সুদীপ রায়চৌধুরী: রাজ্য পুলিশ কী কম পড়িয়াছে? নাকি অন্য কোনও অঙ্ক? শনিবার ভোটের দিন অধিকারী গড় কাঁথি ও তমলুকে মোতায়েন হওয়া কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের অনুপাত এমন প্রশ্নটা ওঠাই স্বাভাবিক!
রাত পোহালেই রাজ্যে ষষ্ঠ দফায় আট কেন্দ্রে ভোট(Lok Sabha 2024)। যার অন্যতম রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ও তমলুক আসন। বাকি ছয় আসন হল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ও মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর এবং ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া। এই আট কেন্দ্রে মোতায়েন করা হয়েছে মোট ৯১৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ২৯,৪৬৮ রাজ্য পুলিশ। কিন্তু সেই নিরাপত্তা বাহিনী বিন্যাসের যে ছবি নির্বাচন কমিশন সূত্রে মিলেছে, তাতেই যাবতীয় ধন্ধের সূত্রপাত।
[আরও পড়ুন: ‘আমার জন্ম জৈবিক প্রক্রিয়ায় নয়’, মোদির মন্তব্যে মমতার পালটা, ‘আমাদের তো মা-বাবা আছে’]
কমিশন (Election Commission) সূত্রে প্রকাশ, ষষ্ঠ পর্বের ভোটে মোট বুথের সংখ্যা ৩৮০৪টি। এই পর্বে ৯১৯ কোম্পানি অর্থাৎ প্রায় ৭৫ হাজার আধাসেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। যা সর্বকালীন রেকর্ড। আট আসনের জন্য এত বাহিনী মোতায়েন এক কোথায় অভাবনীয়। এই ৯১৯ কোম্পানির মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩৭ কোম্পানি মোতায়েন করা হচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরের দুই আসনে। অন্যদিকে এই দুই কেন্দ্রে পাঠানো রাজ্য পুলিশের সংখ্যা মাত্র ৭১৪ জন। যা আট কেন্দ্রের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ বাকি ছয় কেন্দ্রের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য পুলিশের অনুপাতে এহেন বৈষম্য অনুপস্থিত। যেমন বাঁকুড়া জেলার দুই কেন্দ্রে মোতায়েন করা হচ্ছে ১৭৮ কোম্পানী কেন্দ্রীয় বাহিনী ও ৬৫২১ জন রাজ্য পুলিশ। একদা মাওবাদী অধ্যুসিত জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে ১৩৩ কোম্পানি বাহিনীর পাশাপাশি ২৪৩৬ জন রাজ্য পুলিশ মোতায়েন রাখা হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটল ও মেদিনীপুর কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে ২১৮ কোম্পানি, রাজ্য পুলিশ ৬,৯০১ জন। পূর্ব বর্ধমান জেলায় ১৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি ৭,৪৩২ জন রাজ্য পুলিশ রাখা হচ্ছে। পুরুলিয়া কেন্দ্রে ১৩৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে মোতায়েন থাকছেন ৫,৪৬৪ জন রাজ্য পুলিশ কর্মী।
[আরও পড়ুন: রিজেন্ট পার্কের আবাসন থেকে বৃহন্নলার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার, মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা]
প্রশ্ন উঠছে, অন্যান্য জায়গায় যেখানে দুই থেকে ছয় হাজার রাজ্য পুলিশ মোতায়েন রাখা হচ্ছে, সেখানে শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় রাজ্য পুলিশ কেন মাত্র ৭১৪ জন। বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রশ্ন, এক্ষেত্রে কী এই জেলায় রাজ্য পুলিশের উপর ‘ভরসাহীনতা’ কি কমিশনের নিজস্ব সূত্রে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে নেওয়া সিদ্ধান্ত না কি অন্যকিছু? এ বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যা স্পষ্ট করে কোনও দেওয়া হয়নি কমিশনের তরফ থেকে। কারণ কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের এই বিন্যাস তৈরি হয়েছে নন্দীগ্রামে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া অশান্তির অনেক আগেই, মঙ্গলবার। বুধবার সেই তালিকা প্রেস নোটে জানিয়েও দেয় কমিশন। যার অর্থ, এর সঙ্গে নন্দীগ্রামের সাম্প্রতিক অশান্তির কোনও সম্পর্ক নেই। যদিও কমিশন কর্তাদের কারও কারও যুক্তি, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে এহেন সিদ্ধান্ত।