সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: 'জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন'। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে এই স্লোগানকেই হাতিয়ার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে শাসকদল যেদিন লোকসভার প্রার্থী ঘোষণা করল সেদিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ২০২১ সালের মতো বহিরাগত ইস্যুতেই ভোট ময়দানে নামতে চলেছে জোড়াফুল শিবির। মঞ্চ থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছিলেন, "যারা বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা করে, যারা বাংলাকে অপদস্থ করার চেষ্টা করে, যারা বাংলার প্রাপ্য আটকে রাখে, তাঁদের একটাও ভোট নয়।"
বস্তুত ২০২১-এ যে 'বাংলার মেয়ে' বনাম 'বহিরাগত' মডেল তৃণমূলকে অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছিল। ২০২৪-এও সেই মডেলকে হাতিয়ার করে বিজেপির (BJP) বিরুদ্ধ লড়তে চাইছিল তৃণমূল। কিন্তু সেই রণকৌশলে কোথাও একটা কাঁটার মতো বিঁধছিল দলেরই তিন প্রার্থী। ইউসুফ পাঠান, কীর্তি আজাদ, শত্রুঘ্ন সিনহা। তৃণমূল এতদিন যখনই 'বহিরাগত' বলে বিজেপিকে তোপ দাগার চেষ্টা করেছে বিরোধী শিবির তখনই প্রশ্ন করেছে, ইউসুফ, কীর্তি আজাদদের নিয়ে। ওই তিন প্রার্থীকে নিজেদের কেন্দ্রে পালটা প্রচারের মুখেও পড়তে হয়েছে।
[আরও পড়ুন: হেনস্তার শিকার স্বাতীর বাড়িতে সঞ্জয়, ‘ওর প্রাণসংশয় আছে’, আশঙ্কা সাংসদের প্রাক্তন স্বামীর]
বহরমপুরে 'বহিরাগত' ইউসুফ পাঠানকে হারাতে নিজের ভূমিপুত্র ইমেজ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন অধীর চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury)। শহরজুড়ে দেওয়াল লিখনে ফুটে উঠেছে 'বহরমপুর নিজের ছেলেকেই চায়'। যা কিনা একুশের তৃণমূলের স্লোগান থেকেই ধার করা। আবার বর্ধমান-দুর্গাপুরে একই পরিস্থিতি হয়েছে কীর্তি আজাদের। বাংলা বলতে না পারা, বা বাংলার সংস্কৃতি না জানা নিয়ে কটাক্ষ শুনতে হয়েছে প্রাক্তন ক্রিকেটারকে। বাধ্য হয়ে কীর্তি আজাদ ধুতি-পাঞ্জাবী পরে বাঙালি ভদ্রলোক সাজার চেষ্টাও করেছেন। তুলনায় এই সমস্যায় কম পড়েছেন আসানসোলের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা। কারণ ওই কেন্দ্রটিতে অবাঙালিদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য।
[আরও পড়ুন: ৩৫ থেকে সোজা ২৪, চার দফার নির্বাচনের পর ফের বাংলার টার্গেট কমালেন শাহ]
নিজের কেন্দ্রে বিহারীবাবুকে সেভাবে 'বহিরাগত' তত্ত্বের মুখে পড়তে না হলেও রাজ্যের বাকি এলাকায় তৃণমূলের প্রচারে কোথাও না কোথাও দলের এই বহিরাগত প্রার্থীরা কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন। সেজন্য শুরুতে যেভাবে মনে হচ্ছিল, ভোটের ময়দানে চতুর্থ দফা পর্যন্ত সেভাবে 'বহিরাগত' ইস্যুতে প্রচার করতে পারেনি তৃণমূল। তবে শাসক দলের সেই অস্বস্তি এবার কেটে গিয়েছে। ইউসুফ পাঠান, কীর্তি আজাদ এবং শত্রুঘ্ন সিনহা। তৃণমূলের তিন 'বহিরাগত' প্রার্থীর ভোট শেষ। সে অর্থে বহিরাগত কাঁটাও আর নেই।
সূত্রের খবর, পঞ্চম দফার পর থেকেই বহিরাগত ইস্যুতে সুর আরও চড়াবে তৃণমূল। তাতে যদি পালটা ইউসুফদের নাম বিরোধীরা ভাসানোর চেষ্টাও করে, তাতে কাজের কাজ কিছু হবে না। অন্তত ওই তিন প্রার্থীর কেন্দ্রে ফলাফল বদলের আরও বিশেষ সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া এর পরের দিকে যে এলাকায় ভোট, সেই কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার মধ্যবিত্তদের মধ্যে একুশের ভোটে বহিরাগত তত্ত্ব বেশ সাড়া ফেলেছিল। দক্ষিণবঙ্গের বাকি এলাকাতেও এই তত্ত্বেই সাফল্য পেয়েছিল শাসকদল। তাই দলের তিন বহিরাগত প্রার্থীর ভোট মিটতেই ফের চেনা ছকে বিজেপিকে বিঁধতে মরিয়া শাসকদল।