সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের খবর পেয়ে রবিবার রাতারাতি একেবারে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জলপাইগুড়ি পৌঁছে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। রাতেই তিনি দুর্যোগস্থল, হাসপাতাল ঘুরে দেখেন। তিন-চারদিন ধরে তিনি উত্তরবঙ্গেই রয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে উত্তরবঙ্গে লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Election 2024) প্রচার শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন প্রথমে কোচবিহারের মাথাভাঙায় দলীয় প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়ার সমর্থনে সভার পর চলে যান মালবাজারে। সেখানে জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের হয়ে প্রচার সারেন। আর এই সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী শোনালেন জলপাইগুড়ি বিপর্যয়ে তিনি প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে কীভাবে সারারাত কাজ করেছেন, সেই অভিজ্ঞতার কথা।
সভার শুরুতেই দুর্যোগের (Disaster) কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ছুটে আসা এবং রাত জেগে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গিয়েছে কীভাবে, সবিস্তারে তা জানান। বললেন, ''সেদিন জলপাইগুড়িতে দুর্যোগের খবর পেয়ে আমার প্রাণ কাঁদছিল। আমি প্রথমে ওখানে গৌতমকে (গৌতম দেব) পাঠাই। তার পর ওঁর কাছে জানতে চাই, বাগডোগরায় নাইট ফ্লাইট নামার শেষ সময় কখন? জানায়, রাত সাড়ে ১০টা। আমি সঙ্গে সঙ্গে পাইলটদের বলি, বিমানে জ্বালানি ভরতে হয়। এসব প্রস্তুতি নিয়ে আমি যখন বাগডোগরা গিয়ে পৌঁছই, তখন রাত সাড়ে ১০ টা বাজে। তার পর ওখান থেকে চলে যাই প্রথম জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সেখানে তখন ১৫৬ জন ভর্তি ছিল। তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমি দেখলাম, ডাক্তাররা এত কাজ করছে, পরিকাঠামো এত ভালো। আমি বুঝতে পারি, মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য এখানে জীবন-মরণ কাজ করছেন চিকিৎসকরা। ওঁরা কেউ ঘুমোননি সারা রাত।''
[আরও পড়ুন: নেশাই কাড়ল প্রাণ! সকাল থেকে রেললাইনে বসে মদ্যপান, ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু ২ বন্ধুর]
রবিবার রাতে হাসপাতাল থেকে নিহতদের বাড়িও যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে গিয়ে স্বজনহারা পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। বলেন, ''আমি নির্মলচন্দ্র রায় (জলপাইগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী), গৌতম দেবদের বলেছিলাম, আমি না পৌঁছনো পর্যন্ত এলাকা ছেড়ে যাবে না। দুর্গতদের পাশে থাকবে। ওঁরা টানা কাজ করেছে। প্রশাসনের কেউ সারারাত ঘুমোয়নি। পরে আমি ঝড় বিধ্বস্ত আরও কয়েকটা জায়গা ঘুরে দেখি ওই রাতে। ওখানে ঝড়বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ ছিল না। আমাকে ওঁরা (জেলা প্রশাসনের কর্তা এবং দলের নেতা) টর্চ জ্বেলে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যান। বিপদের সময়ে সবাই খুব ভালো কাজ করেছে। কাউকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করতে চাই না।''
[আরও পড়ুন: কোচবিহারে মমতার হাতিয়ার শীতলকুচি কাণ্ড, বিজেপিকে বিঁধে বললেন, ‘মানুষ মেরে হাতের রক্ত মোছেনি’]
সোমবার ভোর ৪টা নাগাদ বিপর্যস্ত এলাকা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ফিরে আসেন চালসায়। রাত্রি জাগরণের পর সেখানেই খানিকক্ষণ বিশ্রাম করেন। তার পর ফের দুর্যোগস্থল আলিপুরদুয়ারে চলে যান পরিস্থিতি পরিদর্শনে। প্রায় দু দিন মুখ্যমন্ত্রী বিপর্যস্ত এলাকাগুলিতে ছিলেন। তারই ফাঁকে কখনও রাস্তায় নেমে, কখনও চা বাগানে গিয়ে সেরেছেন জনসংযোগ।