shono
Advertisement

Breaking News

সারাবছর খোঁজ নেই! ভোট এলেই ‘নাগরিক’ বাংলাদেশ সীমান্তের এই গ্রামের বাসিন্দারা

প্রতি মুহূর্তে বিএসএফের চোখ রাঙানির মাঝেই কাটছে জীবন।
Posted: 02:04 PM Mar 19, 2024Updated: 02:04 PM Mar 19, 2024

অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: নির্বাচন (Lok Sabha Election 2024) এলেই নাগরিক হয়ে ওঠেন তাঁরা। ভোটপর্ব চুকলেই কেবলই মানুষ। আটপৌরে দুঃখ-দুর্দশার জীবন। ভোট এলে নেতারা বলেন, এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। কেউ বলেন, “আমরা এলে এসব বদলে যাবে।” কেউ বলেন, “ওরাই তো সব নষ্টের মূলে।” তার পর ভোট হয়, নেতাদের আনাগোনা বন্ধ হয়। নদীর চরে বাস করা মানুষের তেপান্তরের জীবনের কোনও পরিবর্তন হয় না। এমনটাই শোনা গেল মুর্শিদাবাদের রানিনগরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া চর সরন্দাজপুরের মানুষের মুখে।

Advertisement

চর সরন্দাজপুর গ্রাম থেকে কাতলামারি-পালপাড়ার দুরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। মাঝখানের জায়গা ফাঁকা মাঠ। প্রায় ২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা মাঠ জুড়ে আবাদি জমি। যার উত্তর প্রান্তে বহতা পদ্মা নদী। তার ওপারেই বাংলাদেশ। পদ্মা আসলে দুই দেশের সীমানা নির্ধারণ করেছে। সেই পদ্মা নদী থেকে এক কিলোমিটার ভারতের ভিতরে চর সরন্দাজপুর বাথানে ৩৬ টি পরিবার বাস করে। যেখানে ১২৫ জন ভোটার আছেন। তেমন এক ভোটার রাইহান শেখ জানান, “বাপ-ঠাকুরদার সম্পত্তি রয়েছে ওই চরে। আর আমরাও জ্ঞান হওয়া থেকে দেখে আসছি চরেই চাষ আবাদ করে জীবন কাটে আমাদের। উপরে কাতলামারি বা অন্য জায়গায় জমি নেই।” যদিও চরের রহিমা বিবি জানান, “চরে বাস করা বেশিরভাগ পরিবারের এখানেই বসবাস ও বাড়ি। তবে কয়েকটি পরিবারের কাতলামারির দিকেও বাড়ি রয়েছে। কিন্তু চরে থেকে জমি চাষ ও পশুপালন করা সহজ হয় বলে অনেকেই চরে বাড়ি করে থেকে গিয়েছেন।”

[আরও পড়ুন: যতকাণ্ড যোগীরাজ্যে, সরকারি টাকা হাতাতে দিদির কপালেই সিঁদুর দিলেন ভাই!]

তবে তাঁরা জানান, চরের জীবনে সুখ নেই। প্রতিপদে বিএসএফের চোখ রাঙানি। কাতলামারি বা শেখপাড়ার হাট ছাড়া গতি নেই। তাছাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত বা বিডিও অফিস, হাসপাতাল, হাটবাজার বা ভোট দেওয়ার বুথ সবই চর থেকে উপরে মূল ভূখণ্ডে যেতে হয়। যাতায়াতের রাস্তাও ভালো না। শুখা মরসুমে ধুলোবালি, বর্ষায় জলকাদা। তার মধ্যে দিয়ে পায়ে হেঁটে নয়তো সাইকেলে যাতায়াত করতে হয়। আর সেখান থেকে যাতায়াতের জন্য প্রতিনিয়ত বিএসএফের সন্দিহান চোখ ও চোখ রাঙানি। এমনকি ভোটের দিনেও। তবে স্বস্তি এটুকুই যে ভোটের দিন নেতাদের বললেই সঙ্গে সঙ্গে সমাধান পাওয়া যায়। যা অন্যদিন হয় না। জমির কোনও ফসল বিক্রি করার জন্য হাটে নিয়ে যেতে গেলে বিএসএফ সেই ফসল বস্তা থেকে ঢেলে চেক করবে। আবার যদি কিছু কিনে নিয়ে যান তারা তো তাও দেখবে। এভাবেই চোখ রাঙানি ও অপমানে কাটে তাদের জীবন। ওই চোখ রাঙানি বাদ দিলে চরে খেয়ে পড়ে সুখ আছে। তবে চরের টুটুল শেখ জানান, “রাত বিরেতে অসুখ বিসুখে বিএসএফের কাছে গেলে তাদের কাছ থেকে মানবিক সহায়তা পাওয়া যায়। আর তখনই মনটা ভালো হয়ে ওঠে।”

নেই এর তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। রাস্তা নেই, শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্য পরিষেবার কোনও সুযোগ নেই। পানীয় জল নেই আবার বিদ্যুৎ নেই। এত কিছু না থাকা নিয়েই সরন্দাজপুরের মানুষ চরে বাস করেন। তাঁদের কেবল সান্ত্বনা, তাঁদের কোনও পরিষেবা নাই থাকতে পারে। কিন্তু চরের বিএসএফ ক্যাম্পেও বিদ্যুৎ নেই, তাঁদেরও রাস্তা নেই। সেটা ভেবেই তাঁরা সান্তনা পান। তবে রহিমা বিবি জানান, “মাথা খারাপ করে দেয় ভোটের সময় নেতারা। একেক দলের একেক নেতারা আসেন আর বলেন তোমাদের এই প্রাপ্য ওই প্রাপ্য ছিল দেয়নি। আমরা এলে দেব। কিন্ত ভোট ফুরালে কিছুই পাই না। না রাস্তা, না বিদ্যুৎ, না পানীয় জল বা বিদ্যুৎ কিছুই।” গ্রামের রহিমা বিবি বলেন, “চরের অনেকের বাড়িতেই সোলার সিস্টেমের আলোর ব্যবস্থা আছে। তাতেই মোবাইল ফোনের চার্জ আর রাতে একটু আলোর ব্যবস্থা হয়। কেবল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আর কৃষক বন্ধুর প্রাপ্য ছাড়া প্রায় কিছুই মেলে না। তবে তাঁরা জানান, শুধু মাত্র সীমান্ত লাগোয়া জমিতে বাস করে নিজেদের জমি আগলাচ্ছেন তা নয়! তাঁরাও ভারতের আরও অনেক মানুষের জমিতে বাংলাদেশীদের জবর দখলদারী রুখে দিচ্ছেন। সীমান্তের চরে নো ম্যানস ল্যান্ডের কাছাকাছি বাসকরার ফলেই ওই সুবিধা হচ্ছে বলে জানান তারা। তবে তাঁদের ছেলে-মেয়েদের ভূত ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। চরে কোনও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বা প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। ফলে চরের মানুষদের ছেলেমেয়েদের অক্ষর পরিচয়টুকুও দেওয়া যাচ্ছে না।

[আরও পড়ুন: মানুষের জীবন আগে, বেআইনি নির্মাণ ভাঙা আটকাব না! সাফ জানালেন বিচারপতি সিনহা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement