অরিঞ্জয় বোস, বহরমপুর: বাংলার অন্যতম প্রাচীন, ইতিহাস সমৃদ্ধ মুর্শিদাবাদের জনপদ বহরমপুর। একদা বাম দুর্গ একবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে বদলে যেতে শুরু করে। আরএসপি-র টানা সাতবার সাংসদ হওয়ার রেকর্ড এখনও কেউ ভাঙতে পারেননি। তবে এখন বহরমপুর মানেই অধীর-গড়। সেখানকার ৫ বারের সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরীর লড়াই অবশ্য কিছুটা কঠিন। তৃণমূলের প্রার্থী ইউসুফ পাঠান ও বিজেপির নির্মলচন্দ্র সাহার সঙ্গে ব্যালটযুদ্ধে বহরমপুরের 'ডন' অধীর এবারও কি নিজের গড় রক্ষা করতে পারবেন? ভোটের আগে তা নিয়ে তুঙ্গে আলাপ-আলোচনা। দেখে নেওয়া যাক, চব্বিশের নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) বহরমপুরের লোকসভার লড়াই কেমন হতে চলেছে।
ইতিহাস
তফসিলি জাতিভুক্ত লোকসভা কেন্দ্র বহরমপুরে ১৯৫১ সাল থেকে নির্বাচন হচ্ছে। সেসময় এই কেন্দ্র ছিল বাম শরিক আরএসপির (RSP)দখলে। অপ্রতিরোধ্য ছিলেন ত্রিদিব চৌধুরী। পরপর সাতবার ভোটে জেতেন তিনি। ত্রিদিব চৌধুরী ও বহরমপুর যেন সমার্থক হয়ে উঠেছিল। তবে ১৯৮৪ সালে অতীশচন্দ্র সিংহের কাছে হেরে যান তিনি। তার পরও আরএসপি-র একাধিক প্রার্থী সেই কেন্দ্র থেকে জিততে শুরু করেন। কিন্তু ১৯৯৯ সাল থেকে বহরমপুরের রাজনৈতিক হাওয়া ঘুরতে থাকে। সাংসদ হন কংগ্রেসের দাপুটে নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury)। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত টানা পাঁচবার অধীরই জিতে আসছেন ওই কেন্দ্র থেকে। বহরমপুর এখন কার্যত 'অধীর-গড়' হয়ে গিয়েছে।
বহরমপুরের পাঁচবারের সাংসদ তথা বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী অধীররঞ্জন চৌধুরী। ফাইল ছবি।
জনবিন্যাস
বহরমপুর এলাকা মূলত মুসলিম অধ্যুষিত। এখানে ৫২ শতাংশই মুসলিম। এছাড়া রয়েছেন ক্রিস্টান, জৈন, শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজন। এর মধ্যে তফসিলি জাতিভুক্ত (SC) সম্প্রদায়ের মানুষ ১৩.২ শতাংশ, আর ০.৯ শতাংশ তফসিলি উপজাতিভুক্ত (ST) মানুষ বসবাস করেন বহরমপুরে।
[আরও পডুন: বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ, মালদ্বীপে ভোটের মুখে পর্দাফাঁস ভারত বিরোধী মুইজ্জুর!]
বিধানসভা কেন্দ্র
বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা আসন -
১. বড়ঞা
২. কান্দি
৩. ভরতপুর
৪. রেজিনগর
৫. বেলডাঙা
৬. বহরমপুর
৭. নওদা
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি
২০০০ সালের পর থেকে টানা পাঁচবার সাংসদ হলেও বহরমপুরে (Baharampur) সেভাবে কংগ্রেসের সংগঠন গড়ে তুলতে পারেননি অধীররঞ্জন চৌধুরী। পাশাপাশি হিন্দু এলাকাগুলিতে বিজেপির একটা প্রভাব রয়েছে। বিধানসভা, পঞ্চায়েত, পুরসভা ভোটগুলিতে কংগ্রেস কিন্তু পিছিয়ে। ঘাসফুল শিবিরও দিনেদিনে বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাত বিধানসভার মধ্যে ৬টিই তৃণমূলের দখলে। কেবল বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেছেন বিজেপির সুব্রত মৈত্র।
প্রার্থী পরিচয়
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অধীররঞ্জন চৌধুরী। আর পাঁচবারের সাংসদকে লোকসভার লড়াইয়ে পরাস্ত করতে ঘাসফুল শিবিরের বাজি ২২ গজ মাতিয়ে আসা, গুজরাট নিবাসী প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান (Yusuf Pathan)। তাঁকে আবার 'বহিরাগত' তকমা দিচ্ছেন কেউ কেউ।
বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। ফাইল ছবি।
অন্যদিকে, বিজেপির প্রার্থী প্রথিতযশা, জনপ্রিয় চিকিৎসক ডাক্তার নির্মলচন্দ্র সাহা। এলাকায় তাঁর স্বচ্ছ ইমেজ এবং জনপ্রিয়তা রয়েছে ভালোই। এবার বহরমপুরে পুরোপুরি ত্রিমুখী লড়াই হতে চলেছে।
বহরমপুরের বিজেপি প্রার্থী ডাক্তার নির্মলচন্দ্র সাহা।
[আরও পডুন: কলকাতায় বিপুল সম্পত্তি বাংলাদেশি নাগরিকের! মিলল জাল পাসপোর্টও]
সম্ভাবনা
বহরমপুরে লোকসভার লড়াই এবার টানটান। অধীরের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সৈনিক ইউসুফ পাঠান এবং বিজেপির নির্মলচন্দ্র সাহা। একচেটিয়া ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাতে পারেন এই দুজনই। বিশেষত হিন্দু ভোটারদের বেশ খানিকটা সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা বিজেপি (BJP) প্রার্থীর। অন্যদিকে, ইউসুফকে নিয়ে প্রবল উন্মাদনা ভোটারদের একটা বড় অংশের মধ্যেই। যদিও সেই সমর্থনের কতটা ব্যালটে পরিণত হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। কারণ, সংগঠন যতই ভঙ্গুর হোক, হিন্দু ভোট যতই ভাগাভাগি হোক, লোকসভা ভোটে অধীররঞ্জন চৌধুরীর নামই একটা বড় ফ্যাক্টর। ইতিমধ্যে সেখানে দেওয়াল লিখন হয়েছে - 'বহরমপুর নিজের ছেলেকে চায়'। এছাড়ায় এলাকায় তাঁর পরিচিতি এখনও বাকি প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। চব্বিশের ভোটে জিতলে অধীর ষষ্ঠবার যাবেন সংসদে। আগামী ১৩ মে, চতুর্থ দফায় বহরমপুরে ভোট।