথা আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় এলাকায় এলাকায় প্রচার সারছেন। বিভিন্ন এলাকায় সিপিএম কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের প্রার্থীর হয়ে প্রচারে স্থানীয় কংগ্রেস (Congress) কর্মীদের দেখাই যাচ্ছে না। মিছিল-মিটিংয়ে তো নেই, প্রার্থী পরিচয়ের সময়ও কংগ্রেসের কাউকে দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, সিপিএমের তরফে আবার দেওয়াল লিখনে বামফ্রন্ট মনোনীত লেখার সঙ্গে অনেক জায়গায় কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থীও লেখা হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের তরফে এখনও সিপিএমের প্রার্থীর নামে দেওয়াল লিখনে অনীহা দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ সিপিএম কর্মীদের।
[আরও পড়ুন: ‘ভারতের জনতাই নিশ্চিত করবে অবাধ নির্বাচন’, রাষ্ট্রসংঘের উদ্বেগ ওড়ালেন জয়শংকর]
হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা এলাকায় পুরোদস্তুর প্রচারে নেমে পড়েছে সিপিএম নেতাকর্মীরা। এক্ষেত্রে আবার কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ, সিপিএম একা একাই প্রচার করছে। মিছিল-মিটিংয়ে তাদের ডাকছে না। দেওয়াল লিখনে সর্বত্র বামফ্রন্ট মনোনীত কথার সঙ্গে কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থী বলে লেখাই হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছে হাত শিবির। রানাঘাটেও একই সমস্যা। সেখানে সিপিএমের সঙ্গে এখনও যৌথ প্রচারে দেখা যাচ্ছে না কংগ্রেসকে। সমন্বয়ের অভাব চোখে পড়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে। এখানে সিপিএম (CPIM) প্রার্থী সুকৃতি ঘোষাল। তাঁর প্রচারে সেভাবে এলাকার কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের দেখা যাচ্ছে না বলে খবর। এই সমন্বয়ের অভাবের পিছনে অবশ্য অন্য ক্ষোভ লুকিয়ে রয়েছে। কংগ্রেসের জন্য স্বার্থত্যাগ করতে গিয়ে পার্টির ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছেন শাখাস্তরের নেতা-কর্মীরা। সিপিএমের শাখাস্তরের কর্মীদের প্রশ্ন, কংগ্রেসের জন্য এত প্রেম দেখালেও কংগ্রেসের কোর ভোটাররাই সিপিএমকে ঢেলে ভোট দিতে দ্বিধা করেন। তাহলে কেন কংগ্রেসকে এত গুরুত্ব দিতে হবে? সিপিএমের একাধিক জেলায় শাখা বৈঠকে নিচুতলার কমরেডরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ পার্টির বৈঠকে ও ঘরোয়া আলোচনায় উগড়ে দিয়েছেন। আর তার সেই পুরনো ক্ষোভের প্রভাব যৌথ প্রচারের ক্ষেত্রে পডছে, সমন্বয়ের অভাব চোখে পড়ছে সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে। সিপিএমের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘এই সমস্যা নেই বলা যাবে না। তবে আলোচনা চলছে যাতে যৌথভাবে সর্বত্র প্রচারে নামা যায়।’’
[আরও পড়ুন: রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে শপথগ্রহণ সোনিয়ার, মজলেন শমীকের বোনের শাড়িতে]
উল্লেখ্য, কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের আসন সমঝোতা হলেও কোচবিহার ও পুরুলিয়ায় এবার উলটো ছবিই দেখা যাবে। কোচবিহার ও পুরুলিয়ায় বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট হচ্ছে না। এখানে লড়ছে ফরওয়ার্ড ব্লক। আবার কংগ্রেসও প্রার্থী দিয়েছে। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এর আগে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তো ফল ভালো হয়নি। তাহলে বামেরা নিজেদের শক্তিটাই যাচাই করুক।’’ কিন্তু রাজ্য সিপিএম নেতারা সেই কংগ্রেসকে নিয়েই চলতে চাইছে যদি ভোট মেলে। একুশের বিধানসভার প্রাপ্তি শূন্য থেকে যদি বেরনো যায়। কিন্তু গত লোকসভা ভোটের ফলাফলের তথ্য বলছে, কংগ্রেস ও সিপিএমের মিলিত ভোটেও এবারও কোনও লাভ হওয়া মুশকিল।