টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: একসময় দুজন ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। জীবনের পথ আলাদা হয়ে গিয়েছি সেই কবেই। দাম্পত্যে ছেদ টেনে রাজনৈতিক লড়াইয়ে মুখোমুখি সুজাতা-সৌমিত্র। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী দুজনে। মনোনয়ন জমা দিয়েছেন প্রাক্তন দম্পতি। সম্পত্তির হিসাবনিকেশও দিয়েছেন তাঁরা। অঙ্ক বলছে, সম্পত্তির নিরিখে প্রাক্তন স্ত্রীকে পিছনে ফেলে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র।
তথ্য বলছে, গত অর্থবর্ষে সৌমিত্রর আয় ১৬ লক্ষ ৫২ হাজার ৭১২ টাকা। মনোনয়ন জমার সময় তাঁর হাতে ছিল নগদ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। একাধিক ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাঁর। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের অঙ্কও নেহাত কম নয়। সবমিলিয়ে ৪৪ লক্ষ ১৮ হাজার ৮৪৯ টাকা। ২টি গাড়ির মালিক সৌমিত্র। যার বাজারদর ১২ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। ৫ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকার গয়নার মালিক তিনি। মোট ২২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে সৌমিত্রর। ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ঋণও রয়েছে তাঁর।
সুজাতার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর নতুন করে সংসার বেঁধেছেন সৌমিত্র। তাঁর নববিবাহিতা স্ত্রী পারমিতা রায়চৌধুরী পেশায় আইনজীবী। তাঁর গত অর্থবর্ষে আয় ১২ লক্ষ ৭৯ হাজার ৮৯৫ টাকা। হাতে নগদ রয়েছে ৭০ হাজার টাকা। ব্যাঙ্ক ও বিনিয়োগ মিলিয়ে ৫২ লক্ষ ১২ হাজার ৫৩৪ টাকার মালিক পারমিতা। সৌমিত্র ঘরনিরও ২টি গাড়ি রয়েছে। যার বাজারদর ২০ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। স্বামীর চেয়ে গয়না তাঁর অনেক বেশি। সাড়ে ৫৮ লক্ষ টাকার গয়না রয়েছে পারমিতার। ৩৩ লক্ষ টাকার স্থাবর সম্পত্তির মালিক তিনি। ঋণ রয়েছে ২৪ লক্ষ ২২ হাজার ৯৬৬ টাকা।
[আরও পড়ুন: ‘আগে রায়বরেলিতে জিতুন, তার পর…’, আচমকাই কাসপারভের খোঁচা রাহুলকে!]
সম্পত্তির নিরিখে অনেকটাই পিছিয়ে সৌমিত্রর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল। গত অর্থবর্ষে তাঁর আয় ৪ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫৫০ টাকা। মাত্র ১৮ হাজার টাকা হাতে নগদ রয়েছে তাঁর। একাধিক ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাঁর। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগও রয়েছে বহু। সবমিলিয়ে ৬১ লক্ষ ৯ হাজার ৭৫৩ টাকা। সুজাতার ব্যবহৃত গাড়ির বাজারদর ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। তবে প্রাক্তন সৌমিত্রর থেকে গয়না অনেক বেশি সুজাতার। ২৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার গয়নার মালিক তিনি। তবে কোনও স্থাবর সম্পত্তি নেই তাঁর। বলে রাখা ভালো, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বড়জোড়ার বাসিন্দা সুজাতার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন সৌমিত্র। ২০১৯ সালে সস্ত্রীক সৌমিত্র যোগ দেন বিজেপিতে। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিট পান সৌমিত্র। তবে সেই সময় আদালতের নির্দেশে নিজের এলাকাতেই প্রবেশাধিকার হারান। নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে স্ত্রীর উপরেই সম্পূর্ণ আস্থাশীল ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। প্রায় একা প্রচার করে জিতিয়েছিলেন স্বামী সৌমিত্রকে। নিজের জয়ের কৃতিত্ব স্ত্রীকেই দিয়েছিলেন সৌমিত্র।
তবে গত পাঁচ বছরে সব কিছু বদলে যায়। ২০২১ সালে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন সুজাতা। সৌগত রায় এবং কুণাল ঘোষের হাত থেকে নেন ঘাসফুল শিবিরের পতাকা। তার পরই বদলে যায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সমীকরণও। সাংবাদিক বৈঠক করে স্ত্রীর সঙ্গে জীবনের পথ আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন সৌমিত্র। বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শুরু হয় আইনি টানাপোড়েন। তার মাঝে অবশ্য বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট পান সুজাতা। হেরে যান। বর্তমানে আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ শেষ। আজ স্বামী-স্ত্রীর আগে জুড়েছে ‘প্রাক্তন’ তকমা। লোকসভা নির্বাচনে ফের মুখোমুখি সেই প্রাক্তন দম্পতি। এবার বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে সুজাতা বনাম সৌমিত্র। ভাঙা সম্পর্কের লড়াই। প্রাক্তন স্বামী নাকি স্ত্রী, লোকসভা নির্বাচনী যুদ্ধে জয়ী হবেন কে, সেদিকেই নজর সকলের।