সম্যক খান, মেদিনীপুর: দুই তারকা প্রার্থীর লড়াই। তার মাঝে কুড়মি ভোট কতটা ফ্যাক্টর হতে চলেছে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে? এই হিসেব করতে গিয়েই সব এলোমেলো হতে বসেছে। লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন আদিবাসী কুড়মী সমাজের জেলা সভাপতি কমলেশ মাহাতো। তিনি যে জুন মালিয়া আর অগ্নিমিত্রা পলের ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসাবেন, তা কেউ মানছেন, তো কেউ একেবারে ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ৩৪ টি আসন এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে ২ টি আসন পাওয়া কুড়মি (Kurmi) সমাজ নিজেদের পক্ষে কতটা ভোট টানতে পারবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
এই কুড়মি সমাজের 'জুজু' দেখিয়েই মেদিনীপুরের বর্তমান সাংসদ দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh) একপ্রকার বদলি করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, দলেরই শুভেন্দু অধিকারী লবি তাঁকে পাঠিয়ে দিয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে লড়তে। আসলে কুড়মি আন্দোলন (Kurmi Protest)) নিয়ে দিলীপ ঘোষের করা এক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই তোলপাড় পড়েছে জেলার রাজনীতিতে। সেই সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে গোষ্ঠী রাজনীতিও। দিলীপ ঘোষ মেদিনীপুর থেকে ভোটে দাঁড়ালে কুড়মি সমাজের ভোট পাওয়া যাবে না। ফলে হারাতে হবে আসনটি - সেই অজুহাতে প্রায় এক লক্ষ ভোটে জেতা আসন থেকে একপ্রকার তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দিলীপবাবুকে। তাঁর জায়গায় মেদিনীপুরের গেরুয়া প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল (Agnimitra Paul)। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী জুন মালিয়া (June Malia)। জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিনি, মেদিনীপুরের বিধায়কও। দুজনের সমান টক্করও চলছে। একে অপরকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তেও নারাজ তাঁরা।
[আরও পড়ুন: ফের শেক্সপিয়রের গল্পে অভিনয় অনির্বাণের! টলিউডের ‘রোমিও-জুলিয়েট’ কারা?]
তবে এরই মাঝে কুড়মি সমাজ থেকে পৃথক প্রার্থী হয়ে যাওয়ায় প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অনেক হিসেবই ওলটপালট হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে কুড়মি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত প্রার্থী কমলেশ মাহাতো। তাঁর বাড়ি খড়্গপুর (Kharagpur) এক নম্বর ব্লকের অর্জুনি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত খেমাশুলিতে। জেলায় কুড়মি আন্দোলনের গড় হিসেবে পরিচিত এই খেমাশুলি। মূলতঃ জেলার মধ্যে তিনটি ব্লক তথা খড়গপুর এক, মেদিনীপুর সদর এবং শালবনিতে কুড়মি সমাজের বড় অংশের মানুষজন বসবাস করেন। কমলেশবাবু জানাচ্ছেন, জেলায় প্রায় দেড় থেকে দু লক্ষ ভোটার রয়েছেন কুড়মি সমাজের। কিন্তু তাঁদের কোনও স্বীকৃতি নেই। সেই স্বীকৃতির দাবিতেই আন্দোলন চলেছে। তাঁর নিজের নির্বাচনী লড়াইয়ে নামাটা তারই একটা অঙ্গ। কমলেশ মাহাতোর আশা, কুড়মি সমাজের পাশাপাশি অন্যান্য সমাজের ভোটও তাঁরা পাবেন। আর এখানেই দেড়-দুই লক্ষ ভোট সব হিসেবনিকেশ গুলিয়ে দিতে পারে।
[আরও পড়ুন: ধর্মীয় উসকানিমূলক মন্তব্য! তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে শোকজ করল কমিশন]
গত লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election) এই ভোটের একটা বড় অংশই গিয়েছিল বিজেপির ঝুলিতে। কিন্তু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তার সিংহভাগ পেয়েছে তৃণমূল (TMC)। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এতে কুড়মিরা পৃথক প্রার্থী দাঁড় করানোয় লাভ হতে চলেছে তৃণমূলেরই। প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট বিজেপিতে না গিয়ে তা চলে যেতে পারে কুড়মি প্রার্থীর বালতি প্রতীকে। যদিও অনেকেই মনে করছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কুড়মি প্রার্থী কোনও ফ্যাক্টরই হবে না। মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলির বাইরে কেউ অন্য কিছু ভাববেন না। কুড়মি প্রার্থী কিছু ভোট পেতে পারেন মাত্র। এর বেশি কিছু নয়। আগামী ২৫ মে, মেদিনীপুর কেন্দ্রে ভোট।