সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নাতি। দেশের উদীয়মান রাজনীতিবিদ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ব্রিটেন থেকে। কিন্তু মুদ্রার অন্য পিঠে রয়েছে যৌন কেলেঙ্কারির অন্ধকার। তরুণ নেতার যৌন লালসার শিকার ৪০০ মহিলা। সেই কলঙ্কের দাগ লাগল লোকসভা নির্বাচনে। সাংসদ হওয়ার লড়াইয়ে হেরে গেলেন প্রজ্জ্বল রেভান্না।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়ার (HD Deve Gowda) নাতি প্রজ্জ্বল রাজনীতির ময়দানে নামেন ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের সময়ে। যদিও সেই সময়ে ভোটে লড়ার অনুমতি মেলেনি ২৪ বছরের তরুণের। তবে পরে প্রিয় নাতির নির্বাচনী অভিষেকের জন্য নিজের আসন ছেড়ে দেন দেবেগৌড়া। কর্নাটকের (Karnataka) হাসান কেন্দ্র থেকে ২০১৯ সালে জিতে সাংসদ হন প্রজ্জ্বল রেভান্না (Prajwal Revanna)। তবে তার আগে ২০১৫ সালের ভারতের সেরা ১০ উদীয়মান রাজনীতিবিদের তালিকায় তাঁর নাম উল্লেখ করে ব্রিটেনের কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন। দেবেগৌড়া নিজেও যোগ্য উত্তরসূরি হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন প্রিয় নেতা রেভান্নাকেই।
[আরও পড়ুন: ‘সংসদীয় গণতন্ত্রকে রক্ষা করুন’, ফলপ্রকাশের প্রাক্কালে রাষ্ট্রপতিকে খোলা চিঠি প্রাক্তন বিচারপতিদের]
কিন্তু ২০১৯-এর পর থেকেই বদলে যায় তরুণ সাংসদের জীবনযাত্রা। বড়সড় সেক্স স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়েন রেভান্না। লোকসভা নির্বাচন চলাকালীনই ভাইরাল হয় তাঁর অসংখ্য সেক্স টেপ। অভিযোগ ওঠে তাঁর বাড়ির পরিচারিকাদের টানা তিন বছর ধরে যৌন হেনস্তা করেছেন প্রজ্জ্বল। কেবল ধর্ষণ নয়, দৃশ্যকাম, ভিডিও ও ছবি তোলার মতো নানা অভিযোগও ওঠে। গোটা বিষয়ে জড়িয়ে যায় প্রজ্জ্বলের বাবা রেভান্নার নামও। তদন্ত শুরু হতেই বিদেশে গিয়ে মুখ লুকোন হাসানের জেডিএস (JDS) সাংসদ। এক মাস পরে দেশে ফিরতেই বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন।
এত বিতর্ক, এত কেলেঙ্কারি-সবই ছাপ ফেলে দিল ইভিএমে। রাজনৈতিক শক্তি, সাংসদের ক্ষমতা পরাভূত হল জনতার দরবারে। কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে হেরে গেলেন যৌন কেলেঙ্কারির মূল অভিযুক্ত। কিন্তু দ্বিতীয়বার সাংসদ হওয়ার লড়াইয়ে চেষ্টার কমতি ছিল না রেভান্নার। তাঁর হয়ে প্রচার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং। বিরাট জনসভায় মঞ্চে গিয়ে 'ধর্ষকে'র হাত ধরে আমজনতার কাছে ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সম্মান হারানো মহিলাদের যন্ত্রণা, চোখের জলের কাছে ফিকে হয়ে গেল প্রধানমন্ত্রীর আবেদনের সামনে। বাবা-ছেলের ষড়যন্ত্রে সম্মান হারানো মহিলারা জবাব দিলেন ভোটের ময়দানে।
'ধর্ষক' প্রার্থীদের নির্বাচনে জয় পাওয়া ভারতে যেন জলভাত। রাম রহিম থেকে শুরু করে ব্রিজভূষণ শরণ সিং, উদাহরণের অভাব নেই দেশে। কিন্তু সেই ছবিটা পালটে দিল অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন। যৌন হেনস্তায় অভিযুক্তের জায়গা সংসদ নয় জেল, সেটাই বুঝিয়ে দিল কর্নাটকের হাসান। নির্যাতিতারা হারানো সম্মান ফিরে পাবেন কিনা, জানা নেই। কিন্তু গারদের ওপারে বসে চোখের জল ফেলছেন প্রজ্জ্বল। কাঁদবেন নাই বা কেন? যৌন কেলেঙ্কারির কালিমা মাথায় নিয়ে তাঁকে ছাড়তে হল সাংসদ পদ। ভোটের ফলে কি সুবিচার পেল হাসানের নারীশক্তি?
[আরও পড়ুন: চলন্ত এক্সপ্রেসের ৩ কামরায় দাউদাউ আগুন, তীব্র আতঙ্কে যাত্রীরা]