shono
Advertisement

নজরে রানাঘাট, মতুয়া গড়ে ফের কি পদ্ম? নাকি তৃণমূলের 'মুকুটে' উঠবে নয়া 'মণি'?

Published By: Sucheta SenguptaPosted: 07:48 PM Apr 13, 2024Updated: 07:51 PM Apr 13, 2024

সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: বাংলার অন্যতম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যশালী জেলা নদিয়া। শ্রীচৈতন্যদেব থেকে কীর্তন, বাউল, সংস্কৃত ভাষাচর্চা, মাটির পুতুলের শিল্প সবই গড়ে উঠেছে এই নদিয়া (Nadia) জেলা ঘিরে। রাজনৈতিক দিক থেকেও একাধিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নদিয়া। একদিকে সীমান্তবর্তী এলাকা, আরেকদিকে মতুয়া ধর্মাবলম্বীদের আশ্রয়স্থল। এই জোড়া গুরুত্বের কারণেই রাজনৈতিক দলগুলির নজর নদিয়ার দিকে। নদিয়ার দখল নিয়ে কম লড়াই হয়নি। পরিস্থিতি বদলালেও ক্ষমতা দখলের দৌড় অব্যাহত আজও। আর চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে এখানকার সবচেয়ে বড় ইস্যু হতে চলেছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA), যা প্রথমদিকে মতুয়াদের স্বস্তি দিলেও পরে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কথা ভেবে আশঙ্কায় কাঁটা মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন। CAA বিরোধিতাকে ইস্যু করেছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। আর এর সমর্থনে প্রচার করছে বিজেপি। ফলে এবার রানাঘাট (Ranaghat) লোকসভা কেন্দ্রের লড়াই হতে চলেছে জমজমাট।

Advertisement

ইতিহাস

দেশের প্রথম লোকসভা নির্বাচনের সময় দুটি লোকসভা কেন্দ্র ছিল নদিয়া জেলায়। একটি কৃষ্ণনগর, অন্যটি নবদ্বীপ। এর পর নবদ্বীপ লোকসভা কেন্দ্রটি পুনর্বিন্যাসের জেরে ২০০৯ সালে গঠিত হয় রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র। প্রথমবার এই লোকসভা জিতেছিলেন তৃণমূলের সুচারু রঞ্জন হালদার। নবদ্বীপ লোকসভা কেন্দ্র থাকাকালীন দীর্ঘদিন তা ছিল বামেদের দখলে। তবে ভরা বাম জামানাতেও তৃণমূলের জন্মলগ্নে ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে ঘাসফুল প্রতীকে জয় পান আনন্দমোহন বিশ্বাস। এই লোকসভা কেন্দ্রে মতুয়া (Motua) ভোট বেশি। যার ফায়দা তুলে গতবার নির্বাচনে জেতেন জগন্নাথ সরকার।

জনবিন্যাস
এই কেন্দ্রটি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। মোট ভোটার ১৭, ৫৬, ৪৪৫। এর মধ্যে গ্রামীণ ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ। এদের মধ্যে মতুয়া ভোটার ৪৮ শতাংশ।

[আরও পডুন: প্রচারে বেরিয়ে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান শুনে মেজাজ হারালেন অধীর, যুবককে চড়!]

বিধানসভা কেন্দ্র
রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৭ বিধানসভা কেন্দ্র -

  • রানাঘাট উত্তর পূর্ব
  • রানাঘাট উত্তর পশ্চিম
  • রানাঘাট দক্ষিণ
  • নবদ্বীপ
  • শান্তিপুর
  • চাকদহ
  • কৃষ্ণগঞ্জ


অতীতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি

২০০৯ সালে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে সিপিএম প্রার্থীকে হারিয়ে তৃণমূলের সুচারুরঞ্জন হালদার জিতে সাংসদ হন। ২০১৪ সালেও তৃণমূলের তাপস মণ্ডল জিতেছিলেন। দ্বিতীয় স্থান পায় সিপিএম। বিজেপির স্থান ছিল তৃতীয়। কিন্তু ২০১৯ সালে সেই বিজেপিই রানাঘাট কেন্দ্রটি দখল করে। তৃণমূলের রুপালি বিশ্বাসকে হারিয়ে জগন্নাথ সরকার সাংসদ হন। প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোট বাড়াতে সক্ষম হন জগন্নাথ।

রানাঘাটের বিদায়ী সাংসদ তথা বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার। ফাইল ছবি।

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে রানাঘাটের রাজনৈতিক রং বদলাতে থাকে। সবুজ ফিকে হয়ে গেরুয়ার আবির্ভাব ঘটে পুরোদমে। প্রার্থী হয়ে বিজেপির জগন্নাথ সরকার ৭,৮৩,২৫৩ ভোট পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের রুপালি বিশ্বাস পেয়েছিলেন ৫,৪৯,৮২৫ ভোট। তৃতীয় স্থানে ছিল সিপিএম। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে সাত বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে কেবল নবদ্বীপেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল। বাকি ৬ কেন্দ্রেই বিজেপি এগিয়ে ছিল। এর মধ্যে ৫ বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয় বিজেপি। তৃণমূলের দখলে আসে মাত্র ২ আসন। তাতেই অনেকটা স্পষ্ট দেওয়াল লিখন।

রাজনৈতিক সমীকরণ বদল

রানাঘাট কেন্দ্রে চব্বিশের পরিস্থিতি অবশ্য অনেকটাই পালটেছে। রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীর (Mukut Mani Adhikari) দলবদল বড়সড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে এবারের ভোটে। তিনি পেশায় চিকিৎসক। তাঁর নামটা বঙ্গ রাজনীতির আঙিনায় প্রথমবার ভেসে ওঠে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের সময়। বিজেপি রানাঘাট কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে প্রথমে মুকুটমণির নামই ঘোষণা করে। কিন্তু তখনও তিনি রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের চাকুরে। অভিযোগ, সেসময় ইচ্ছাকৃতভাবে মুকুটমণিকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দেয়নি রাজ্য সরকার। অগত্যা রানাঘাট কেন্দ্র থেকে লোকসভায় বিজেপির প্রার্থী হন জগন্নাথ সরকার। পরে রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে বিধায়ক হন মুকুটমণি। তাঁর আশা ছিল, চব্বিশে তাঁকে রানাঘাট থেকে প্রার্থী করবে দল। কিন্তু সেই আশা পূরণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ মুকুটমণি যোগ দেন তৃণমূলে। আর প্রথম ধাপে সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে ঘাসফুল শিবির। মতুয়া ভোটার, CAA ইস্যুতে মুকুটমণিকে প্রার্থী করে কার্যত কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল।

[আরও পড়ুন: ২২৫ টাকার জন্য ১৮ বছরের আইনি লড়াই, অবশেষে জয়ের হাসি বাস কন্ডাক্টারের মুখে]

প্রার্থী পরিচয়

এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার। তিনি ২০১৯ থেকে এখানকার সাংসদ ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে লড়বেন সদ্য দলবদলকারী তৃণমূল প্রার্থী ডাক্তার মুকুটমণি অধিকারী। প্রার্থী হয়েছেন সিপিএমের অলোকেশ দাস। তিনি ২০০৩ সালে তৎকালীন নবদ্বীপ কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে জিতে সাংসদ হন। চব্বিশের ভোটেও লড়ছেন অলোকেশ। এছাড়া রয়েছেন SUCI প্রার্থী পরেশ হালদার।

রানাঘাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিজেপি ছেড়ে আসা বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। ফাইল ছবি।

 

সম্ভাবনা
এলাকার হাওয়া বলছে, এবারও রানাঘাটে পদ্ম ফোটার সম্ভাবনাই অধিক। CAA ইস্যুতে তৃণমূল ফায়দা তোলার চেষ্টা করলেও লাভ বিশেষ নেই। কারণ, এখানকার মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে মোটের উপর খুশি। অন্যদিকে, সদ্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রার্থী হওয়া মুকুটমণি অধিকারীর পরিচিতি নিয়েই অনেকের মনে সংশয় রয়েছে এখনও। সেটা তাঁর পক্ষে নেতিবাচক তো বটেই। তবে ৪৮ শতাংশ মতুয়া ভোটারের অধিকাংশকে কাছে টানা কোনও দলের পক্ষেই খুব একটা সহজ কাজ হবে না বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ। আগামী ১৩ মে, চতুর্থ দফায় ভোট রানাঘাটে। ৪ ঠা জুন গণনার দিনই স্পষ্ট হবে, রানাঘাট থেকে এবার কে যাচ্ছেন সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement