সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: নিজের তৈরি ‘পিচে’ ফের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাননি তো কী? বাংলার চেনা মাটিতে থেকে তাঁকে সংসদ ভবনে যাওয়ার জন্য টিকিট দিয়েছে গেরুয়া শিবির। আর প্রার্থী হয়েই যেন চেনা ফর্মে ফিরছেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। ফের নজিরবিহীন কুকথায় নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙার খেলায় নেমেছেন! এবার তাঁর নিশানায় মুখ্যমন্ত্রীর পিতৃপরিচয়। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ মঙ্গলবার ভোটপ্রচারে বেরিয়ে ফের মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর নামে অশালীন ভাষা প্রয়োগ করলেন। বললেন, ”উনি গোয়ায় গিয়ে বলেন, ‘আমি গোয়ার মেয়ে’। ত্রিপুরায় গিয়ে বলেন, আমি ‘ত্রিপুরার মেয়ে’। আরে বাপ তো আগে ঠিক করুন। যার তার মেয়ে হওয়া ঠিক নয়।” এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কটাক্ষের সুরে বিঁধেছেন দিলীপ।
বঙ্গ রাজনীতিতে দিলীপ ঘোষ মানেই কুকথার বন্যা। নানা সময়ে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার কেন্দ্র হয়ে উঠেছেন তিনি। তাঁর সেসব মন্তব্য ঘিরে কতবার থেকে আবর্তিত হয়েছে রাজনৈতিক তথাকথিত সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল, তার ঠিক নেই। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই তারকা প্রার্থীদের উদ্দেশে তাঁর ‘রগড়ে দেব’ মন্তব্য এখনও ভোলেননি কেউ। আবার নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে দুর্ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পা ভেঙে যাওয়ার পরও তিনি যখন হুইলচেয়ারে প্রচারে বেরিয়েছিলেন, সেসময় দিলীপের খোঁচা ছিল, বারমুডা পরে বেরন মমতা, তাহলে ভাঙা পা দেখানো যাবে।
[আরও পড়ুন: রাজনৈতিক ‘গুরু’, বর্ষীয়ান CPM নেতা তড়িৎ তোপদারের আশীর্বাদ নিলেন অর্জুন সিং]
মাঝে দিলীপ ঘোষ বেশ খানিকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন। তাতে বঙ্গ রাজনীতি ‘রঙ্গে’ বেশ ভাটা পড়েছিল। কিন্তু চব্বিশে প্রার্থী হয়েই অশালীন মন্তব্যের ফোয়ারা ছোটাতে শুরু করেছেন তিনি। তার নমুনা মিলল মঙ্গলবার প্রচারে বেরিয়ে। শুধু মুখ্যমন্ত্রীর পিতৃপরিচয়তেই সীমাবদ্ধ ছিল না তাঁর আক্রমণ। অভিষেকের উদ্দেশে দিলীপ বলেন, “উনি যার হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছিলেন, তাঁর পা টলছে। ঘরের লোক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে। এবার বাংলার লোক কখন ফেলে দেবেন উনি বুঝতেও পারবেন না।” অর্থাৎ এবারও তাঁর নিশানায় মুখ্যমন্ত্রীর দুর্ঘটনা। সদ্যই বাড়িতে পড়ে নিয়ে কপালে আঘাত পান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এখনও তিনি বিশ্রামে রয়েছেন। কিন্তু তা নিয়ে বিরোধীদের এমন ‘মশকরা’ মোটেই সুস্থ স্বাভাবিক রাজনীতির পরিচয় নয়, তা বলাই বাহুল্য। এদিন নিজের প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদকে কটাক্ষ করেও দিলীপের মন্তব্য, ”কীর্তি রিটায়ার্ড, আমিই ফর্মে আছি।”
[আরও পডু়ন: বিজেপি ছাড়ছেন রুদ্রনীল! লোকসভায় টিকিট না পেয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত?]
মমতাকে নিয়ে দিলীপের এহেন কুরুচিকর মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে তৃণমূল। মন্ত্রী তথা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ”মুখ্যমন্ত্রীর পূর্বপুুরুষ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন! কী নির্লজ্জ! উনি সবসময়ে বাংলার মহিলাদের অপমান করেন। এবার মানুষ তার জবাব দেবেই।”